প্রথম দিনেই সংসদ উত্তপ্ত করলেন বিএনপির এমপিরা
১১ জুন ২০১৯ ২১:১৭
সংসদ ভবন থেকে: বাজেট অধিবেশন শুরুর দিনই পয়েন্ট অব অর্ডারে বক্তব্য দিয়ে সংসদ অধিবেশনে উত্তাপ ছড়িয়েছেন বিএনপির দুই সংসদ সদস্য। ঈদের চাঁদ দেখা নিয়ে বিভ্রাট ও সংসদের বৈধতা প্রশ্নে বক্তব্য দিলে এ উত্তাপ ছড়ায়। পয়েন্ট অব অর্ডারে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেন। বিএনপির সংরক্ষিত আসনের সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা তার বক্তব্যে সংসদের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
বিএনপির দুই সংসদ সদস্যের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা। এ সময় অধিবেশনে কিছুটা হৈ-হট্টগোল ও উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে। তবে ‘সংসদ অবৈধ’ শব্দটি এক্সপাঞ্জ করে দেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
মাগরিবের নামাজের বিরতির পর স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরু হলে পয়েন্ট অব অর্ডারে বিএনপির প্রার্থীরা বক্তব্য দিলে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে। বিএনপির দুই সংসদ সদস্যের পাশাপাশি চাঁদ দেখা নিয়ে বিভ্রাটসহ বিভিন্ন বিষয়ে পয়েন্ট অব অর্ডারে বক্তব্য রাখেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ, ফখরুল ইমাম, ডা. রুস্তম আলী ফরাজী, পীর ফজলুর রহমান। এছাড়া ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য পংকজ দেবনাথ, রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনও বক্তব্য রাখেন।
বিএনপির হারুন অর রশিদ ঈদের চাঁদ দেখা নিয়ে বিভ্রাটের সমালোচনা করে বলেন, ‘ঈদের চাঁদ দেখা কমিটি রয়েছে। চাঁদ দেখা যায় সন্ধ্যায়। অথচ ধর্ম প্রতিমন্ত্রী প্রথমে ঘোষণা দিলেন, কোথাও চাঁদ দেখা যায়নি, ঈদ হবে না। আবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে হঠাৎ করেই আবার বলা হলো, চাঁদ দেখা গেছে, কাল ঈদ। এ বিষয়টি জনমনে ভোগান্তির সৃষ্টি করেছে। আর ধর্ম যার যার, উৎসব সবার- এ কথা যারা বলেন তাদের জ্ঞানের অভাব রয়েছে।
এ সময় ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে ধর্মপ্রতিমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেন বিএনপির এই সংসদ সদস্য।
এদিকে ফ্লোর নিয়ে বর্তমান সংসদকে অবৈধ বলায় সরকারি দলের সংসদ সদস্যদের ক্ষোভের মুখে পড়েন বিএনপির সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। বিএনপির এই এমপি বলেন, ‘বর্তমান সংসদ জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। টিআইবিসহ সবাই বলেছে এ সংসদ জনগণের ভোটে হয়নি। তাই খুশি হবো এ সংসদের মেয়াদ যেন একদিনও না বাড়ে।’
রুমিন ফারহানা বলেন, ‘মিথ্যা মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে বন্দি রাখা হয়েছে। তাকে রাজনৈতিক কারণে জামিন দেওয়া হচ্ছে না। সরকারের মিথ্যা মামলার কারণে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন দেশে ফিরতে পারছেন না।’
এ সময় রুমিন ফারহানার বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা উঠে দাঁড়ান। তার এমন বক্তব্য এক্সপাঞ্জের দাবি জানান। পরে স্পিকার আর কাউকে ফ্লোর না দিয়ে দিনের পরবর্তী কার্যসূচিতে প্রবেশ করলে উত্তেজনার প্রশমন ঘটে।
এর আগে জাতীয় পার্টির ডা. রুস্তম আলী ফরাজী ফ্লোর নিয়ে বলেন, ‘৯০ ভাগেরও বেশি ওষুধ মেয়াদোত্তীর্ণ, তবুও বিক্রি হচ্ছে। আর চাঁদ দেখা নিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্তদের তড়িঘড়ি করা উচিত হয়নি।’
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান বলেন, ‘৭৫ বঙ্গবন্ধু হত্যার পর জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে দেশে মদ-জুয়ার লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল। জঙ্গিবাদ, বাংলা ভাই-শায়খ আবদুর রহমানদের তৎপরতা বিএনপি আমলে দেশবাসী দেখেছে। কিন্তু ঈদে চাঁদ দেখানো নিয়ে জনগণকে ভোগান্তি দেওয়া হয়েছে। আর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রে বালিশের দাম নিয়ে সারাদেশে তোলপাড় চলছে।’
রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘বিএনপির একজন সংসদ সদস্য নিজে শপথ নিয়ে বর্তমান সংসদ যে বৈধ, তার প্রমাণ দিয়েছেন। আবার অধিবেশনে সংসদকে অবৈধ বলে দেশের ১৬ কোটি মানুষকে অপমাণিত করেছেন, ভোটারদের অবমাননা করেছেন।’
তিনি বিএনপির সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানার বক্তব্য এক্সপাঞ্জের দাবি জানান। এ সময় স্পিকার কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী সংসদকে অবৈধ বলা অংশটুকু এক্সপাঞ্জ করে দেন।
সরকারি দলের সংসদ সদস্য পংকজ দেবনাথ বলেন, ‘জনমতের চাপে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার এদিন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছিল। সম্পূর্ণ বিনা অপরাধে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। বিএনপি-জামায়াত জোটের দুঃশাসন-লুটপাটের কারণেই এই ওয়ান ইলেভেনের সৃষ্টি হয়েছিল।’
এর আগে ফ্লোর নিয়ে জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘টাকার অভাবে অনেক হাসপাতালে মানুষকে সুচিকিৎসা দিতে পারি না। অথচ পত্রিকায় দেখলাম, যেখানে হাসপাতাল নেই অথচ যন্ত্রপাতি কিনতে জার্মান যাচ্ছে একটি প্রতিনিধি দল। আবার অনেক যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে কিন্তু সেগুলো ব্যবহার করার সুযোগ না থাকায় পড়ে আছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রীর কাছে অনুরোধ যেসব যন্ত্রপাতি পড়ে আছে দয়া করে আমাদের দিয়ে দেন।’
জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম বলেন, ‘দেশে আসলে হচ্ছেটা কী? নির্বাচনের আগে এ সরকারের একটি প্রতিশ্রুতি ছিল দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্র। এখন দেখতে পাচ্ছি কিছুই হচ্ছে না। ব্যাংক থেকে অনেক টাকা গায়েব হয়ে গেছে। এত টাকা গেল কোথায়? বলা হচ্ছে প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ ছড়িয়েছে তাহলে ব্যাংকের টাকা গেল কোথায়? ঋণের টাকা ফেরত আসছে না। আসলে টাকা যাচ্ছে কোথায় সরকারের সেটা খতিয়ে দেখা উচিত।’
সারাবাংলা/এএইচএ/একে