Wednesday 15 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পল্টন কালভার্ট রোডের ত্রাস চাঁদাবাজ স্বপন গ্রেফতার


২৪ মে ২০১৮ ১৯:২৪ | আপডেট: ৫ নভেম্বর ২০১৮ ২০:০৭

।।  স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: রাজধানীর পল্টনের কালভার্ট রোড এলাকায় চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী তৎপরতার দায়ে স্বপন নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে পল্টন থানায় একাধিক মামলা ও অভিযোগ রয়েছে।

সবশেষ সারাবাংলা.নেট’র কাছে চাঁদা চাওয়া এবং তা না পেয়ে এর দুই কর্মীকে মারধর করার পর দায়ের করা এক মামলায় তাকে গ্রেফতার করেছে পল্টন পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (২৪ মে) সন্ধ্যায় রাজধানীর খিলগাঁও- তিলপাপাড়ায় নিজ বাসা থেকে স্বপনকে গ্রেফতার করা হয়।

পল্টন থানার ওই অভিযানে নেতৃত্ব দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. রহমত আলী।

তিনি সারাবাংলাকে জানান, মামলার পর দুইদিন ধরে স্বপন পলাতক ছিলো, বৃহস্পতিবার গোপন খবরে তার অবস্থানের কথা জেনে এই অভিযান চালান ও তাকে গ্রেফতার করে পল্টন থানায় নিয়ে যান।

স্বপন রাজধানীর পল্টনে কালভার্ট রোডের একটি বহুতল ভবনে স্রেফ কেয়ারটেকারের দায়িত্বে রয়েছেন। ওই দায়িত্বে থেকে ভবনের ভেতরে মদ-জুয়া-মাদকসহ নানা অবৈধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছেন বলে পুলিশের কাছে একাধিক অভিযোগ রয়েছে।

এছাড়াও তার বিরুদ্ধে রয়েছে মাস্তানি ও চাঁদাবাজির অভিযোগ। যখন-তখন ভবনের বিভিন্ন ফ্লোর ও অফিস স্পেস কিনে নেওয়া মালিক পক্ষের লোকেদের ওপর হামলা, মারধর করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

সবশেষ গত ২১ মে সারাবাংলা.নেট-এর দুই কর্মীকে মারধোর ও হত্যার চেষ্টা চালায় স্বপন। তাদের ধরে নিয়ে ভবনের আন্ডারগ্রাউন্ডে  নির্যাতন করে। পরে এ নিয়ে পল্টন থানায় অভিযোগ করলে পুলিশ নিজে বাদী হয়ে মামলা করে।

সে মামলার পরিপ্রেক্ষিতেই স্বপনকে গ্রেফতার করা হলো। এই মামলায় হুকুমের আসামি হিসাবে ভবনের মালিক মিয়া মশিউজ্জামান ও অফিস সহকারী মো. ডেভিডকেও খুঁজছে পুলিশ।

বিজ্ঞাপন

স্বপনের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ রয়েছে:

রাজধানীর পল্টনের কালভার্টরোড এলাকার ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের ত্রাস হিসেবে পরিচিত ‘টাকলা’ স্বপনের বিরুদ্ধে পল্টন থানায় একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এই এলাকার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, অ্যাপার্টমেন্ট মালিকদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা দাবি করে আসছিলেন তিনি। চাঁদা দিতে না চাইলে দেওয়া হতো প্রাণনাশের হুমকি।

কালভার্টরোডের স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্বপন ও তার অনুসারীদের ছাত্রছায়ায় এই এলাকাতে চাঁদাবাজির সংস্কৃতি গড়ে ওঠেছে। ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও এর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করার কারণে এই এলাকার প্রতিষ্ঠানগুলোর শৃঙ্খলার ব্যাঘাত ঘটছে বলে অভিযোগ করেছেন তারা।

১. অবৈধ মাদক, জুয়া ও ক্যাসিনোর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা: কালভার্টরোড এলাকায় অবৈধ মদ, জুয়া ও ক্যাসিনোর ব্যবসার প্রসার ঘটাতে স্বপনের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। তবে সম্প্রতি পুলিশের অভিযানের কারণে এসব বাণিজ্য বন্ধ রয়েছে।

২. চাঁদা দাবি, না পেলে প্রাণনাশের হুমকি: কালভার্টরোড এলাকার বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও অ্যাপার্টমেন্ট মালিকদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা দাবি করে আসছিলেন স্বপন। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানানো হলেই মিলতো প্রাণনাশের হুমকি। এনিয়ে স্থানীয়দের অভিযোগের পাহাড় জমেছে পল্টন থানায়।

৩. ইফতারের বাজারে চাঁদাবাজি: কালভার্টরোড এলাকায় বিকেল বেলা পবিত্র রমজান মাস থেকে ইফতারের সামগ্রীর জন্য যেসব দোকান ও বাজার বসছে, তাদের কাছে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। যেসব ব্যবসায়ীরা চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন, তাদের জীবননাশের হুমকি দেয়া হয়েছে বলে সারাবাংলার কাছে অভিযোগ করেছেন তারা।

বিজ্ঞাপন

প্রিতম-জামান টাওয়ারের পাশের ইফতার সামগ্রীর ব্যবসায়ী রমজান আলী সারাবাংলাকে বলেন, স্বপন ও তার দলের কয়েকজন তাদের কাছে নিয়মিত চাঁদা দাবি করে আসছিলেন। তিনি প্রথমে দিতে অস্বীকৃতি জানান, এরপরেই তার উপর নানা ধরনের নির্যাতন শুরু হয়। পুলিশ, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করে তিনি কোন প্রতিকার পাননি।

৪. জামান টাওয়ারের ত্রাস: কালভার্টরোডের জামান টাওয়ারের সবার কাছে নিজেকে ত্রাস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন স্বপন। ভবনটির নিরাপত্তা ও অবৈধ ব্যবহার রোধে স্বপনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে মতিঝিলের উপপুলিশ কমিশনার, রাজউক চেয়ারম্যান, রমনার নির্বাহী প্রকৌশলী ও পল্টন মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়েছে জামান টাওয়ার স্পেস মালিক কল্যাণ সমিতি।

এ বিষয়ে জামান টাওয়ার স্পেস মালিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. মমিন উল্লাহ পাটোয়ারী সারাবাংলাকে বলেন, জামান টাওয়ারের নির্বাহী ব্যবস্থাপকের ভাগ্নে পরিচয় দেওয়া এম আই স্বপন প্রায়ই মালিকদের স্টাফদের মারধোর করে। তার বিরুদ্ধে থানায় কয়েকটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করে নাই। এর উপরে মালিকদের সঙ্গে বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হচ্ছে।

সারাবাংলা/এমআইএস/এমএম

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর