মহাদুর্যোগেও স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতির মহোৎসব চলছে: রিজভী
৭ জুন ২০২০ ১৬:০১
ঢাকা: করোনা মহাদুর্যোগের মধ্যেও স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতির মহোৎসব চলছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
রোববার (৭ জুন) দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত ভিডিও কনফারেন্সে তিনি এ অভিযোগ করেন।
একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদের উদ্ধৃতি দিয়ে রিজভী বলেন, “বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে নেওয়া ‘করোনাভাইরাস মোকাবেলায় জরুরি সহায়তা’ প্রকল্পটির আওতায় এক লাখ সেফটি গগলস কেনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রতিটি সেফটি গগলসের দাম ধরা হয়েছে পাঁচ হাজার টাকা। মোট খরচ ধরা হয়েছে ৫০ কোটি টাকা। অথচ বর্তমান বাজারে প্রতিটি সেফটি গগলস বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে এক হাজার টাকায়।”
তিনি বলেন, ‘এই প্রকল্পের আওতায় মোট এক লাখ সাত হাজার ৬০০ পিপিই কেনা হবে। যার প্রতিটির খরচ ধরা হয়েছে চার হাজার ৭০০ টাকা। পিপিই কেনায় মোট খরচ হবে ৫০ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। অথচ বর্তমান বাজারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সব শর্ত মেনে ওষুধ অধিদপ্তরের সব শর্ত অনুসরণ করে বিভিন্ন কোম্পানির তৈরি ভালো মানের পিপিই বিক্রি হচ্ছে এক থেকে দুই হাজার টাকায়।’
‘এই প্রকল্পের আওতায় ৭৬ হাজার ৬০০ জোড়া বুট জুতা কেনা হবে। প্রতিটি জুতা’র খরচ দেখানো হয়েছে এক হাজার ৫০০ টাকা। এই খাতে খরচ ধরা হয়েছে ১১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। অথচ বর্তমান বাজার মূল্যে প্রতিটি বুট জুতা কেনা যাচ্ছে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায়’— বলেন রিজভী।
তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে করোনা মোকাবিলার প্রকল্পে স্বাস্থ্য সরঞ্জাম কেনার চেয়ে সফ্টওয়্যার, ওয়েবসাইট, সেমিনার, কনফারেন্স ও পরামর্শক খাতে তুলনামূলক বেশি খরচ হচ্ছে। গবেষণার জন্য খরচ দেখানো হয়েছে ২৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ইনোভেশন নামের আলাদা একটি খাত তৈরি করে সেখানে ৩৬ কোটি টাকা খরচ ধরা হয়েছে।’
রুহুল কবির রিজভী আরও বলেন, ‘চলমান করোনা সংকটের মধ্যে যেখানে সবকিছু স্থবির, সেখানে এই প্রকল্পে ভ্রমণ ব্যয় ধরা হয়েছে এক কোটি ২০ লাখ টাকা। মাত্র ৩০টা অডিও-ভিডিও ফিল্ম তৈরির খরচ দেখানো হয়েছে ১১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ৮০টা সেমিনার ও কনফারেন্স করে খরচ করা হবে দুই কোটি ৫০ লাখ টাকা। অস্বাভাবিক খরচ দেখানো হয়েছে ওয়েবসাইট উন্নয়ন খাতে। মাত্র চারটি ওয়েবসাইট উন্নয়ন করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের খরচ হবে ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা।’
মহামারির মধ্যেও সরকার সাগরচুরির মহাউল্লাসে মেতে উঠেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘পাঁচটি ডাটাবেইস তৈরিতে খরচ দেখানো হয়েছে ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। পাঁচটি কম্পিউটার সফটওয়্যার কেনায় খরচ ধরা হয়েছে ৫৫ কোটি টাকা। ৩০টি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের জন্য খরচ ধরা হয়েছে ৪৫ কোটি টাকা। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের আনা-নেওয়ার জন্য গাড়ি ভাড়া বাবদ খরচ দেখানো হয়েছে ৩৭ কোটি টাকা। অনাবাসিক ভবন নির্মাণে খরচ দেখানো হয়েছে ১৯০ কোটি টাকা। প্রকল্পে জিনিসপত্র ক্রয়ে যে দাম ধারা হয়েছে তা বাজার মূল্যের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি।’
রিজভী বলেন, ‘অবিচার-অনাচার আর দুর্নীতিকেই নীতি হিসেবে গ্রহণ করেছে সরকার। দুর্নীতি হয়ে গেছে তাদের মজ্জাগত। এই ভয়াল করোনা মহামারির মধ্যেও দুর্নীতি চলছে প্রকাশ্যে। এমন মহাদুর্যোগেও সরকারের দুর্নীতিবাজরা দুর্নীতির চিন্তায় মগ্ন। স্বাস্থ্যখাতকে লুটপাটের আখড়ায় পরিণত করেছে। সেখানে চলছে দুর্নীতির মহোৎসব।’