‘প্রচণ্ড ব্যথায় অস্থির হয়ে আছেন খালেদা’
১ জুলাই ২০১৮ ১৪:০০
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: কারাগারে প্রচণ্ড ব্যথায় খালেদা জিয়া অস্থির হয়ে আছেন বলে জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
রোববার (৩০ জুন) দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান। এর আগে শনিবার সন্ধ্যায় কারাগারে দেখা করেন খালেদা জিয়ার আত্মীয়-স্বজনরা।
রিজভী বলেন, ‘গতকাল (৩০ জুন) দেশনেত্রীর স্বজনরা তার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন। সেখানে তার শারীরিক অবস্থা দেখে তারা বেদনাহত ও ব্যথিত হয়েছেন। ইতোপূর্বে দেশনেত্রীর ব্যক্তিগত এমনকি সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা তার সুচিকিৎসার জন্য যে পরামর্শ দিয়েছিলেন সেটির বিন্দুবিসর্গও পালন করা হয়নি।’
‘বরং সুচিকিৎসার দাবি করাটাও যেন দেশনেত্রীর জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকার একটা মওকা পেয়ে গেছে দেশনেত্রীকে চিকিৎসা না দিয়ে তার অসুস্থতাকে চরম অবনতিশীল পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া’— বলেন রিজভী।
তিনি বলেন, ‘তার ঘাড় থেকে বাম হাতের আঙুল পর্যন্ত এবং কোমর থেকে বাম পায়ের তলা পর্যন্ত প্রচণ্ড ব্যথায় তিনি অস্থির হয়ে আছেন। অস্ত্রোপচার করা দু’টি চোখই ধূলাকীর্ণ স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে দিনকে দিন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার প্রতি সরকার প্রধানের আচরণ লজ্জাজনকভাবে নিম্ন রুচির পরিচায়ক।’
খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে অশুভ মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন করা হচ্ছে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, ‘বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য বারবার দাবি করা সত্ত্বেও সরকারের এড়িয়ে যাচ্ছে। এতে মনে হয় দেশনেত্রীকে বন্দি করে হাতের মুঠোয় রেখে কোন অশুভ মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘বারবার বলা হয়েছে প্রোষ্টেটিক কমপেটিবল এমআরআই মেশিন, উন্নত মানের সিটি স্ক্যান, ডেক্সা স্ক্যান ফর বিএমডি (বনমেরু ডেনসিটি) টেষ্ট, নার্ভ কন্ডাকশন স্টাডি ফ্যাসিলিটিজ, ইএমজি— যা তার শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য জরুরি সেগুলোর সুবিধা থাকায় আমরা ও তার স্বজনরা ইউনাইটেড হাসপাতালের চিকিৎসার কথা বলেছি।’
‘কিন্তু সরকার মুক ও বধির হয়ে আছে। ইউনাইটেড হাসপাতালে দেশনেত্রীকে সুচিকিৎসা না দিতে সরকার মনে হয় শপথ নিয়েছে। আর এই শপথের উদ্দেশ্যই হচ্ছে-জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ধ্বংস করতে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ক্রমাগত কষ্ট দিয়ে তার জীবনকে বিপন্ন ও বিপর্যস্ত করা।’
রিজভী বলেন, ‘আমরা আবারও দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলতে চাই, খালেদা জিয়ার প্রতি এই অন্যায় বরদাস্ত করা হবে না। তার ন্যূনতম কোনো ক্ষতি হলে সরকার জনগণের ক্রোধ থেকে রেহাই পাবে না। আমি আবারও দলের পক্ষ থেকে অবিলম্বে দেশনেত্রীর নিঃশর্ত মুক্তি এবং ইউনাইটেড হাসপাতালে সুচিকিৎসার জোর দাবি জানাচ্ছি।’
কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার ঘটনা প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর পৈশাচিক হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ। বেছে বেছে আন্দোলনের নেতাদের ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে গুরুতর আহত করা হয়েছে। আমরা আগেও বলেছিলাম, শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কারের দাবি মেনে নেওয়াটা ছিল প্রধানমন্ত্রীর তামাশা। গোটা জাতি এখন সেই রঙ-তামাশার দৃশ্য দেখছে। প্রধানমন্ত্রী মূলত সেদিন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতারণা করেছেন।
রিজভী আরো বলেন, ‘ছাত্রলীগের মন শেখ হাসিনার প্রতিহিংসার রঙে রাঙানো। এই সময়ের ছাত্রলীগ প্রকৃত কোনো ছাত্র সংগঠন নয়, এটি প্রধানমন্ত্রীর ভাড়াটিয়া বাহিনী। এদের মধ্যে নেই জ্ঞানের আলো, শিক্ষার আদর্শ, সহমর্মিতা ও সহিষ্ণুতা। প্রতিবাদের আওয়াজকে গুঁড়িয়ে দিতেই গুণ্ডামির চেতনায় এদেরকে তৈরি করা হয়েছে। শিক্ষাঙ্গনকে বাকশালি খাঁচায় বন্দি করার জন্যই বর্তমান প্রজন্মের ছাত্রলীগকে তৈরি করা হয়েছে আতঙ্কের অন্য নাম হিসেবে।’
তিনি আরো বলেন, শিক্ষাঙ্গনের গণতন্ত্রবিরোধী বিপজ্জনক শক্তি হচ্ছে ছাত্রলীগ। খুন, জখম, হাঙ্গামা, হল দখল, সিট বাণিজ্য, শিক্ষক-ছাত্রছাত্রীকে লাঞ্ছিত করার প্রতীকে পরিণত হয়েছে বর্তমান ছাত্রলীগ। আর সেজন্যই পুলিশের পাশাপাশি ছাত্রলীগও নেমে পড়েছে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমর্থকদের ক্ষতবিক্ষত করতে। গতকাল (শনিবার) কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের বর্বরোচিত হামলার তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানাচ্ছে বিএনপি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক, বিলকিস জাহান শিরিন, প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবীব, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ প্রমুখ।
সারাবাংলা/এজেড/জেডএফ