মহামারির পর ‘অবরুদ্ধ গণতন্ত্র’ মুক্তি পাবে: বিএনপি

ঢাকা: মহামারির পর ‘অবরুদ্ধ গণতন্ত্র’ মুক্তি পাবে— এমনটিই প্রত্যাশা বিএনপি নেতাদের। শনিবার (৩০ মে) বিকালে ভার্চুয়াল আলোচনায় দলটির নেতারা এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৩৯তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এ আলোচনা সভা আয়োজন করা হয়।

আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘মহামারির পর পরিবর্তন আসে, যুগের পরিবর্তন হয়, সভ্যতার পরিবর্তন হয়। আসুন, আমরা সবাই মিলে এই পরিবর্তনকে সামনে রেখে সামনের দিকে এগিয়ে যাই।’

‘এই পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রের মুক্তি হোক, মানুষের মুক্তি হোক, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পাক এবং পরিপূর্ণভাবে বাংলাদেশ মুক্তি পাক,’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ‘এই ভার্চুয়াল অনুষ্ঠান আমাদের কাছে একেবারেই নতুন। বিশেষ করে রাজনীতিবিদদের কাছে এটা একেবারেই নতুন। অনেকে আমাকে বলেছেন, সামনে দর্শক থাকবে না, আমরা কার সামনে বক্তব্য রাখব? সুতরাং পরিবর্তনটাকে ধরতে হবে।’

জিয়াউর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের সবচেয়ে বড় অবদান, তিনি এই জাতিকে একটি স্বতন্ত্র পরিচয় দিয়েছিলেন। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের সঙ্গে বাংলাদেশ ও জিয়াউর রহমান একাকার হয়ে গিয়েছিলেন। সেই কারণে জিয়া, জিয়ার দর্শন, জিয়ার ধানের শীষ বাংলাদেশের মানুষের কাছে আজও এত প্রিয়।’

তিনি বলেন, ‘আজ গণতন্ত্রবিহীন, মানবতাহীন নির্মম এই রাষ্ট্রে জিয়া অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। সংগ্রাম গণতন্ত্রের জন্য, সংগ্রাম স্বাধীনতার জন্য, সংগ্রাম মুক্তির জন্য-আজকের এই দিনে এটাই হোক আমাদের অঙ্গীকার।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের আদর্শকে এদেশে টিকিয়ে রাখতে হলে বিএনপিকে আরও শক্তিশালী হতে হবে। জনগণ এই বিএনপির পেছনে আছে। অতীতে যে ক’টা নির্বাচন হয়েছে, তার প্রত্যেকটাতে প্রমাণ হয়েছে, জনগণ যদি ভোট দিতে পারে তাহলে বিএনপি ক্ষমতায় বসবে।’

তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বকে কাবু করে ফেলেছে। এই ধরনের মহামারির পরে রাজনৈতিক, সামাজিক ও বিশ্ব ব্যবস্থায় পরিবর্তন আসে। আমি প্রত্যাশা করব, এই পরিবর্তনে বাংলাদেশে সত্যিকারভাবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে, অর্থনৈতিক মুক্তি আসবে, মাজিক দুরাবস্থা, লুটেরা ব্যবসা-বাণিজ্য দূর হবে। সেজন্য বিএনপির নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানাব, আপনারা ঐক্যবদ্ধ থাকেন।’

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এটা নিয়ে যারা বির্তক করছেন, তারা বির্তকের খাতিরে বির্তক করছেন। এই বির্তক তুলে জিয়াকে খাটো করা যাবে না, তাকে খাটো করে কোনো লাভ হবে না। বিএনপির ওপর শত নিপীড়ন-নির্যাতনের পরে শহীদ জিয়ার আদর্শে গড়া দল এখনো টিকে আছে, টিকে থাকবে। একে কেউ নিশ্চিহ্ন করতে পারবে না।’

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে এমন একটা বিশাল অপরাধ করে ফেলেছেন যে আওয়ামী লীগের অনেক কিছু ছিনতাই করে নিয়েছেন। জিয়াউর রহমান তো আওয়ামী লীগের কিছু ছিনতাই করেন নাই। তিনি দেশের মানুষের জন্য স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেটা ভোলানোর জন্য কত কথা কতভাবে বলছে তারা। টেলিভিশন সব দখল করে ফেলেছে। টেলিভিশনে আজ জিয়াউর রহমান সম্পর্কে একটা শব্দও উচ্চারণ করা হচ্ছে না।’

তিনি বলেন, ‘এটা জাতির দুর্ভাগ্য। যে জাতি বীরকে সম্মান দেয় না, সেই জাতিতে বীর জন্মায় না। যে জাতি চোরকে সম্মান দেয়, সেই জাতিতে চোর জন্মায়। আমরা প্রমাণ দেখলাম গত কয়েকদিনে। দেখলাম বিদেশ থেকে এলো এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, স্পেশাল প্লেন। অর্থাৎ চোরের কদর করছেন খুব ভালো করে। দেশের মানুষের জন্য নিজ দেশে আসা-যাওয়া বন্ধ। কিন্তু বিশেষ শ্রেণির বিদেশে যাওয়া আসা বন্ধ নাই।’

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায় বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের সবকিছুতে একটা দূরদর্শিতা ছিল। তিনি রাজনীতিতে এসে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশতে গিয়ে বলেছেন, আই উইল মেক পলিটিক্স ডিফিকাল্ট। এটার অপব্যাখ্যা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমান রাজনীতিতে পরিবর্তন এনেছেন। তিনি মাইলের পর মাইল জমির আইল দিয়ে হেঁটে মানুষের কাছে গেছেন। তখন অন্যান্য রাজনীতিবিদরা ঘরে বসে রাজনীতি করার সুযোগটা হারিয়ে ফেলেছেন।’

গয়েশ্বর বলেন, ‘আজ বন্দি গণতন্ত্র ছটফট করছে। সেই গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে। আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কঠোর পরিশ্রম করছে বিদেশের মাটিতে থেকেও। আমরা আশা করব, তার এই পরিশ্রম সফল হবে।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঞ্চালনায় আলোচনায় আরও অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম।

করোনাভাইরাস টপ নিউজ বিএনপি