Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বার্তা একটাই— ঢাকঢোল নয়, মনোনয়ন পেতে হলে লাগবে গণভিত্তি

নৃপেন রায়, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১২ জুন ২০২১ ২৩:৫৫

ঢাকা: তিন সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে দলের মনোনয়প্রত্যাশী ছিলেন ৯৪ জন। সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে তিন আসনে তিন জনকে নৌকা প্রতীক দিয়েছে আওয়ামী লীগ। অবসান ঘটেছে জল্পনা-কল্পনার। ঢাকা-১৪ আসনে মিরপুরের শাহ আলী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আগা খান মিন্টু, সিলেট-৩ আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হাবিবুর রহমান আর কুমিল্লা-৫ আসনে বুড়িচং উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবুল হাসেম খানের ভাগ্যে মনোনয়নের শিঁকে ছিঁড়েছে। কেন্দ্র বলছে, তৃণমূলের রাজনীতিতে পরীক্ষিত এবং জনসমর্থন রয়েছে— এমন ব্যক্তিদেরই মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

আওয়ামী লীগের তিন প্রার্থীর মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ার পর দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানকও এ বিষয়টি জানিয়ে সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঢাকঢোল পিটিয়ে মনোনয়ন পাওয়া যাবে না। দলের জন্য ত্যাগ-তিতীক্ষা লাগবে, সততা লাগবে এবং গণভিত্তি লাগবে। এটি সারা বাংলাদেশের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জন্য একটি বার্তা। সবাইকে এটা বুঝতে হবে, নেত্রী (আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) এভাবেই ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করে থাকেন।’ রাজনীতি ফের রাজনীতিকদের কাছে ফিরে আসছে— এমন মন্তব্যও করেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (১২ জুন) সকালে গণভবনে ছিল আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা। দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যরা এই সভায় অংশ নেন। এই সভা থেকেই তিন উপনির্বাচনের প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত করা হয়। পরে বিকেলে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে মনোনীত প্রার্থীরা মনোনয়ন ফরম গ্রহণ করেন।

আরও পড়ুন- ঢাকায় মিন্টু, সিলেটে হাবিব, কুমিল্লায় হাসেম পেলেন নৌকার টিকিট

তিন সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে দলের প্রার্থিতা বেছে নেওয়ার বিষয়ে জাহাঙ্গীর কবির নানক সারাবাংলাকে বলেন, এবারের মনোনয়নে তৃণমূলের ত্যাগী, যারা আমাদের দুঃসময়-দুর্দিনে দলের জন্য অবদান রেখেছেন, সেই ত্যাগীদের নেতাদের মনোনয়ন দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। আমরা তাকে অভিনন্দন জানাই। এবারের মনোনয়ন আশা জাগানিয়া মনোনয়ন হয়েছে। সারাদেশের নেতাকর্মীরাদের মধ্যে একটি আশার সঞ্চার হয়েছে, একটি প্রত্যাশার জায়গা তৈরি হয়েছে যে রাজনীতি আবার রাজনীতির কাছে ফিরে আসছে। রাজনীতি আবার রাজনীতিকদের কাছে ফিরে আসছে।

তিন সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিল ৯৪ জন। এই সংখ্যা অনেক বেশি কি না এবং এই ৯৪ জনের মধ্য থেকে যাদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে— সার্বিক বিষয়টি কিভাবে দেখছেন?— এমন প্রশ্নের জবাবে নানক বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল। এই দলটিতে অনেক নেতা থাকাটাই স্বাভাবিক। কারণ আওয়ামী লীগের রাজনীতিটা হচ্ছে নেতা তৈরির কারখানা। কাজেই সেখানে নেতৃত্বের ভিড় থাকাটা খুবই স্বাভাবিক। বিশেষ করে সংসদীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভিড় বেশি হওয়াটাই স্বাভাবিক বলে আমার মনে হয়। কেননা, এই তিনটি আসনেই যারা এমপি ছিলেন, তারা দীর্ঘদিন ধরে এই দায়িত্বে ছিলেন। ফলে তারা থাকা অবস্থাতেও তাদের উত্তরসূরী হিসেবে যারা যোগ্য হিসেবে গড়ে উঠছিলেন, তাদের এগিয়ে আসার সুযোগটা তৈরি হয়েছে।

তিনি বলেন, কাজেই সংখ্যা দেখে খারাপ কিছু মনে করার সুযোগ নেই। যেমন— আমাদের পাবনায় ডিলু সাহেব (সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত শামসুর রহমান শরীফ) যখন ইন্তেকাল করলেন, দেখা গেল অনেকেই প্রার্থী হতে চাইছেন। কারণ ডিলু ভাই স্বাধীনতার পর থেকে দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকার এমপি ছিলেন। কিন্তু তাই বলে সেখানে যে অন্য কোনো নেতা তৈরি হননি, তা নয়। ডিলু ভাইয়ের মৃত্যুর পর তারা সবাই স্বাভাবিকভাবেই মনোনয়ন চেয়েছিলেন। এটা স্বাভাবিক।

তবে এত প্রত্যাশা থাকলেও আওয়ামী লীগে মনোনয়নের জন্য যে বার্তাটি প্রয়োজন, সেটি এবার আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সবাইকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন বলে মনে করেন জাহাঙ্গীর কবির নানক। তিনি বলেন, একটি কঠিন এবং সুন্দর বার্তা সারা বাংলাদেশকে দিয়েছেন নেত্রী। বার্তাটি হলো— রাজনীতিকদের রাজনীতিতে অবদান থাকলে পরে কোনো না কোনো সময় দল পুরস্কৃত করবেই। এই বার্তাটি সবার মধ্যে আশা জাগিয়েছে। এই তিনটি নির্বাচনি এলাকা বা এই তিনটি জেলা কেবল নয়, সারাদেশে আওয়ামী লীগ কর্মীরা এই সিদ্ধান্তে আনন্দিত ও পুলকিত। আমি নিজেও পুলকিত ও আনন্দিত।

এবারের উপনির্বাচন সামনে রেখে চলচ্চিত্র তারকা মনোয়ার হোসেন ডিপজল ও মিরপুরের রাজনীতিবিদ এখলাস উদ্দিন মোল্লা ঢাকা-১৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে চেয়েছিলেন। তবে দলের সদস্যপদ না থাকার কারণে তাদের কারও কাছেই ফরম বিক্রি করা হয়নি। এ বিষয়ে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, হ্যাঁ, তারা এসেছিলেন মনোনয়ন ফরম কেনার জন্য। কিন্তু ঘুরে চলে গেছেন। কারণ এই দলটি আওয়ামী লীগ। কেবল তারা দু’জন নন, সবার জন্যই এর মাধ্যমে একটি স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে— ইচ্ছা করলেই আওয়ামী লীগের ফরম কেনা যায় না। হঠাৎ করে এসেই আওয়ামী লীগের ফরম কেনা যায় না। ফরম কিনে দেখিয়ে বেড়াবে আমি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছি, এটাকে সার্টিফিকেট হিসেবে নিয়ে সবাইকে দেখাব— এই সুযোগ দেওয়া হয়নি দেওয়া হবে না।

বিএনপি উপনির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এক্ষেত্রে নির্বাচন কতটুকু প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক বা গ্রহণযোগ্য হবে বলে মনে করছেন?— এমন প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, বিএনপি দলটি খেই হারিয়ে ফেলেছে। রাজনীতির একটি নির্ধারিত ধারা আছে, তারা সেই ধারা হারিয়ে ফেলে হাবুডুবু খাচ্ছে। কাজেই রাজনীতিতে তারা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। তারা নেতৃত্বের শূন্যতায় আছে। তাদের নেতা যে কে, সেটিই তারা নির্ধারণ করতে পারছে না। এরকম একটি দল নির্বাচন করল কি করল না, তাতে কিছু আসে যায় না। আর নির্বাচন হবে বিধি অনুযায়ী। সব দলের জন্য নির্বাচন উন্মুক্ত। কে নির্বাচনে আসবে বা আসবে না, সেটা তাদের সিদ্ধান্ত। এর জন্য নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো সুযোগ নেই।

উপনির্বাচনে দল মনোনীত তিন প্রার্থীর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সবাইকে বার্তা দিয়েছে, দলের জন্য অবদান রাখলে তরুণরাও যথাযথ মূল্যায়ন পাবেন— এমনটিই মনে করেন নানক। তিনি বলেন, আমাদের দল যিনি পরিচালনা করেন, আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনার কাছে সব খবর আছে। আগা খান মিন্টু আছেন, তাকে দলের জন্য প্রয়োজন— সেটি তিনি ঠিক জানেন। এই যে সিলেটে হাবিবুর রহমানকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, তিনি তরুণ। কিন্তু লন্ডনের রাজনীতিতে খুব দুঃসসময়ের নেতা তিনি। এরপর দেশে ফিরে একযুগ মানুষের পাশে থেকেছেন। করোনার শুরু থেকে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে গিয়েছেন ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে। শেখ হাসিনা জানেন, তাকে প্রয়োজন সিলেটের জন্য। আবার কুমিল্লায় আবুল হাসেম খানের মতো অভিজ্ঞ ও জনদরদী একজন রাজনীতিবিদকে প্রয়োজন সংসদ সদস্য হিসেবে, সেটিও তিনি জানেন। ফলে এটিও সবার জন্য মেসেজ— ঢাকঢোল পিটিয়ে মনোনয়ন পাওয়া যাবে না। দলের জন্য ত্যাগ লাগবে, তিতীক্ষা লাগবে। সততা লাগবে এবং গণভিত্তি লাগবে।

সারাবাংলা/এনআর/টিআর

আওয়ামী লীগ উপনির্বাচন জাহাঙ্গীর কবির নানক সংসদীয় আসন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর