Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কেন্দ্রদখলের পরিকল্পনা জামায়াত-বিএনপির, পুলিশের হাতে ভোটের ম্যাপ


১৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ২৩:১৩

।। জামশেদ নাজিম, বিশেষ সংবাদদাতা ।।

ঢাকা: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সহিংসতার পৃথক মহাপরিকল্পনা করছে জামায়াত ও বিএনপি। নির্বাচনের আগের দুই দিন ও নির্বাচনের দিনের জন্য এ পরিকল্পনা নিয়েছে দুটি দলই। তবে তাদের এসব পরিকল্পনার তথ্য এরই মধ্যে জেনে গেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। ফলে তা প্রতিহত করতে বিশেষ ইলেকশন ম্যাপ তৈরি করে মাঠে কাজ শুরু করেছে পুলিশ বাহিনী। যে কোনও ধরনের নির্বাচনী সহিংসতা প্রতিহত করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে সারাবাংলাকে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতনরা।

বিজ্ঞাপন

দায়িত্বশীল পর্যায় থেকে জানানো হয়েছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীতা চুড়ান্ত ও প্রতীক বরাদ্দের পরপরই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পায়তারা শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে কোথাও কোথাও সহিংস ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনা কারা ঘটাচ্ছে এবং কাদের মদদে হচ্ছে তা জানতে পুলিশ তৎপর রয়েছে।

অনেক নির্বাচনী প্রার্থীকে মাঠে ভোট চাইতে দেখা গেলেও জামায়াত ও বিএনপির নেতারা ভোটের প্রচার এখনো সে অর্থে শুরু করেন নি। পুলিশের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, নির্বাচনে জামায়াত ও তাদের অঙ্গসংঠনের ভোটের প্রচারে না দেখে তাদের যে সন্দেহ হয়, তারই পরিপ্রেক্ষিতে খবর নিয়ে গিয়ে তাদের সহিংসতার পরিকল্পনাই ধরা পড়েছে।

সূত্র বলছে, এই সহিংসতার পরিকল্পনায় জামায়াত বিএনপিকেও সাথে রাখছে না। তাদের একক পরিকল্পনায় অটল থেকে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আর সে পরিকল্পনা মূলত নির্বাচনের আগের দুই দিন ও নির্বাচনের দিনের জন্য।

গোয়েন্দা অনুসন্ধানে জানা গেছে, গ্রেফতার এড়াতে ও পুলিশের বিশেষ আটক অভিযান থেকে রক্ষা পেতে এখনই মাঠে নামছে না জামায়াত-শিবির। এর আগে অপর খবরে জানা যায়, বিভিন্ন ভোটে কিংবা রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যারা সহিংসতা করেছে তাদের তালিকা তৈরি করে পুলিশ মাঠে রয়েছে। ধারনা করা হচ্ছে, সে খবরের পর নিজেদের গ্রেফতার এড়াতে জামায়াতের চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা এখনও ভোটের মাঠে নামছে না।

বিজ্ঞাপন

তবে ভোটের দিন পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে থাকার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত রয়েছে জামায়াত নেতাদের। এবং ভোটের শেষ তিন দিন ভোটের পরিস্থিতি সহিংস করে তোলা হবে। সূত্র জানায়, এ পরিকল্পনায় প্রধান উদ্যোক্তা যুক্তরাষ্ট্রে সফররত যুদ্ধাপরাধী আব্দুল কাদের মোল্লার এক আইনজীবী ও জামায়াত নেতার।

পুলিশ জানিয়েছে, তাদের হাতে পাওয়া পরিকল্পনার তথ্য অনুসারে, আগামী ২৫ ডিসেম্বর থেকে রাজধানী ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকায় এবং বিভাগীয় শহরের উপকণ্ঠে অবস্থান নিতে চায় জামায়াত-শিবির কর্মীরা। এবারের পরিকল্পনায় বিএনপিকে এখনো সম্পৃক্ত করেনি জামায়াত, জানায় সূত্রটি।

পরিকল্পনার গোপন তথ্যের বরাতে সূত্র জানায়, জামায়াত এবার বিএনপির নেতাকর্মীদের অবস্থান ও নির্বাচনী মনোভাব পর্যবেক্ষণ করতে চায়। অতীতের অভিজ্ঞতায় তারা জানে বিএনপি জামায়াত-শিবিরকে সংহিসতায় রেখে নিজেরা ফায়দা নিতে চেষ্টা করে। এবারে যদি বিএনপি অতিতের মতো শুধু জামায়াত কে ব্যবহার করে আন্দলনে থাকতে চায় তাহলে জামায়াত দলটিকে সে সুযোগ দেবে না। তারা আলাদাভাবে নিজেদের কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে। আর যদি শরিক দল হিসাবে জামায়াতের সাথে বিএনপি মাঠে নামে সে ক্ষেত্রে যৌথভাবে বিএনপি জামায়াত নির্বাচনি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে।

মহাপরিকল্পলার অংশ হিসেবে ২৯ ডিসেম্বর থেকে বিছিন্ন ভাবে ছোট ছোট দল হয়ে বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রের আশাপাশের এলাকায় অবস্থান নেওয়া, ভোটকেন্দ্র রেকি করা এবং একই সাথে ভোটারদের মনভাব বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করবে তারা। কোনও কোনও এলাকায় ২৯ ডিসেম্বর রাত থেকেই সহিংসতা ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। যার প্রধান লক্ষ্যই থাকবে নির্বাচন বানচাল করে দেওয়া।

গোয়ন্দা সূত্র বলছে, গোপন পরিকল্পনা হাতে পাওয়া ছাড়াও একাধিক জামায়াত নেতার ফোনালাপ তাদের হাতে রয়েছে। আর এসব তথ্য থেকে বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে।

এদিকে সহিংসতার পৃথক নিজস্ব পরিকল্পনা বিএনপিরও রয়েছে বলে জানতে পেরেছে গোয়েন্দারা।

তাদের এ পরিকল্পনা এসেছে লন্ডন থেকে। সে তথ্য অনুসারে, বিএনপিকে ভোটে জিততেই হবে এমন মনোভাব নিয়ে মাঠে থাকবে।

নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী একাদশ সংসদ নির্বাচনে মোট ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৪০ হাজার ১৯৯টি। সেই তালিকা অনুযায়ী ৪০ হাজার ১৯৯টি ভোটকেন্দ্রই পাহারা কমিটি তৈরি করছে বিএনপি। এছাড়া ভোটকেন্দ্রের আশপাশে দলীয় সাহসী কর্মীদের সমন্বয়ে প্রতিরোধ কমিটিও থাকবে। তবে কেন্দ্র রক্ষা নয়, কেন্দ্র দখল করাই হবে এসব পাহারা কমিটি বা প্রতিরোধ কমিটির প্রধান লক্ষ্য।

এ ক্ষেত্রে নৌকার ব্যাজ গায়ে ঝুলিয়ে ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হবে, এমন একটি নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

লন্ডন থেকে আসা নির্দেশনার মধ্যে মাত্র ৩৬ ঘন্টা ভোট কেন্দ্র দখল রাখলে, কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণে থাকে- এমন একটি কথাও রয়েছে যা কর্মীদের মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সুঠাম দেহের অধিকারী, আগে নির্বাচনি অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং সাহসী, একরোখা ও দলীয় নেতাকর্মীদের এজেন্ট নিয়োগ দেওয়ার কথাও রয়েছে লন্ডন থেকে আসা পরিকল্পনায়। এছাড়া প্রতিটি কেন্দ্র থেকে লন্ডনে সরাসরি যোগাযোগের ব্যবস্থা রাখার কথা বলা হয়েছে এই নির্দেশনায়।

সূত্র জানায়, পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করতে যে তালিকা তৈরি করেছে, সেই তালিকার বাইরে থাকা নেতাকর্মীদের কমিটিতে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।

সূত্রটি আরও জানিয়েছে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আগামী ১৭ ডিসেম্বর লন্ডন থেকে এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দিতে পারেন বলেও খবর রয়েছে।

অপর একটি সূত্র জানায়, এবারের নির্বাচনে ভোটকক্ষ ২ লাখ ৬ হাজার ৫৪০টি। সেই সংখ্যার প্রায় তিনগুণ বেশি এজেন্ট প্রস্তুত করছে বিএনপি।

দায়িত্বশীল পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে জানানো হয়েছে। এবং কমিশনের সাথে সমন্বয় রেখে নির্বাচনি নিরাপত্তার বিশেষ ছক তৈরি করছে পুলিশ সদর দফতর।

এমনকি ‘ইলেকশন ম্যাপ’ নামে একটি নির্বাচনি মানচিত্রও তৈরি করেছে পুলিশ।

পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, সহিংসতামুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে এ মানচিত্র তৈরি করা হয়েছে।

মানচিত্র প্রতিটি ইউনিট প্রধানসহ থানার অফিসার ইনচার্জসর দায়িত্বরত পুলিশের মাঠ কর্মীদের হাতে থাকবে। নির্বাচনের দিন ভোট কেন্দ্র কেন্দ্রিক কোনো সহিংসতা শুরু বলে এই মানচিত্র অনুসারে নির্বাচন কমিশনের সেল থেকে নির্দেশনা দেওয়া হবে।পুলিশের পাশাপাশি নির্বাচনী নিরাপত্তায় থাকা বিজিবিসহ অন্যান্য সংস্থার সম্নয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে ইলেকশন ম্যাপ।

ম্যাপটি পর্যালাচনা করে দেখা গেছে, প্রতিটি ম্যাপে স্থানীয় ভোট কেন্দের নাম, ভোট গ্রহণের ভবনের অবস্থা, দ্রুত যাতায়াতের পথ, কোন দিক থেকে দুস্কৃতিকারীরা হামলাসহ নাশকতা করতে পারে এবং ভোট কেন্দ্রটি পূর্বের নির্বাচনি ঘটনাসহ বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ্য করা হয়েছে।

ভোটের আগের দুই দিন এবং ভোটের দিনের নিরাপত্তার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বৃহস্পতিবার (১৩ ডিসেম্বর) আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের বৈঠকেও আলোচনা হয়।
বৈঠক সুত্র জানায়, সহিংসতা প্রতিরোধ করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়। এসময় পুলিশসহ অন্যান্য সংস্থাও বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে।

বিভিন্ন নির্দেশনার পাশাপাশি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা বৈঠকে বলেন, ভোটের ভাগ্য যাতে মাস্তান-সন্ত্রাসীদের হাতে চলে না যায়, সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

তিনি বলেন, অতীতে নির্বাচনে পুলিশ সদস্য, প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ম্যাজিস্ট্রেট ও শত শত মানুষ নিহত হয়েছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভস্মীভূত হয়েছে। সেটার কী পরিপ্রেক্ষিত ছিল, আমরা কেন নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি; সে বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখেই আমাদের এবারের পরিকল্পনা সাজাতে হবে।

সারাবাংলা/জেডএন/এমএম

জামায়াত নির্বাচন বিএনপি সহিংসতা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর