জামায়াতকে সাইড বেঞ্চে রেখে বৃহত্তর ঐক্য’র চিন্তা বিএনপির
২১ জুন ২০১৯ ২২:৩১
ঢাকা: দীর্ঘকালের রাজনৈতিক মিত্র স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতকে সাইড বেঞ্চে রেখে আবারও বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য’র উদ্যোগ নিচ্ছে বিএনপি। এই ঐক্যের মূল উদ্দেশ্য মধ্যবর্তী নির্বাচনের ব্যাপারে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা।
শনিবার (২২ জুন) বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা হওয়া কথা রয়েছে। বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য’র ব্যাপারে আগের বৈঠকে স্থায়ী কমিটির সবাই একমত পোষণ করেছেন বলে জানা গেছে।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোট মিলে এ মুহূর্তে ২৬টি রাজনৈতিক দল বিএনপির সঙ্গে রয়েছে। এদের মধ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে রয়েছে বিএনপি, ড. কামাল হোসেন নেতৃত্বাধীন গণফোরাম, আ স ম আব্দুর রব নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ এবং মাহমুদুর রহমান মান্না নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্য।
অন্যদিকে ২০ দলীয় জোটে রয়েছে বিএনপি, মকবুল আহমাদ নেতৃত্বাধীন জামায়াত, মাওলানা আব্দুর রকিব নেতৃত্বাধীন ইসলামী ঐক্যজোট, মাওলানা ইসহাক নেতৃত্বাধীন খেলাফত মজলিস, শায়খ আব্দুল মমিন ও মুফতি ওয়াক্কাস নেতৃত্বাধীন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের দুটি অংশ, কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদ বীরবিক্রম নেতৃত্বাধীন এলডিপি, সৈয়দ মোহম্মদ ইবরাহিম নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, মোস্তফা জামাল হায়দার নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), এ এইচ এম কামরুজ্জামান খান নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, অ্যাডভোকেট গরীবে নেওয়াজ নেতৃত্বাধীন পিপলস লীগ, ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ নেতৃত্বাধীন এনপিপি, ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ লেবার পার্টি।
এছাড়া রয়েছে অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলাম নেতৃত্বাধীন ন্যাপ ভাসানী, কারী আবু তাহেল নেতৃত্বাধীন এনডিপি, শাওন সাদেকী নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ন্যাপ, সাইফুদ্দিন মণি নেতৃত্বাধীন ডেমোক্রেটিক লীগ, সাঈদ আহমেদ নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল, এহসানুল হুদা নেতৃত্বাধীন জাতীয় দল, বাংলাদেশ মাইনরিটি পার্টি, রিতা রহমান নেতৃত্বাধীন পিপলস পার্টি অব বাংলাদেশ (পিপিবি) এবং আবু তাহের চৌধুরী নেতৃত্বাধীন ইসলামিক পার্টি।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন দুইটি জোটে থাকা এই ২৬টি দলের মধ্যে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতকে নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের চার শরিক দলের ঘোর আপত্তি রয়েছে। আবার ২০ দলীয় জোটে থাকা নাম সর্বস্ব দলগুলোর ব্যাপারে জোটের বড় দলগুলোর আপত্তি রয়েছে।
এমন সমীকরণের মধ্যেই দুই জোটের অখণ্ডতা অক্ষুণ্ন রেখে বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য’র উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে বিএনপি। এ ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন জোটের বাইরে থাকা বাম রাজনৈতিক দলগুলো তাদের প্রধান টার্গেট। এমনকি ক্ষমতাসীন জোটে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর সুবিধাবঞ্চিত অংশকেও নিজেদের জোটে আনার চিন্তা-ভাবনা করছে বিএনপি।
জানা গেছে, এরই মধ্যে বিএনপির পক্ষ থেকে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার শরিক দল ‘বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’, ‘বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)’, ‘বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি’, ‘বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী)‘, ‘গণসংহতি আন্দোলন‘, ‘বাংলাদেশের ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ‘, ‘গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি‘, ‘বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন‘- এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।
সূত্রমতে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলগুলোকে কাছে টানার ক্ষেত্রে প্রধান প্রতিবন্ধকতা জামায়াতের ব্যাপারে বিকল্প ভাবনাও ভেবে রেখেছে বিএনপি। বৈশ্বিক রাজনীতি ও বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে জামায়াতের ব্যাপারে কৌশলী পন্থা নিচ্ছে দলটি। দীর্ঘকালের রাজনৈতিক মিত্রের সঙ্গে সম্পর্ক একেবারে ছিন্ন না করে কিছুটা সাইড বেঞ্চে রেখে স্বাধীনতার স্বপক্ষ শক্তির সঙ্গে রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তুলতে চায় তারা।
আর সে কারণেই জামায়াতের পৃষ্ঠপোষকতায় নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গঠনে এলডিপির প্রচেষ্টা নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে না বিএনপি। বরং এলডিপির সঙ্গে জামায়াতের এই ‘দোস্তিকে’ নিজেদের জন্য মঙ্গলজনকই মনে করছে দলটি।
তবে এসব বিষয় নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে সরাসরি কোনো কথা বলতে চান না বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা। বরং শনিবারের (২২ জুন) বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনার পর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের শরিকদের সঙ্গে বসে চূড়ান্ত নিতে চান তারা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য’র ব্যাপারে আমরা একমত। তবে সেটা কোন ফরমেটে এবং কীভাবে হবে, তা এখনই বলা যাবে না। কাকে বাইরে রাখব, কাকে ভেতরে রাখব, সে ব্যাপারে এখনো আলোচনা হয়নি।’
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমরা কিছু জানা নেই। আমি কিছুই বলতে পারব না।’
এদিকে বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য গড়ার উদ্যোগের সঙ্গে জেএসডি’র সভাপতি আ স ম আব্দুর রব ও গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রবত চৌধুরী যুক্ত রয়েছেন বলে জানা গেছে। তারাই মূলত গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা ও ক্ষমতাসীন জোটে থাকা ‘সুবিধা বঞ্চিত’ শরিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষ করে চলছেন। সরকারবিরোধী অন্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও যোগাযোগ করছেন তারা।
জানতে চাইলে সুব্রত চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা, ক্ষমতাসীন জোটের সুবিধাবঞ্চিত শরিক দল এবং সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আমরা কথা বলছি। বিএনপির সম্মতিতেই এগুলো হচ্ছে। তবে গণফোরামের পক্ষ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, এ উদ্যোগের সঙ্গে জামায়াত থাকতে পারবে না।’
সারাবাংলা/এজেড/একে