Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আন্দোলন ও নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হোন


২৪ ডিসেম্বর ২০১৭ ১৮:৪৪

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: আন্দোলন ও নির্বাচনের জন্য দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের প্রস্তুত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।

রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে আয়োজিত মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ নির্দেশ দেন।

জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের দ্বি-বার্ষিক কাউন্সিল ও মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে এ মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ আয়োজন করা হয়।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনের পর ২০১৫ সাল থেকে আন্দোলন-সংগ্রামের বাইরে রয়েছে বিএনপি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলটির চেয়ারপারসন আন্দোলন-সংগ্রাম ও নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হতে বললেন নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের।

টানা ৪৫ মিনিট বক্তব্যের শেষ মুহূর্তে এসে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আগামী দিন যে কর্মসূচি আসবে, সেই কর্মসূচির জন্য প্রস্তুত হতে হবে। আন্দোলন, সংগ্রাম, নির্বাচন— সব কিছুর জন্য আপনাদেরকে প্রস্তুতি নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি, আমরা সফল হব। আমাদের মাধ্যমেই বাংলাদেশে গণতন্ত্র এসেছিল—বহুদলীয় গণতন্ত্র, বিএনপির হাত ধরে, জিয়াউর রহমানের হাত ধরে। আবারও বিএনপির হাত ধরে এই দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুন:প্রতিষ্ঠিত হবে।’

দীর্ঘ বক্তৃতায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধে বিএনপির অবদান, ভারতের অবদান, বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক পীড়ন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, গুম-খুন-হত্যা, প্রধান বিচারপতির অপসারণ, আমলাদের পদোন্নতি, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা, আগামী নির্বাচন, বিএনপির আন্দোলন— বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন খালেদা জিয়া।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘নির্বাচন (২০১৪) হওয়ার পর তারা (আওয়ামী লীগ) বলল, সংবিধানের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য আমরা নির্বাচনটা দিয়েছি। খুব শিগগিরই আরেকটা নির্বাচন দেব। সেই ‘শিগগির’ নমুনা এই?

‘বাংলাদেশে যত রাজনৈতিক দল আছে সকলেরই দাবি একটা—আমরা নির্বাচন চাই, সেই নির্বাচন হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও  সকলের অংশগ্রহণে। সেই জন্যই আমাদের দাবি হচ্ছে- এই আওয়ামী লীগ বা শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। বিধায় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে‘— বলেন খালেদা জিয়া।

তিনি বলেন, ‘কথায় কথায় সংবিধান দেখায়। সংবিধান তো আওয়ামী লীগ লংঘন করেছে। তারা বলে, নির্বাচনকালীন সরকারকে নির্বাচিত হতে হবে। অনির্বাচিত হলে হবে না। তারা নিজেরাই তো নির্বাচিত নয়। ১৫৪ জন সংসদ সদস্য বিনা ভোটে নির্বাচিত।’

সরকারের  প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আপনারা বলছেন অনেক উন্নয়ন করেছেন, ভাল কাজ করেছেন— যদি সেটাই হয়ে থাকে, তাহলে আসেন জনগণ কোন দিকে যায় দেখেন। জনগণ কাদেরকে ভোট দেয় দেখেন। তত্ত্বাবধায়কের দাবি তো আপনাদেরই ছিল। সেটা তো আমি দিয়েছিলাম। আমরা ভয় পাইনি। আমরা জনগণের দল। সব সময় জনগণের সঙ্গে থাকি।’

সরকার পাকিস্তানিদের কায়দায় চলছে মন্তব্য করে বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য কি ছিল? পাকিস্তানিরা আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। নির্বাচন হয়েছে কিন্তু ক্ষমতা হস্তান্তর করবে না— এটা নিয়েই তো যুদ্ধ শুরু হলো। আজকে আমরা একই অবস্থা দেখছি। পাকিস্তানিদের কায়দায় তারা (সরকার) চলছে।’

সরকারের বিরুদ্ধে কথা বললেই গুম করা হয় অথবা মেরে ফেলা হয়— এমন অভিযোগ তুলে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার যে অপকর্মগুলো করছে, সেগুলো নিয়ে কেউ কথা বললে তাদেরকে হয় গুম করে ফেলে, না হয় মেরে ফেলে। আপনারা দেখেছেন, অনেক লোককে নিয়ে গেছে এবং তাদেরকে যখন ফেরত দিয়েছে তারা আর আগের মতো কথা বলতে পারে না। তাদেরকে এমনভাবে বলে দেওয়া হয়েছে, যদি বাড়াবাড়ি করিস, এবার তো ফেরত যাচ্ছিস, পরবর্তী সময় আর ফেরতও যেতে পারবি না।’

বিজ্ঞাপন

গুম-খুনে এজেন্সিগুলোকে ব্যবহার করা হচ্ছে— এমন ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, ‘এমনভাবে এজেন্সিগুলোকে ব্যবহার করছে  যে, তারা এখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। প্রতিনিয়ত গুম-খুন-হত্যা হচ্ছে। শিশু নির্যাতন, নারী নির্যাতন চলছে। শুধু আমাদের ওপর বা পলিটিক্যাল ওয়ার্কাদের ওপর অত্যাচার নয়, সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচার হচ্ছে। সাধারণ মানুষ আজ অস্থির হয়ে গেছে। এদের (সরকার) হাত থেকে তারা নিস্তার চায়, পরিবর্তন চায়।’

প্রধান বিচারপতিকে জোরপূর্বক অপসারণ করা হয়েছে অভিযোগ তুলে খালেদা জিয়া বলেন, ‘প্রধান বিচারপতির অপরাধ কী ছিল? তিনি এই সরকারের অপকর্মের কথা বলেছিলেন এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য কাজ করেছিলেন। বিচারপতিদের ইমপিচমেন্ট নিয়ে জাজমেন্ট দিয়েছিলেন এবং অনির্বাচিত ১৫৪ জন সংসদ সদস্যদের ব্যাপারে একটা অবজার্ভেশন দিয়েছিলেন। সেই জন্যই প্রধান বিচারপতিকে তারা অপসারণ করল। প্রধান বিচারপতি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন নি। তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে।’

নানা ইস্যুতে ভারতের কট্টর সমালোচনায় অভ্যস্ত বিএনপির চেয়ারপারসন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের অবদান স্মরণ করে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে যেমন বাংলাদেশের মানুষের অবদান আছে, তেমনি আমাদের প্রতিবেশি ভারতেরও অবদান আছে। কারণ, তারা সেই সময়  মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দিয়েছিল, বাংলাদেশের বহু লোক সেখানে আশ্রয় নিয়েছিল। সেই জন্য অবশ্যই তাদেরকে (ভারত) ধন্যবাদ জানাব।’

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সরকারের কড়া সমালোচনা করে তিনি বলেন,  ‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ দিশেহারা। আজকে চাউলের কেজি ৭০ টাকা, পেঁয়াজ ১৪০টাকা। দেশি রসুন ৩০০ টাকা। আজকে মানুষ কিনে খেতে পারছে না। ৬০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। এ অবস্থার জন্য দায়ি বর্তমান সরকার। সবজি আসে গ্রাম থেকে। ঘাটে ঘাটে আওয়ামী লীগের লোকদের চাঁদা দিতে হয়। ফলে সবজি যখন ঢাকা পৌঁছায় তখন মার্কেট প্রাইস বেড়ে যায়।’

জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. মঈন খান, মির্জা আব্বাস, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ বীর বিক্রম, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বীর বিক্রম, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, আমান উল্লাহ আমান, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান প্রমুখ।

সারাবাংলা/এজেড

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর