ঢাকা: জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক ঘোষিত ঐতিহাসিক জুলাই ঘোষণাপত্র অনেক গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হলেও এতে দেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ও আন্দোলনের উল্লেখ না থাকায় তা পরিপূর্ণ হয়নি।
বুধবার (৬ আগস্ট) রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
আখতার হোসেন বলেন, ‘জুলাই ঘোষণাপত্র নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। তবে আমরা অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি যে, এতে পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা চত্বরের গণহত্যা, জুডিসিয়াল কিলিং, ভ্যাটবিরোধী আন্দোলন, ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, আবরার ফাহাদ হত্যার বিরুদ্ধে আগ্রাসনবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং মোদিবিরোধী প্রতিবাদ— এই জাতীয় আন্দোলনগুলোর কোনো উল্লেখ নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই ঘটনাগুলো আমাদের জাতীয় চেতনা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের ইতিহাসে গভীরভাবে জড়িত। এগুলোর স্বীকৃতি ছাড়া জাতির পূর্ণাঙ্গ পুনর্জাগরণ সম্ভব নয়।’
তিনি আরও জানান, এনসিপি শিগগিরই একটি বিকল্প নাগরিক ঘোষণা প্রকাশ করবে, যেখানে এসব আন্দোলনের যথাযথ মূল্যায়ন থাকবে।
তিনি আরও বলেন, ‘গত ১৬ বছরে বাংলাদেশের মানুষ বহু আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে। কিন্তু এসবের মধ্যে কিছু সংগ্রাম আমাদের জাতীয় জীবনে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলেছে, যা ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ পর্ব হয়ে উঠেছে। এসব উল্লেখ করলে ঘোষণাপত্রটি জাতির জন্য গর্বের দলিল হতে পারত।’
ঘোষণাপত্রের ভাষা ও কাঠামো নিয়েও প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘এক হাজার শব্দের ঘোষণাপত্রে জাতিসংঘ স্বীকৃত জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে এক হাজার ৪০০ নিহত নিয়ে কোনো তথ্য নেই। আহত এবং নিহতের প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণে সরকার এখনও ব্যর্থ। এ ব্যর্থতার প্রতিফলন ঘোষণাপত্রেও রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঘোষণাপত্রে উপনিবেশবিরোধী লড়াইয়ের কথা বলা হলেও ১৯৪৭ সালের ভাষা ও অধিকারভিত্তিক সংগ্রামের উল্লেখ নেই। ১৯৪৭, ১৯৭১ এবং ২০২৪—এই তিনটি যুগান্তকারী গণআন্দোলনের ইতিহাস ঘোষণাপত্রকে সমৃদ্ধ করতে পারত।’
আখতার হোসেন বলেন, ‘আমরা বহুদিন ধরেই একটি নতুন সংবিধানের দাবি জানিয়ে আসছি। গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের অংশগ্রহণে নতুন সংবিধান রচনার পথ এখনই খুলে দেওয়া প্রয়োজন। নির্বাচন শুধু নির্বাচন নয়, সেটি হতে হবে একটি নতুন গণতান্ত্রিক চুক্তির সূচনা।’
তিনি আরও জানান, এনসিপি শিগগিরই একটি বিকল্প নাগরিক ঘোষণা প্রকাশ করবে, যেখানে এসব আন্দোলনের যথাযথ মূল্যায়ন থাকবে।
সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনপূর্ব প্রক্রিয়ায় বিচার সংস্কার এবং ‘লেভেল প্লেইং ফিল্ড’ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে আখতার হোসেন বলেন, ‘এই অন্তর্বর্তী সময়ে যদি ন্যায়বিচার, রাজনৈতিক সমতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত না হয়, তবে গণতন্ত্র নতুন করে জন্ম নিতে পারবে না।’