‘৫০ বছর পরেও সরকারি দল ও মানুষের মধ্যে বৈষম্য হচ্ছে’
১৪ ডিসেম্বর ২০২১ ১৯:২০
ঢাকা: স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও সরকারি দল ও সাধারণ মানুষের মধ্যে বৈষম্য তৈরি হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জিএম কাদের)।
মঙ্গলবার (১৪ ডিসেম্বর) শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার প্রাক্কালে দেশের বরেণ্য বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছিল। এই বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করার মাধ্যমে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
তিনি আরও বলেন, বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু করেছিল। সেটার উদ্দেশ্য ছিল বৈষম্য ও শোষণ থেকে মুক্তি। তবে স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও আমরা যেটা দেখতে পাচ্ছি— জাতি এখনো বৈষম্যের ঊর্ধ্বে উঠতে পারেনি। এখনো আমরা শোষণমুক্ত সমাজ গড়ে তুলতে পারিনি। এখনো বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্য হচ্ছে। বৈষম্য হচ্ছে সরকারি দল ও সাধারণ মানুষের মধ্যে, বৈষম্য হচ্ছে ধনী এবং দরিদ্রের মধ্যে। আমাদের মিলিয়ন এবং বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাওয়া যাচ্ছে। নথিপত্রসহ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে তার খবর প্রকাশ হচ্ছে।
জিএম কাদের আরও বলেন, আমাদের সেই সংগ্রামে এখনো শেষ হয়নি। সামনের দিকে সে রকম বাংলাদেশ দেখতে চাই, যেটার জন্য আমাদের বীর শহীদেরা তাদের জীবন উৎসর্গ করে গেছেন। বৈষম্যহীন এবং শোষণমুক্ত সমাজই আমাদের সামনের দিনের প্রত্যাশা। এ লক্ষ্যে আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাব।
শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় জিএম কাদেরের সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুর হক চুন্নু সহ দলের শতাধিক নেতাকর্মী।
এর আগে সকালে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এরপর সংসদে স্পিকারের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এদিন দুপুরের দিকে প্রধান বিচারপতি শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানান।
মঙ্গলবার সকাল থেকে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে হাজারো জনতান ঢল নামে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী দল ও সংগঠনের পক্ষ থেকে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
মুক্তিযুদ্ধের শেষ ভাগে দোসরদের সহযোগিতায় দেশের শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে পাক হানাদার বাহিনী। সেই থেকে ১৪ ডিসেম্বর দিনটিকে জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে, পালন করে আসছে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস।
১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পরিকল্পিতভাবে বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নিধনে মাঠে নামে। রাতের অন্ধকারে বাসা কিংবা কর্মস্থল থেকে চোখ বেঁধে নিয়ে তারা শিক্ষাবিদ, গবেষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, কবি ও সাহিত্যিকদের হত্যা করে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নিজেদের পরাজয় নিশ্চিত জেনেই পাকিস্তানি বাহিনী ওই নিধনযজ্ঞ চালায়। তাদের উদ্দেশ্য ছিল স্বাধীনতার পর যেন বাংলাদেশ যাতে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে- তা নিশ্চিত করা। এ হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্য ছিল বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করা। দেশের নানা জায়গায় হত্যাকাণ্ড চললেও মূল হত্যাযজ্ঞ চলে রাজধানীর রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে। শরীরে নিষ্ঠুর নির্যাতনের চিহ্নসহ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের লাশ পাওয়া যায় মিরপুর ও রায়েরবাজার এলাকায়। পরে তা বধ্যভূমি হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে। সেই থেকে ১৪ ডিসেম্বর দিনটিকে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে।
দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের লক্ষ্যে দিনব্যাপী জাতীয় কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক, সাংস্কৃতি ও পেশাজীবী সংগঠন নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিবসটি উপলক্ষে পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন।
সারাবাংলা/কেআইএফ/এনএস