ইতিহাস ঝংকৃত হলো অনন্য উদ্বোধনীতে
২০ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৭:১১
সত্যিই যেনো ইতিহাস ঝংকৃত হলো এই উদ্বোধনী পর্বে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় কাউন্সিলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি তেমনই ছিলো। কী ছিলো সেই উদ্বোধনীতে। এক কথায় বলতে হবে- ইতিহাস ছিলো। সে ইতিহাস গৌরবের, সে ইতিহাস হারানোর, সে ইতিহাস বেদনার, আবার সে এক উজ্জ্বলতার ইতিহাস। যা একটি রাজনৈতিক দলকে স্বর্ণময় করে রেখেছে।
২০ ডিসেম্বর (শুক্রবার) ঘড়ির কাঁটা মেনে ঠিক বিকেল তিনটায় যখন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে পৌঁছান তখন উদ্যান বলা চলে কানায় কানায় ভরে আছে। দলের জাতীয় কাউন্সিলে এসেছেন দলীয় নেতা-কর্মী আর কাউন্সিলররা। এসেছেন অভ্যাগত অতিথিরাও। তাদেরই হর্ষধ্বনি, হাততালি আর স্লোগানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা মঞ্চের দিকে দিকে এগিয়ে গেলেন। এরপর জাতীয় পতাকা উড়িয়ে কাউন্সিলের শুরু। মঞ্চে তখন শতাধিক সঙ্গীত শিল্পীর কণ্ঠে গান, আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি…। পাশে দাঁড়িয়ে দলীয় পতাকাটিও আকাশে ওড়ালেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এরপর শান্তির পায়রা আর আনন্দের বেলুন উড়িয়ে এক শান্তিপূর্ণ, আনন্দময় কাউন্সিলের প্রত্যাশা ছড়ালেন শেখ হাসিনা। তার পাশে দাঁড়িয়ে বেলুন ওড়ালেন সারা দেশ থেকে আসা জেলা কমিটিগুলোর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকেরা।এর পরপরই শুরু হলো উদ্বোধনী সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। সেখানেই ফুটে উঠলো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পথ চলার দীর্ঘ ইতিহাস। আর আওয়ামী লীগের ইতিহাস মানেই বাংলাদেশের ইতিহাস। সে ইতিহাসে স্থান পেলো একজন শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মলগ্ন। একজন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালির জন্মের অপেক্ষা ছিলো হাজার বছরের।
কণ্ঠে যখন সেই ঘোষণা, মঞ্চে তখন গান- ওই মহামানব আসে… আর একটু পরেই খোকা ঘুমোলো পাড়া জুড়োলো বর্গি এলো দেশে… কিন্তু সেই খোকা যে ঘুমিয়ে থাকার নয়। অচিরেই তার কণ্ঠে যে ঘোষিত হয়েছিলো- মানবোনা বন্ধনে, মানবো না শৃঙ্খলে তা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হলো নাচের পরিবেশনায়। শব্দ, ছন্দ, গান, কবিতা আর ডিজিটাল দৃশ্যায়নে ততক্ষণে মুগ্ধ সকলেই।
মঞ্চে ততক্ষণে বাজছে গান, জয় বাংলা, জয় বাংলা বইলারে মাঝি বাদাম দাও তুলিয়া…. আল্লার নাম লইয়া নৌকার কাছি দাও খুলিয়া…. মাঝি বঙ্গবন্ধু যে জয়বাংলা স্লোগানে নাওয়ের বাদাম তুলেছিলেন সেই কথাই স্মরণ করিয়ে দেওয়া হলো গানে ও নাচে। এরপর আসে মুক্তিযুদ্ধের ডাক। কণ্ঠে বাজে উষার দুয়ারে হানি আঘাত, আমরা আনিবো রাঙা প্রভাত আমরা টুটাবো তিমির রাত… সেই চেতনায় বাঙালিকে জাগিয়ে তুলতে মুজিবের সেই আহ্বান- সাড়ে সাত কোটি মুক্তির সেনা জাগো…। সত্যিই জেগে উঠেছিলো বাঙালির প্রাণ… ফলে তারা নামে যুদ্ধে। সে কথা জানাতেই মঞ্চে গাওয়া হলো- ওই চলে দলে দলে মুক্তির পতাকা তলে…। নয় মাসের সে মুক্তিযুদ্ধ ছিলো রক্তক্ষয়ী। পাকিস্তানি হানাদারদের আঘাত বুঝিয়ে তুলতে মঞ্চে বেজে উঠলো রিকয়েললেস রাইফেলের গুলির ভয়ঙ্কর শব্দ। তাতে মুক্তিসেনার প্রাণদান। সে প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বাধীনতা, আসে বিজয়। সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে ছেয়ে যায় গানের করুণ সুর… আমি দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা কারো দানে পাওয়া নয়, দাম দিছি প্রাণ লক্ষ কোটি জানা আছে জগৎময়।
সত্যিই বিশ্ব জানে ত্রিশ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে আমাদের এই স্বাধীনতা। আর সেই স্বাধীনতা অর্জিত হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই। তবে স্বাধীনতার স্থপতি তখন পাকিস্তানি কারাগারে বন্দি। তাই বিজয়ের পর দেশ ছিলো তারই অপেক্ষায়। এরপর ফিরে এলেন বঙ্গবন্ধু স্বপ্নের স্বাধীন বাংলায়। মঞ্চে সে ঐতিহাসিক দিনটির কথাই স্মরণ করা হলো কবিতায়- তিনি ফিরে এলেন মুকুলিত হলো রক্ত শিমুল।
এরপরের ইতিহাস দেশ গঠনের। জাতির জনকের হাতে গড়ে উঠতে শুরু করে দেশ। মঞ্চে উচ্চারিত হয় মাত্র চারটি বছরে দেশ গড়তে তার অবদানগুলোর কথা, স্বপ্নের সোনার বাংলার জন্য তার শত চেষ্টা আর উদ্যোগের কথা। যার মধ্য দিয়েই শুরু হয় নব জাগরণ। অর্জিত হতে শুরু করে সত্যিকারের বিজয়। মঞ্চে ঝংকৃত হয় গান- বিজয় নিশান উড়ছে ওই। বাংলার বিজয় নিশানকে বঙ্গবন্ধুই শুরু করেন বিশ্ব দরবারে নিয়ে যাওয়ার প্রয়াস।
কিন্তু সে প্রয়াস থামিয়ে দিতে ঘাতকের হাতে উঠে আসে রাইফেল। ১৫ আগস্ট জাতির জনককে হত্যা করা হয় তার পরিবারের সদস্যদেরসহ। এরপর এক মুজিব বিহীন বাংলাদেশ। কতটা করুণ হতে পারে সে সময়, কতটা অসহনীয় ছিলো সে সময়কাল তা উঠে আসে গানের করুণ সুরে- মুজিব তুমি বিনে স্বাধীন বাংলায় আছি এতিম হইয়া।
আর এরপর দেশ পতিত হয় বিকৃত এক সময়ে। ইতিহাস বিকৃতি, মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটতে থাকে। সেভাবেই চলে একুশটি বছর। এরপর একদিন শেখ হাসিনা, বঙ্গবন্ধু কন্যা, মঞ্চে বার বার উচ্চারিত হতে থাকে যার ধমণীতে শিরায় শিরায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্তই প্রবাহমান, তিনি ফিরে আসেন দেশে। দুর্বার আন্দোলনের ডাক দিলেন তিনি। শোককে শক্তিতে পরিণত করে ঘুরে দাঁড়ালো বাংলাদেশ।
আর এর পরের ইতিহাসে চড়াই উৎড়াই থাকলেও সে ইতিহাস উন্নয়নের কবিতা রচনার ইতিহাস। বাংলাদেশ আজ এগিয়ে চলেছে, বিশ্বের কাছে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সে কথাই বার বার উচ্চারিত হলো মঞ্চে। তাকে সম্বোধন করা হলো উন্নয়নের কবি, মানবতার মা হিসেবে।
গান-নাচ-আবৃতি-ঘোষকের কণ্ঠ জুড়ে এভাবেই চিত্রিত হলো বাংলাদেশ তথা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। যাতে ঝংকৃত হলো ইতিহাস।
সারাবাংলা/এমএম
২১তম ত্রি-বার্ষিক জাতীয় কাউন্সিল জাতীয় কাউন্সিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ