Thursday 25 Dec 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘আই হ্যাভ অ্যা প্ল্যান ফর দ্য পিপল অব মাই কান্ট্রি’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৮:১৩ | আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৮:৫৯

রাজধানীর পূর্বাচলের ৩০০ফিট সড়কে সংবর্ধনা মঞ্চ থেকে বক্তব্য দিচ্ছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আই হ্যাভ অ্যা প্ল্যান ফর দ্য পিপল অব মাই কান্ট্রি, ফর মাই কান্ট্রি। এই পরিকল্পনা দেশের মানুষের স্বার্থে, দেশের উন্নয়নের জন্য, মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য বাস্তবায়ন করতে হয়। এই জনসমুদ্রে যত মানুষ উপস্থিত আছেন প্রত্যেকটি মানুষের সহযোগিতা আমাদের লাগবে। আপনারা যদি আমাদের পাশে থাকেন, যদি সহযোগিতা করেন, ইনশাআল্লাহ আমরা বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হব।

বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টায় রাজধানীর পূর্বাচলের ৩০০ফিট সড়কে সংবর্ধনা মঞ্চ থেকে তিনি এসব কথা বলেন।

আল্লাহর দরবারে লাখো-কোটি শুকরিয়া আদায় করে তারেক রহমান বলেন, ‘তার দয়ায় আমি আমার প্রিয় মাতৃভূমিতে ফিরে আসতে পেরেছি। আমাদের মাতৃভূমি লাখো শহিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছিল। একইভাবে ৭৫ সালের ৭ নভেম্বর আধিপত্যবাদের হাত থেকে রক্ষার জন্য সিপাহী-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে আধিপত্যের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করা হয়েছিল। একইভাবে ৯০ এর স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে এদেশের জনগণ, খেটে খাওয়া মানুষ তাদের গণতান্ত্রিক অধিকারকে ছিনিয়ে এনেছিল। কিন্তু তারপরও ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি। ’৭১ সালে যেভাবে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছিল তেমিনভাবে ছাত্রজনতাসহ সর্বস্তরের মানুষ কৃষক, শ্রমিক, গৃহবধু, মাদরাসার ছাত্রসহ দলমত নির্বিশেষ সকল মানুষ ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করেছিল।’

বিজ্ঞাপন

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘আজ দেশের মানুষ কথা বলার অধিকার ফিরে পেতে চায়, তারা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পেতে চায়। দেশের মানুষ চায় তারা যোগ্যতা অনুযায়ী ন্যায্য অধিকার পাবে। আজ সময় এসেছে সকলে মিলে দেশ গড়ার। এই দেশে যেমন পাহাড়ি মানুষ আছে, তেমনি সমতলে মানুষ আছে। এইদেশে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ খ্রিষ্টানসহ বিভিন্ন ধর্মে মানুষ আছে। আমরা চাই সবাই মিলে এমন একটি বাংলাদেশ গড়ে তুলব, যে বাংলাদেশের স্বপ্ন একজন মা দেখেন। অর্থাৎ একটি নিরাপদ বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলতে চাই। যে বাংলাদেশে একজন নারী, একজন পুরুষ, একজন শিশু নিরাপদে ঘর থেকে বের হলে নিরাপদে আবার ঘরে ফিরে আসতে পারে।’

রাজধানীর পূর্বাচলের ৩০০ফিট সড়কে সংবর্ধনা মঞ্চে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ছবি: সারাবাংলা

রাজধানীর পূর্বাচলের ৩০০ফিট সড়কে সংবর্ধনা মঞ্চে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ছবি: সারাবাংলা

তিনি বলেন, ‘দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। চার কোটিরও বেশি তরুণ প্রজন্মের সদস্য, পাঁচ কোটির মতো শিশু, ৪০ লাখের মতো প্রতিবন্ধী মানুষ রয়েছে। কয়েক কোটি কৃষক-শ্রমিক রয়েছেন। এই মানুষগুলোর একটি প্রত্যাশা আছে রাষ্ট্রের কাছে। এই মানুষগুলোর একটি আকাঙ্ক্ষা আছে এই দেশের কাছে। আজ আমরা সবাই যদি ঐক্যবদ্ধ হই, প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই, তাহলে এই লাখো কোটি মানুষের প্রত্যাশাগুলো পূরণ করতে পারব ইনশাআল্লাহ।’

তিনি আরও বলেন,‘৭১ সালে আমাদের শহিদেরা নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন এরকম একটি বাংলাদেশ গঠনের জন্য। বিগত ১৫ বছর স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে কথা বলে হাজারো মানুষ গুম খুনের শিকার হয়েছেন। শুধু রাজনৈতিক দলের সদস্য নয়, নিরীহ মানুষও প্রতিবাদ করতে গিয়ে অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, জীবন দিয়েছেন। ২০২৪ সাল মাত্র সেদিনের ঘটনা। আমরা দেখেছি কিভাবে আমাদের তরুণ প্রজন্মের সদস্যরা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছে, দেশের স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য।’

জিয়াপুত্র বলেন, ‘কয়েকদিন আগে এই বাংলাদেশের ’২৪-এর আন্দোলনের এক সাহসী সন্তান ওসমান হাদিকে হত্যা করা হয়েছে। ওসমান হাদি শহিদ হয়েছে। ওসমান হাদি এই দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন, দেশের মানুষ তাদের গণতান্ত্রিক এবং অর্থনৈতিক অধিকার ফিরে পাক। আজ ২৪ এর আন্দোলনে যারা শহিদ হয়েছেন, ৭১-এ যারা শহিদ হয়েছেন, বিগত স্বৈরাচারের সময় বিভিন্নভাবে গুম খুনের শিকার হয়েছেন। এই মানুষগুলোর রক্তের ঋণ যদি শোধ করতে হয়, আসুন আমরা আমাদের সেই প্রত্যাশিত বাংলাদেশ গড়ে তুলব। যেখানে আমরা সকলে মিলে কাজ করব। সবাই মিলে আমাদের প্রত্যাশিত বাংলাদেশ গড়ে তুলব।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিভিন্ন আধিপত্যবাদ শক্তির গুপ্তচরেরা বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্রে এখনো লিপ্ত রয়েছে। আমাদেরকে ধৈর্যশীল হতে হবে। ধৈর্যধারণ করতে হবে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের যে সদস্যরা আছেন, আপনারাই আগামী দিনে দেশকে নেতৃত্বে দেবেন, গড়ে তুলবেন। এই দায়িত্ব তরুণ প্রজন্মের সদস্যদের গ্রহণ করতে হবে। যাতে করে এই দেশটি আমরা সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে পারি। গণতান্ত্রিক ভিত্তি শক্তিশালী অর্থনীতির ভিত্তির ওপরে গড়ে তুলতে পারি।’

রাজধানীর পূর্বাচলের ৩০০ফিট সড়কে সংবর্ধনা মঞ্চের সামনে বিএনপির নেতাকর্মীরা। ছবি: সারাবাংলা

রাজধানীর পূর্বাচলের ৩০০ফিট সড়কে সংবর্ধনা মঞ্চের সামনে বিএনপির নেতাকর্মীরা। ছবি: সারাবাংলা

তারেক রহমান বলেন, ‘মঞ্চে বহু জাতীয় নেতৃবৃন্দ বসে আছেন, আসুন দুহাত তুলে আল্লাহর দরবারে দোয়া করি, আল্লাহর রহমত আমরা চাই। যেসব জাতীয় নেতা মঞ্চে আছেন, মঞ্চের বাইরে যারা আছেন, আমরা সবাই মিলে এই দেশকে নেতৃত্ব দিয়ে জনগণের প্রত্যাশিত একটি বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলতে চাই। যেকোনো মূল্যে আমাদের এই দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করতে হবে। যেকোনো উসকানির মুখে আমাদের শান্ত থাকতে হবে।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লাখো জনতার উদ্দেশে বলেন, আসুন সবাই মিলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই। আমরা সবাই মিলে করবো কাজ, গড়বো মোদের বাংলাদেশ। তিনি যেকোনো মূল্যে দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার আহবান জানান এবং দলীয় নেতাকর্মীসহ দেশবাসীকে যেকোনো বিশৃঙ্খলাকে ধৈর্যের সাথে মোকাবিলার আহবান জানান।

খালেদা জিয়ার পুত্র বলেন, ‘এখান থেকে আমি আমার মা দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার কাছে যাব। এই একটি মানুষ, যে মানুষটি এই এদেশের মাটি, এই মানুষকে নিজের জীবনের থেকেও বেশি ভালো বেসেছেন। তার সঙ্গে কী হয়েছে আপনারা সবাই জানেন। সন্তান হিসেবে আপনাদের কাছে আমি চাইব, আল্লাহর দরবারে দোয়া করবেন, উনি যাতে সুস্থ হতে পারেন। সন্তান হিসেবে আমার মন আমার মায়ের বিছানার পাশে পড়ে আছে, হাসপাতালের ঘরে। কিন্তু সেই মানুষটি যাদের জন্য জীবনকে উৎসর্গ করেছেন, অর্থাৎ আপনারা এই মানুষগুলোকে আমি কোনোভাবে ফেলে যেতে পারি না। সেজন্য আজ হাসপাতালে যাওয়ার আগে আপনাদের প্রতি, টেলিভিশনগুলোর মাধ্যমে যারা দেখছেন, আপনাদের সবার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার জন্য এখানে দাঁড়িয়েছি।’

রাজধানীর পূর্বাচলের ৩০০ফিট সড়কে সংবর্ধনা মঞ্চের সামনে বিএনপির নেতাকর্মীরা। ছবি: সারাবাংলা

রাজধানীর পূর্বাচলের ৩০০ফিট সড়কে সংবর্ধনা মঞ্চের সামনে বিএনপির নেতাকর্মীরা। ছবি: সারাবাংলা

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যে ধর্মের মানুষ হই, যে শ্রেণির মানুষ হই, আমরা যে রাজনৈতিক দলের সদস্য হই, অথবা নির্দলীয় ব্যক্তি হই, আমাদের নিশ্চিত করতে হবে- যেকোনো মূল্যে আমাদের এই দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা ধরে রাখতে হবে। যেকোনো মূল্যে যেকোনো বিশৃঙ্খলাকে পরিত্যাগ করতে হবে। যেকোনো মূল্যে নিশ্চিত করতে হবে যাতে মানুষ নিরাপদ থাকতে যারে। শিশু হোক, নারী হোক পুরুষ হোক যেকোনো বয়স, যেকোনো শ্রেণি, যেকোনো পেশা, যেকোনো ধর্মের মানুষ যেন নিরাপদ থাকে। এই হোক আমাদের আজকের চাওয়া।’

যেকোনো মূল্যে দেশে শান্তি-শৃঙ্খলার ধরে রেখে বিশৃঙ্খলাকে ধৈর্যের সঙ্গে মোকাবিলার আহবান জানিয়ে তারেক রহমান তার বক্তব্য শেষ করেন। এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, যুগ্ম-মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এনি, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দীন টুকু, বিএনপির মিডিয়া সেলের প্রধান ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী, খালেদা জিয়ার এপিএস এবিএম আবদুস সাত্তার প্রমুখ।

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর