Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মে মহান, গাই কর্ম আর কর্মীর জয়গান


৩০ এপ্রিল ২০১৮ ২৩:২৮

মাহমুদ মেনন, নির্বাহী সম্পাদক

‘ভাগ্যে আমি ভিষণ বিশ্বাসী, তবে কী জানেন, যত বেশি কঠোর কাজ করি, ভাগ্যটা ঠিক ততটাই সহজে ধরা দেয়- থমাস জেফারসনের এই উক্তিটিকে সামনে এনে মে দিবসের আলোচনাটি ফাঁদা যায়। তবে মার্টিন লুথার কিং কে দিয়েও আলোচনা শুরু করা যেতো। তিনি বলেছেন- ‘কাজ মানবতাকে উর্ধ্বে তুলে ধরে, কর্মীর মর্যাদা বাড়ায়। আর তেমন কাজে কষ্টও আছে।’

তাহলে কাজ করতে হবে। আলবার্ট হাবার্ট বলেছেন- আচ্ছা আমাদের এই যে একটা মাথা দুটো হাত আছে, তার জন্যই কি আমরা পয়সা পাবো? না- পাবো না। আমরা তখনই পাবো যখন ওগুলো কোনও কাজে নিয়োজিত হবে।

হেনরি ফোর্ড বলেছিলেন- যিনি কাজ করেন না, তার চিন্তাশক্তি লোপ পায়। আলস্য আপনার মস্তিষ্কটিকেই মোড়কে জড়িয়ে রাখে।
আর আলভা এডিসনতো কঠোর শ্রমের একটি বিকল্পও কোথাও দেখতে পাননি।

ইশ্বর আমাদের যা কিছু দেন তা আসলে কঠোর যে শ্রম দেই তারই বিনিময়ে- কথাটি বলেছিলেন লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি। মহানবী হযরত মুহম্মদ (সঃ)’র শিক্ষাতো ছিলোই- ‘মেহনত করো সবে’।

তাহলে কাজটাই মুখ্য। কাজ আমাদের মহান করে, কাজ ভাগ্য বয়ে আনে, কাজ মর্যাদা বাড়ায়।
সুতরাং কাজেরই জয়গান।

কাজতো হয়েছে, হচ্ছে আর হবেও। হচ্ছে বলেই সভ্যতা এগুচ্ছে। বিশ্বের আজ ৭০০ কেটি জনগোষ্ঠী। বাংলাদেশের জনগোষ্ঠী ১৭ কেটি প্রায়। এই জনগোষ্ঠী যখন কর্মশক্তিতে রূপ পাচ্ছে তখনই আসছে অগ্রসরতা। বলা যায় বিশ্বের আজ এগিয়ে চলার প্রাণশক্তি হচ্ছে এর কর্মশক্তি। তাহলে মানুষ কাজ করছেও।

এখনো যারা কাজ কোথায় পাবো? বলে বেকার বসে থাকেন তাদের জন্য তথ্য হচ্ছে-কর্মক্ষেত্র বিশ্বজোড়া। এখানে খুঁজে নিতে হবে নিজের যোগ্য কাজটি। মানুষের কাজের পরিধি এখন সর্বত্র বিস্তৃত। উত্তর মেরু, দক্ষিণ মেরু সব আমাদের জানা। আকাশের সেই মহাসীমায়, দূর পাতালে, অতলান্ত সমুদ্রে সর্বত্র মানুষের বিচরণ। ফলে সর্বত্রই সৃষ্টি হয়েছে কর্মক্ষেত্র। কাজের সুযোগ নিজেও সৃষ্টি করে নেওয়া যায়। তথ্য প্রযুক্তির যুগে তো সকলেই কিছু না কিছু করতে পারছেন। আর অনেকেই আজ নিজে কাজ যেমন পাচ্ছেন, উদ্যোক্তা হয়ে অন্যকে কাজ করার সুযোগও করে দিচ্ছেন।
আমরা কাজ করি না, কাজ দেই এই স্লোগানেও দেশ এগুচ্ছে, বিশ্ব এগুচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

তাহলে সঙ্কটটি কোথায়? আমরা বলবো সঙ্কট কাজের মর্যাদায়। মর্যাদা কি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে?

আলবার্ট আইনেস্টাইনের কথাটি স্মরণ করি। গায়ে খেটে নয়, মেধার শ্রমে বিশ্বকে তিনি দিয়ে গেছেন অনেক কিছু, বিজ্ঞানের সব মহান আবিষ্কার দিয়ে বিশ্বকে করে গেছেন মহিমান্বিত। তবে তিনি কিন্তু গায়ে খাটা মানুষগুলোর প্রতি ছিলেন দারুণ মর্যাদাশীল।

বলতেন, প্রতিদিন নিজেকেই শতবার করে মনে করিয়ে দেই, এই যে আমার ভেতরের(নিজের মেধা ও মনন অর্থে) আর বাইরের জীবন-যাপন, তা স্রেফ অন্যের শ্রমের ফসল। তাদের কেউ বেঁচে, কেউ আবার মরেও গেছেন। তাদের কাছ থেকে আমি যা কিছু নিয়েছি আর নিয়ে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত সে ঋণ পরিশোধে নিজেরও অতটাই নিবেদিত প্রাণ করে কাজ করতে হবে, এইটুকু বুঝি।’

এভাবেই তিনি শ্রমজীবীর শ্রমকে মহান করে গেছেন। আর জীবনের শেষ দিনটি অবধি সে মনোভাব পোষণ করে যেতে পেরেছিলেন এই মহান বিজ্ঞানী।

মেধার কাজ দিয়ে পৃথিবীকে তিনি যতটা ঋণী করে গেছেন তা অনেকের কায়িক শ্রমের চেয়ে লক্ষ কোটি গুন বেশি নিঃসন্দেহে। কিন্তু ওই কায়িক শ্রমেই ছিলো তার অগাধ শ্রদ্ধা।

শ্রমজীবী মানুষকে মহান করে দেখতেন আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার একটি উক্তি ছিলো এমন- ‘আমরা যারা শিক্ষিত, বুদ্বিমান, ওষুধে ভেজাল দিয়ে বিষাক্ত করে মানুষের মুখে তুলে দেই তারাই। ওই গ্রামের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষগুলো নিশ্চয় এসব পারে না। নিশ্চয়ই আমার কৃষক ভাইরা পারে না। নিশ্চয়ই আমার শ্রমিক ভাইরা পারে না।’

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন, ‘…তারা সভ্যতার পিলসুজ, মাথায় প্রদীপ নিয়ে খাড়া দাঁড়িয়ে থাকে।’

আর জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাদেরই গান গাইতে চেয়েছেন- যারা ধরণীর তলে ফসলের ফরমান এনেছেন। শ্রমজীবীদের কথা বলতে গিয়ে লিখেছেন- তারাই মানুষ, তারাই দেবতা, গাহি তাহাদের গান।

বিজ্ঞাপন

প্রেয়সীর প্রেম তাওতো শ্রমে নিহিত। নির্মলেন্দু গুণের কবিতায় সে কথারই প্রতিধ্বনি শুনি-
যতক্ষণ তুমি দৃঢ়পেশী শ্রমিকের মতো প্রতিবাদী,
যতক্ষণ তুমি মৃত্তিকার কাছে কৃষকের মতো নতমুখ,
ততক্ষণ আমিও তোমার।

আর শ্রমিকের গায়ের ঘাম শুকাবার আগেই তার শ্রমের মজুরি পরিশোধের কথা জানিয়ে দিয়ে শ্রমিকের ঘামের মর্যাদা দিয়ে গেছেন মহানবি হযরত মুহম্মদ সঃ।

শ্রমের এই মহান যে মর্যাদা। সেতো শ্রমেরই প্রয়োজনই। কিন্তু শ্রম যখন প্রয়োজন তখন শ্রমিকেরও রয়েছে কিছু প্রয়োজন। শ্রমের জন্যই প্রয়োজন বিশ্রাম- বিনোদন।

আজ থেকে ১৩২ বছর আগে সে প্রয়োজনীয় অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিশ্বে আন্দোলন হয়েছে। তাতে প্রাণ গেছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠিত হয়েছে শমিকের মর্যাদা, শ্রমের মর্যাদা। দিনকে তিন ভাগে ভাগ করে আট ঘণ্টা শ্রম, আট ঘণ্টা বিশ্রাম কিংবা ঘুম আর বাকি আট ঘণ্টা বিনোদনের সিদ্ধান্ত হয়।

১৮৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোর শহরের হে মার্কেটের সামনে লক্ষ শ্রমিকের যে দাবি কিংবা আন্দোলন তারও অনেক আগে, এমনকি যিশু খ্রীষ্টের জন্মেরও সাড়ে তিন শ’ বছর আগে দার্শনিক এরিস্টোটল বলে গেছেন, ‘শ্রমের শেষেই প্রয়োজন বিশ্রাম’।

তাহলে মহান হোক এই মে দিবস। আমরা কর্ম ও কর্মীর জয়গান করি।

সারাবাংলা/এমএম

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর