ঢাকা: দেশের জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি নারী হলেও জাতীয় সংসদে তাদের প্রতিনিধিত্ব এখনও হতাশাজনকভাবে কম। এ অবস্থা পরিবর্তনে নারীর রাজনৈতিক অধিকার ফোরাম ২০২৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অন্তত ১০০ সংরক্ষিত আসনে সরাসরি ভোটের দাবি জানিয়েছে।
রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটি এ প্রস্তাবনা উপস্থাপন করে।
লিখিত বক্তব্যে সুস্মিতা রায় বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও সংসদে নারীর সরাসরি নির্বাচিত প্রতিনিধির সংখ্যা সীমিত। বর্তমানে সংবিধানের ৬৫(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংসদে মাত্র ৫০টি সংরক্ষিত আসন রয়েছে, যা দলীয় মনোনয়নের ভিত্তিতে পূরণ হয়। ফলে নারীরা স্বাধীন রাজনৈতিক পরিচয়ে অগ্রসর হতে পারছেন না।
ফোরাম সদস্য মাহিন সুলতান বলেন, “নারীর নেতৃত্ব বিকাশের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনে সরাসরি অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে হবে। এ জন্য ২০২৬ সালের নির্বাচনে অন্তত ১০০ আসনে নারী প্রার্থীকে সরাসরি ভোটে নির্বাচিত করার পরিবেশ তৈরি করতে হবে।”
একশনএইটের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির অভিযোগ করেন, সংসদীয় রাজনীতিতে নারীর অবদান সবসময়ই গৌণ রাখা হয়েছে। সমাজ, অর্থনীতি ও মুক্তিযুদ্ধে নারীর অসামান্য অবদান থাকলেও তা জাতীয় সংসদে প্রতিফলিত হয়নি। রাজনৈতিক দলগুলোও নারীর নেতৃত্ব তৈরিতে কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি।
ফোরামের পক্ষ থেকে সামিনা লুৎফা চার দফা দাবি উপস্থাপন করেন—
- দেশের মোট জনসংখ্যার ৫১ শতাংশ নারীকে যথাযথ প্রতিনিধিত্ব দিতে সংসদে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
- ২০২৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অন্তত ১০০ আসনে নারীদের সরাসরি নির্বাচনের ব্যবস্থা করা।
- রাজনৈতিক দলগুলোকে ৩৩% নারী প্রার্থী মনোনয়ন বাধ্যতামূলক করা এবং আইন সংশোধন করে তা কার্যকর করা।
- জুলাই সনদ অনুযায়ী ধাপে ধাপে সংরক্ষিত নারী আসনের সংখ্যা ৫০ থেকে বাড়িয়ে ১০০ করা।
আরেক সদস্য সাদাফ সাজ সিদ্দিকী বলেন, “নারীর রাজনৈতিক অংশগ্রহণ কেবল সংস্কারের বিষয় নয়, এটি সামাজিক ন্যায়বিচারেরও দাবি। সংসদে নারী নেতৃত্ব বাড়াতে পারলে গণতন্ত্র, সমতা ও উন্নয়নের পথ আরও সুগম হবে।”
তিনি আরও বলেন, ২০২৬ সালের নির্বাচন নারীর রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করার এক বড় সুযোগ। এজন্য রাজনৈতিক দল, নির্বাচন কমিশন ও সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে নারী সংগঠক, শিক্ষাবিদ, গবেষক, আইনজীবী, সমাজকর্মীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। সবার অভিন্ন মতামত ছিল— যথাযথ নারী প্রতিনিধিত্ব ছাড়া প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।