ঢাকা: জাতির উদ্দেশ্যে প্রধান উপদেষ্টার দেওয়া ভাষণে নির্দিষ্ট করে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষণাকে ‘ঐতিহাসিক’ অভিহিত করে একে স্বাগত জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বুধবার (৬ আগস্ট) গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে দলের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি মনে করে এই ঐতিহাসিক ঘোষণায় বাংলাদেশ রাজনৈতিক অচলাবস্থা কাটিয়ে উঠবে। এটি গণতন্ত্র উত্তরণের পথকে সুগম করছে। একইসঙ্গে বিএনপি আশা করে এই নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করার জন্য সরকার, নির্বাচন কমিশন সব ধরনের ব্যবস্থা নেবে এবং একটি কার্যকরী জাতীয় সংসদ গঠনের জন্য বিএনপি সব রাজনৈতিক দল ও জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছে।’
এই নির্বাচন অতি জরুরি উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এখন এই নির্বাচনটা দেশের জনগণই চায়। জনগণ আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় সবচেয়ে বড় প্রহরি হয়ে দাঁড়াবে।’
গতকাল প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুসের জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণের পরে রাতে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। এতে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পরে সকালে সংবাদ সম্মেলনে আসেন বিএনপির মহাসচিব। তার সঙ্গে ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিএনপি এই ঘোষণাপত্রকে স্বাগত জানায়। বিএনপি বিশ্বাস করে, এই ঘোষণাপত্রে রাজনৈতিক দলগুলো অঙ্গীকার করেছে তা পালনের মধ্য দিয়ে এক নতুন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের রুপান্তরের কাজ শুরু হবে। সুযোগ সৃষ্টি হবে একটি সাম্য, মানবিক মূল্যবোধ ও ন্যায় বিচারের ভিত্তিতে সত্যিকারের প্রগতিশীল সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রক্রিয়া। যে সকল রাজনৈতিক দল, ছাত্র, কৃষক, শ্রমিকসহ সব স্তরের জনগণ এই সংগ্রামে অংশ নিয়েছে, শহিদ হয়েছে, আহত হয়েছে, পঙ্গু হয়েছে বিএনপি তাদের জানাচ্ছে কৃতজ্ঞতা, ধন্যবাদ ও অভিনন্দন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘প্রফেসর ইউনুস নিশ্চয়ই এখন পর্যন্ত যতগুলো সব কাজ করে এসেছেন তাতে করে উনি প্রমাণ করেছেন যে, ভবিষ্যতেও তিনি নির্বাচনকে সুষ্ঠু অবাধ করার জন্য এমন কিছু করবেন না যা প্রশ্নবিদ্ধ হবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তারেক রহমান দেশে আসবেন। আমরা ওয়েটিং এ আছি।’
জুলাই ঘোষণাপত্রের পর রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভেদ রয়ে গেল কিনা জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘যে ঘোষণা প্রধান উপদেষ্টা দিয়েছেন জুলাই ঘোষণাপত্রে পরবর্তী নির্বাচিত সংসদ সংবিধানের যাবতীয় সংস্কার বা সংশোধনী বাস্তবায়ন করবে। এটাই আইনে ও সাংবিধানিক প্রক্রিয়া।’
তিনি বলেন, ‘এর বাইরে অন্য কোনো প্রক্রিয়ার কথা আমাদের জানা নেই। সংস্কার কমিশন ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আমাদের দীর্ঘ ধারাবাহিক আলোচনায় দ্বিতীয় পর্বের আলোচনা শেষে যে সমস্ত বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেগুলো সনদ আকারে জাতীয় সনদ জুলাই-২০২৫ এই নামে সেটা সংকলিত করে সব পক্ষের সইয়ের জন্য দেওয়া হবে। আমরা আগেই বলেছি যে, আমরা সেই সইয়ের জন্য প্রস্তুত আছি। তবে প্রধান উপদেষ্টা ঘোষণা পত্রে যেটা উল্লেখ করেছেন এটাই হচ্ছে বৈধ প্রক্রিয়া যে, নির্বাচিত সংসদ পরবর্তি সংসদে সাংবিধানিক সব সংস্কার এগুলো পরিবর্তন করবে।’
সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া হয়ত তারা এখনো দেয়নি, তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় হতাশার কথা তারা হয়েছে। তবে আমরা আশা করব তারা একটি পজেটিভ দৃষ্টি ভঙ্গি নিয়ে এই গণতান্ত্রিক পথটাকে পরিস্কার করবে।’