Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ছাপার প্রেস থেকেই ফাঁস হচ্ছে ঢাবির প্রশ্নপত্র


১৪ ডিসেম্বর ২০১৭ ২১:৪৪

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ছাপানোর প্রেস থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে। এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যাহ নজরুল ইসলাম বৃহস্পতিবার দুপুরে এমন তথ্যই জানান।

মোল্যাহ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘গত ২০ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয় ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রানা ও আব্দুল্লাহ আল-মামুনকে। তারা দুজনই শিক্ষার্থী সংগ্রহ ও প্রশ্নপত্র ফাঁসে ব্যবহৃত ইলেকট্রনিক ডিভাইস সাপ্লাইয়ের সঙ্গে জড়িত ছিল। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত ১ নভেম্বর ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইশরাক হোসেন রাফি ও ফারজাদ সোবাহান নাফিকে গ্রেফতার করা হয়। রাফি ও নাফির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ৩ নভেম্বর এ চক্রের অন্যতম হোতা আনিন চৌধুরীকে গ্রেফতার করা হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আনিনের দেওয়া তথ্যের সূত্র ধরে সিআইডি নাভিদ আনজুম তনয় ও এনামুল হক আকাশকে খুঁজতে থাকে। গত ১৪ নভেম্বর রংপুর থেকে তনয় ও গাজীপুর থেকে আকাশকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭ শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রক্টোরিয়াল টিমের সহায়তায় গ্রেফতার করা হয়।’

মোল্যাহ নজরুল ইসলাম জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ৭ শিক্ষার্থী হলেন— নাহিদ ইফতেখার (১৯), রিফাত হোসেন (১৯), মো. বায়জিদ (১৯), ফারদিন আহম্মেদ সাব্বির (১৯), তানভি আহম্মেদ মল্লিক (১৯), প্রসেনজিৎ দাস (২০) ও মো. আজিজুল হাকিম (২০)। এ ছাড়া উল্লিখিতদের জিজ্ঞাসাবাদের তথ্যের ভিত্তিতে পরবর্তী সময়ে ৭ ডিসেম্বর টিএম তানভির হাসনাইন (১৮), সুজাউর রহমান সাম্য (১৯), রাফসান করিম (১৯), মো. আখিনুর রহমান অনিক (১৯) ও নাজমুল হাসান নাঈমকে (১৯) গ্রেফতার করে সিআইডি।

বিজ্ঞাপন

সিআইডির এ পুলিশ সুপার বলেন, ‘এ চক্রের সদস্যদের দেওয়া তথ্যে জানা যায় যে, ওরা শুধু ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস সরবরাহই করে না সঙ্গে প্রশ্নও ফাঁস করে। গ্রেফতার রাফসানের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ৯ ডিসেম্বর রাজশাহী মেডিকেল এলাকা থেকে বনি ইসরাইল (২৩) ও মো. মারুফ হোসেনকে (২৪) রাজশাহীর বিনোদপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। এরা দুজনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বিক্রির জন্য ছাত্র সংগ্রহ করত এবং  ওই সকল ছাত্রদের তথ্য রকিবুল হাসান ইসামীকে (২৮) সরবরাহ করত। রকিবুল নাটোর ও পাবনা জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন।’

তিনি আরও জানান, ‘পরে ১১ ডিসেম্বর রাতে রকিবুলের বড় ভাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর সামসুজ্জোহা ও গুরুদাশপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেনের জিম্মা থেকে রকিবুলকে গ্রেফতার করা হয়। রকিবুলের দেওয়া তথ্যানুযায়ী জামালপুর থেকে ১৩ ডিসেম্বর সাইফুল ইসলামকে এবং ১৪ ডিসেম্বর ফার্মগেটের ইন্দিরা রোড থেকে একটি প্রেসের কর্মচারী খান বাহাদুরকে (২৮) গ্রেফতার করা হয়।’

সাইফুল ও বাহাদুরকে জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘খান বাহাদুর  যে  প্রেসের কর্মচারী সেখানেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ছাপানো হতো। বাহাদুরের সাথে আগে থেকেই সাইফুলের পরিচয় ছিল। ঘনিষ্ঠ পরিচয়ের জন্য বাহাদুর সাইফুলকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশ্নপত্র ছাপানোর ব্যাপারে জানায়। সাইফুল এই কথাগুলো রকিবুলকে বলে দেয়। তখন রকিবুল সাইফুলকে অনুরোধ করে, তার পরিচিত একজনের জন্য এই প্রশ্নপত্র এনে দিতে। এভাবে তারা ২০১৫ ও ২০১৬ সালে ঢাবি ভর্তির প্রশ্নপত্র ফাঁস করে। এ চক্রের সঙ্গে উত্তরা রাজউক কলেজের বেশ-কয়েকজন শিক্ষার্থীর সম্পৃক্ততাও পাওয়া যায়।’

বিজ্ঞাপন

পুলিশ সুপার বলেন, ‘গ্রেফতারা সকলেই প্রশ্নপত্র ফাঁসের কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। মারুফকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে আনা হয়েছে। প্রশ্নপত্র ফাঁসে তারা মোটা অংকের টাকা লেনদেন করেছে। তাই তাদের অভিভাবক এ ঘটনাগুলোর সঙ্গে জড়িত কিনা তা ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে। যদি গ্রেফতারদের অভিভাবকরাও এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ওই চক্রটি প্রশ্নপত্রের জন্য ২ থেকে ৭ লাখ টাকা পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে নিয়েছিল বলে জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা জানিয়েছে।’

এদিকে রকিবুল হাসান ইসামীর বড় ভাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর সামসুজ্জোহা সিআইডি কার্যালয়ের সামনে সারাবাংলার কাছে দাবি করেন— ‘আমার ভাই নির্দোষ। সে (রকিবুল) খেলাধুলা খুব পছন্দ করত, তাই সে নাটোর ও পাবনা জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন। সে খুবই মেধাবী।’

তিনি আরও দাবি করেন, ‘সিআইডি কর্মকর্তারা রকিবুলকে ফোনে না পেয়ে আমাকে কল করেন। আমি জানতাম আমার ভাই নির্দোষ। তাই আমি আমার ভাইকে ডেকে তাদের সঙ্গে দেখা করিয়ে দিই। তখন সিআইডি কর্মকর্তারা বলেছিল আমরা সাধারণ কিছু জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রকিবুলকে ঢাকায় নিয়ে যেতে চাচ্ছি। সে হয়তো প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত না, তাই কিছু তথ্য জেনে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। কিন্তু এখন তাকে ঢাকায় এনে মামলার আসামি করে দেওয়া হয়েছে।’

সারাবাংলা/এসআর/আইজেকে

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর