চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে বিএনপি প্রথমে গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছিল। তাকে বাদ দেওয়ার আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা না দিয়ে শেষমুহূর্তে ওই আসনে মনোনয়নের চিঠি দেওয়া হয়েছে আরেক হেভিওয়েট নেতা গোলাম আকবর খোন্দকারকেও। দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, আপাতত উভয়ে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে থাকবেন, পরবর্তী সময়ে এর মধ্যে একজনকে চূড়ান্ত করা হবে।
চট্টগ্রামের ১৬টি সংসদীয় আসনের মধ্যে এখনো একটি আসনে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করেনি। এলডিপি সভাপতি অলি আহমদের ‘নিজস্ব আসন’ হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া আংশিক) আসনটিতে বিএনপির প্রার্থী কে হচ্ছেন, তা নিয়ে কয়েকদিন ধরে জল্পনা-কল্পনা চলছে। অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন এলডিপি জামায়াতের সঙ্গে জোটে যোগ দেওয়ায় এ জল্পনা আরও বেড়েছে।
ধনাঢ্য ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন আহমেদকে বিএনপি ওই আসনে মনোনয়ন দিচ্ছে বলে দলটির একাধিক সূত্রে জানা গেছে। সূত্র জানায়, অলি আহমদের রাজনৈতিক অবস্থান বোঝার জন্য বিএনপি এতদিন আসনটিতে প্রার্থী ঘোষণা করেনি। এর মধ্যে অলির দলের সঙ্গে বিএনপির নির্বাচনি জোট হয়নি। এলডিপি জামায়াতের সঙ্গে জোট করায় এখন বিএনপি তাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করে রাতের মধ্যে ঘোষণা করবে, এমন আভাস মিলেছে।
সম্ভাব্য প্রার্থী জসিম উদ্দিন আহমেদ বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তিনি জেসিকা শিল্পগ্রুপের কর্ণধার। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিনি একসময় অলি আহমদেরও ঘনিষ্ঠজন ছিলেন। ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি চন্দনাইশ উপজেলার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে সেসময় স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাংশ তাকে সমর্থন দিয়েছিল।
এদিকে রোববার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীয় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয় থেকে গোলাম আকবর খোন্দকার মনোনয়নের চিঠি সংগ্রহ করেছেন বলে তার ব্যক্তিগত সহকারী অর্জুন কুমার নাথ জানিয়েছেন।
গত ৪ ডিসেম্বর বিএনপির দ্বিতীয় দফায় ঘোষিত প্রার্থী তালিকায় চট্টগ্রাম-৬ আসনে গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নাম ঘোষণা করা হয়েছিল। এ হিসেবে তিনি নির্বাচন কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্রও সংগ্রহ করেছেন।
অবশ্য প্রার্থী ঘোষণার আগে গোলাম আকবর খোন্দকারও মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন। মনোনয়নের চিঠি পাওয়ার পর তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
তবে গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী জানিয়েছেন, রাউজানে আরেকজন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া কিংবা তাকে বাদ দেওয়া সংক্রান্তে দলীয়ভাবে কিছুই তাকে জানানো হয়নি।
গিয়াস কাদের চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার জানা মতে, আমিই রাউজানে বিএনপির প্রার্থী। কারণ, হাইকমান্ড প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণা করেছে, আমি টাকা জমা দিয়েছি, এর পর মনোনয়নের চিঠি পেয়েছি। এর পর আমি যথারীতি ইলেকশন কমিশন থেকে মনোনয়ন ফরমও সংগ্রহ করেছি। ইনশল্লাহ আগামীকাল (সোমবার) রাউজানে সেটা আমি জমা দেব। আমাকে বাদ দেওয়া হয়েছে, বা অন্য কাউকে নমিনেশন দেওয়া হয়েছে কি না আমি জানি না। কারণ, আমাকে দলীয়ভাবে এ বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি। খুব সম্ভবত অলটারনেটিভ হিসেবে আরেকজনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’
জানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘রাউজান আসনে দু’জনকেই মনোনয়নের চিঠি দেওয়া হয়েছে। আপাতত উভয়ে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে থাকবেন। প্রত্যাহারের সময় একজনকে চূড়ান্ত করে আরেকজনকে প্রত্যাহার করতে বলা হবে।’
চট্টগ্রাম-১৪ আসনে কাকে প্রার্থী করা হচ্ছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেটা খুব সম্ভবত রাতের মধ্যে ঘোষণা আসবে। প্রার্থী কে সেটা আমি জানি না।’
গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসি হওয়া সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ভাই। তাদের বাড়ি রাউজান উপজেলায়। ওই আসন থেকে গিয়াস কাদের আগেও দু’বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তিনি দেশ ছেড়ে গিয়েছিলেন। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর তিনি দেশে ফেরেন।
অন্যদিকে গোলাম আকবর খোন্দকার চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক। একই কমিটিতে তিনি দীর্ঘদিন সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া, তিনি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজপথে সক্রিয় থাকায় তিনি বেশ কয়েকবার কারাবরণ করেন।
২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর রাউজান উপজেলায় বিএনপিতে গিয়াস কাদের ও গোলাম আকবরের অনুসারী হিসেবে দু’টি ধারা তৈরি হয়। গত একবছরেরও বেশিসময় ধরে তাদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘাতে এক ডজনেরও বেশি হত্যাকাণ্ড ঘটে। এমনকি গোলাম আকবর রাউজানে গিয়ে হামলার শিকার হয়ে রক্তাক্ত হয়েছিলেন।