‘৬ বছরে একজন রোহিঙ্গাও ফেরত যাননি মিয়ানমারে’
২৭ আগস্ট ২০২২ ১৪:৩৫
ঢাকা: ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যা, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের মুখে প্রায় সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসেন। রৈাহিঙ্গাদের অনিশ্চিত যাত্রা পাঁচ পেরিয়ে ছয় বছরে পড়লেও এখন পর্যন্ত তাদের একজনকেও মিয়ানমারে তাদের জন্মভূমিতে ফেরত পাঠানো যায়নি। কবে ফেরত পাঠানো যাবে তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ সাপোর্টার ফোরাম নামে এক সংগঠন।
শনিবার (২৭ আগস্ট) ডিআরইউ মিলনায়তনে বাংলাদেশ সাপোর্টার ফোরামের উদ্যোগে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন জাতীয় সংগ্রাম কমিটির আয়োজিত রোহিঙ্গা সংকট ও উত্তরনের উপায় শীর্ষক গোল টেবিল বৈঠক বক্তরা এ সব কথা বলেন।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন জাতীয় সংগ্রাম কমিটির চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আতা উল্লাহ খান জানান, ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যা, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের মুখে প্রায় সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। এই নৃশংসতাকে গণহত্যা আখ্যা দিয়ে ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর আইসিজেতে মামলা দায়ের করে গাম্বিয়া। হেগের দিনপ্যালেসে এ মামলার ওপর প্রাথমিক শুনানি হয়। কয়েক দশক ধরে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চললেও এই প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক আদালত মিয়ানমারের বিরদ্ধে আদেশ দেন।
আইসিজের আদেশ নিঃসন্দেহে মিয়ানমারের ওপর রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিকভাবে বড় ধরনের চাপ তৈরি করবে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। বর্তমানে বাংলাদেশে ১১ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রিত। তাদের প্রতি সমবেদনা এবং মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রতি সংহতি এবং রোহিঙ্গাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসনের তাগিদ জানিয়ে আসছে বিশ্ব সম্প্রদায়।
আতা উল্লাহ খান আরও বলেন, ‘মিয়ানমারের টালবাহানা আর রোহিঙ্গাদের শর্তে আটকে আছে প্রত্যাবাসন। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হলেও দুই দফা সময় নিয়ে তারা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়নি। দু’দেশের মধ্যে চুক্তি হলেও নেই হয়নি কার্যক্রম। দুবছরে ছয় দফায় ৮ লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা হস্তান্তর করা হলেও নেইপিদোর তরফে তালিকা যাচাই-বাছাইয়ে নেই কোনো সাড়া।’
‘রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ভারত, চীন, রাশিয়ারও উদ্যোগ নেই বললেই চলে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ নিয়মিত কূটনীতির অংশ হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন ফোরামে রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি জোরালোভাবে উত্থাপন করলেও সবাই চুপচাপ শুনছে, কোনো প্রতিক্রিয়া বা পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।’
গোলটেবিল বৈঠকে বলা হয়, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপরাধপ্রবণতা দিন দিন বাড়ছেই। আমরা শুরু থেকেই এ বিষয়ে শঙ্কার কথা জানিয়ে আসছি। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন না হলে স্বাভাবিকভাবেই সন্ত্রাসবাদের উত্থান হবে। খুন, ধর্ষণ, মাদক পাচার, শিশু পাচার, ডাকাতি, অপহরণসহ সব ভয়ংকর অপরাধে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে রোহিঙ্গারা। শুধু তা-ই নয়, কৌশলে বাংলাদেশের পাসপোর্ট করে বিদেশে পাড়ি দেওয়ার মত অপরাধে যুক্ত হয়েছে রোহিঙ্গারা। ডাকাতি, ইয়াবা ও অস্ত্রের কারবারে জড়িয়ে পড়েছে অনেকে। নিজেদের মধ্যে হানাহানি-খুনোখুনিও প্রায় নিত্যদিনের ঘটনা।’
২০১৭ থেকে ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত থানায় ১ হাজার ৯০৮টি মামলা হয়েছে। এমন অপরাধ দিন দিন আরও বাড়বে। মানবিক কারণেই প্রতিবেশী মিয়ানমারের নাগরিকদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। এই বিপুলসংখ্যক মানুষের বাড়তি দায়িত্ব বাংলাদেশের জন্য অবশ্যই বড় বোঝা।
গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা বলেন, ‘আমরা আশা করছি, দ্রুত এই সংকটের সমাধান হবে শান্তি, স্থিতি এবং নিরাপত্তার জন্য রোহিঙ্গা ইসুর রাজনৈতিক সমাধান অপরিহার্য। প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য মিয়ানমারের ওপর জোরালো চাপ রাখতে আন্তর্জাতিক মহলের সঙ্গে কূটনৈতিক প্রক্রিয়া নতুন করে শুরু করতে হবে। সবার হাতে হাতে বাংলাদেশি মোবাইল সিম, লক্ষাধিক রোহিঙ্গার হাতে এনআইডি ও পাসপোর্ট- এক ভয়াবহ সংকেত। দ্রুত সমাধানে না এলে বাংলাদেশের জন্য হুমকি হতে পারে রোহিঙ্গারা।’
গোল টেবিল বৈঠক আরও বক্তব্য রাখেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন জাতীয় সংগ্রাম কমিটির চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আতা উল্লাহ খান, সাধারণ সম্পাদক এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী, বাংলাদেশ সাপোর্টার্স ফোরামের মহিলা সম্পাদিকা শাহানা হক, বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের সাবেক বিচারপতি খাদেমুল ইসলাম চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রী ও চেয়ারম্যান বিএলডিপি এম নাজিম উদ্দিন আল আজাদ, সাবেক উপমন্ত্রী ও ১৪ দলের কেন্দ্রীয় নেতা মুক্তিযোদ্ধা সাদেক সিদ্দিকীসহ আরও অনেকেই।
সারাবাংলা/এআই/একে