Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নতুন মুক্তিযুদ্ধ শুরু, সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ুন— চট্টগ্রামে ফখরুল

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৭ মার্চ ২০২২ ১৯:২৭

চট্টগ্রাম ব্যুরো: বর্তমান সরকারকে পরাজিত করে বাংলাদেশ, গণতন্ত্র ও খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার জন্য চট্টগ্রাম থেকে নতুন মুক্তিযুদ্ধ শুরুর ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি দেশবাসীর উদ্দেশে বলেছেন, ১৯৭১ সালে এই চট্টগ্রাম থেকে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছিল। এই সরকারকে পরাজিত করে বাংলাদেশকে মুক্ত করার জন্য আজ থেকে নতুন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলো। আসুন, আমরা সবাই মিলে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ি।

বিজ্ঞাপন

রোববার (২৭ মার্চ) বিকেলে নগরীর পলোগ্রাউন্ড ময়দানে বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটি আয়োজিত এক সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন। বিএনপি এই সমাবেশকে ‘মুক্তিযুদ্ধের সূচনা সমাবেশ’ হিসেবে ব্যানারে উল্লেখ করেছে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘সময় শেষ। যতই ডিগবাজি খান, কোনো লাভ হবে না। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সরকার হঠাৎ ইউক্রেনের পক্ষে ভোট দিল। মার্কিন মন্ত্রী এসে ধমক দিল আর অমনি সরকার ডিগবাজি খেয়ে ইউক্রেনের পক্ষে ভোট দিয়ে দিল। আসলে এদের কোনো চরিত্র নেই। জনগণের প্রতি ভালোবাসা নেই। এদের পরাজিত করতে হবে। আমাদের সামনে আর কোনো বিকল্প নেই।’

‘১৮ কোটি মানুষের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় কারারুদ্ধ করে রেখেছে। তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্বাসিত করে রেখেছে। বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে, গুম করা হয়েছে। ‍খুন-গুমের অভিযোগে কয়েকজন কর্মকর্তাকে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এটা দেশের জন্য লজ্জার, জাতির জন্য লজ্জার। অথচ আওয়ামী লীগের নির্দেশেই এসব খুন-গুমের ঘটনা ঘটেছে। তীব্র গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকারের পতন ঘটাতে হবে। সব রাজনৈতিক, সকল মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকারের পতন ঘটাতে হবে’— বলে মির্জা ফখরুল।

এর আগে, দুপুরে বিএনপি মহাসচিব পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী একাত্তরের স্বাধীনতা ঘোষণার প্রচারকেন্দ্র কালুরঘাট বেতারকেন্দ্রে যাবার সময় নগরীর ষোলশহরে পুলিশ আটকে দেয়।

সমাবেশে পুলিশের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, ‘পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, আপনারা জনগণের বাহিনী। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় আপনাদের বেতন হয়। সাবধান হয়ে যান। অশালীন কথা বলবেন না, জনগণ আপনাদের ক্ষমা করবে না। আওয়ামী লীগ চিরদিন ক্ষমতায় থাকবে না। সেদিন জনগণ আপনাদের ক্ষমা করবে না। জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমানকে নিয়ে কটূক্তি করলে এদেশের মানুষ ক্ষমা করবে না।’

বিজ্ঞাপন

নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিকল্প নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এই আওয়ামী লীগ সুচতুরভাবে সকল গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে। বিচার বিভাগ, নির্বাহী বিভাগ, নির্বাচন কমিশন সকল প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দেশকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। এখন দিনের ভোট আগের রাতে হয়ে যায়। সরকার এখন বলছে সংবিধান অনুসারে নির্বাচন হবে। কোন সংবিধান? যে সংবিধান তারা নিজেদের ইচ্ছামতো করে কাটাছেঁড়া করে নিজেদের মতো বানিয়ে নিয়েছে, সেই সংবিধান অনুযায়ী নাকি নির্বাচন হবে। পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই।’

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই বীর চট্টলা থেকে বীরপুরুষ শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেছিলেন। স্বাধীনতার ৫০ বছর আমরা পার করেছি। এই ৫০ বছরে আওয়ামী লীগ যতবারই ক্ষমতায় এসেছে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করেছে। ইতিহাস থেকে জিয়াউর রহমানকে মুছে ফেলার চেষ্টা করেছে। কিন্তু মুছতে পারেনি। কারণ জিয়াউর রহমান আমাদের হৃদয়ে আছেন, এদেশের মানুষের হৃদয়ে আছেন।’

সরকার পরিকল্পিতভাবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই সরকার এক ব্যক্তিকেই মুক্তিযুদ্ধের সবকিছু বানাচ্ছে, যে ব্যক্তি তখন দেশেই ছিলেন না। দেশে ছিলেন জিয়াউর রহমান। মুক্তিযুদ্ধে যার যা অবদান, প্রত্যেককে প্রত্যেকের অবদান স্বীকার করতে হবে। শেখ মুজিবুর রহমান, মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানী, শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের অবদান স্বীকার করতে হবে। লাখো শহিদের কথাও স্বীকার করতে হবে, যারা স্বাধীনতার জন্য প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘স্বীকার করতে হবে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কথা। ১৯৭১ সালের মার্চে তিনি দুই সন্তান নিয়ে এই চট্টগ্রামে ক্যান্টনমেন্টে ছিলেন। তাকে রেখে জিয়াউর রহমান ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে বেরিয়ে যান এবং পরদিন কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করেন।’

ফখরুল বলেন, ‘আমরা যখন মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস বলি তখন আওয়ামী লীগের গায়ে জ্বালা ধরে। এরা শুধু মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে। অথচ মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসকে বিকৃত করে এরাই। তারাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করে জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।’

একই সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটির আহবায়ক খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমরা যেতে চেয়েছিলাম মেজর জিয়াউর রহমান যে কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ষোষণা করেছিলেন এবং সেই ঘোষণা শুনে বাংলাদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সেইস্থানে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের পেটুয়া বাহিনী আমাদের সেখানে যেতে দেয়নি। আমরা যদি যেতে পারতাম তাহলে সেখানে দাঁড়িয়ে দেশবাসীকে বলতাম যে, এই বেতারকেন্দ্র থেকেই মেজর জিয়া স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ ভয় পেয়ে আমাদের যেতে দেয়নি। স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন মেজর জিয়া। এদেশের মানুষকে আমরা একথা বললে আওয়ামী লীগ ভয়ে ভীত হয়ে যায়। এই ভয়ে তারা আমাদের কালুরঘাট বেতারকেন্দ্রে যেতে দেয়নি।’

তিনি বলেন, ‘যেখানে আওয়ামী লীগ ব্যর্থ হয়েছিল, আওয়ামী লীগের নেতারা ব্যর্থ হয়েছিলেন, সেখানে একজন মেজর জিয়া সফল হয়েছিলেন। স্বাধীনতার পর দেশ পরিচালনা করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ ব্যর্থ হয়েছিল, দুর্ভিক্ষ হয়েছিল, রক্ষীবাহিনী তৈরি করে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করেছিল। আর সেখানে বিএনপি সফল হয়েছিল, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সফল হয়েছিলেন।’

সরকারের সমালোচনা করে মোশাররফ বলেন, ‘২০০৮ সালের জরুরি সরকার তাদের নিজেদের স্বার্থে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসিয়েছিল। আওয়ামী লীগ এখন গায়ের জোরে ক্ষমতায় বসে আছে। ২০১৮ সালে দিনের ভোট রাতে করে তারা ক্ষমতা দখল করেছে। অবৈধ সরকারের নানা কর্মকাণ্ডে মানুষ আজ হতাশ, মানুষ দুর্দশার মধ্যে আছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ আজ দিশেহারা। এই সরকার দ্রব্যমূল্য কমাতে পারে না। কারণ তারা নিজেরাই সেই মুনাফা থেকে লুটপাটে ব্যস্ত। দেশের মূল সংকট আজ গণতন্ত্র। এই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হবে। ফ্যাসিস্ট সরকারকে ক্ষমতা থেকে হটাতে হবে। বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। তারেক রহমানকে দেশে এনে স্বাধীনভাবে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিতে হবে।’

সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটির চট্টগ্রাম বিভাগীয় আহ্বায়ক আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘মেজর জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে বিতর্কের কোনো সুযোগ নেই। সকল বিদেশি গণমাধ্যমে সেদিন শহিদ জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণা প্রকাশিত হয়েছিল। আওয়ামী লীগের নেতাদের বইয়েও মুক্তিযুদ্ধের সূচনার কথা লেখা আছে। বাংলাদেশের প্রত্যেক মানুষ জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা সেদিন শুনেছিলেন। আজ আমাদের কালুরঘাট বেতারকেন্দ্রে যেতে দেওয়া হয়নি। ঘোষণা দিচ্ছি, আমরা প্রত্যেক বছর চট্টগ্রামে ২৭ মার্চ পালন করব। আগামী বছর ২৭ মার্চ কালুরঘাট বেতারকেন্দ্রের সামনে পালন করব।’

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ শুধু মুক্তিযুদ্ধকে বেচাকেনা করে, তাদের কোনো ইতিহাস নেই। তাদের ইতিহাস পালিয়ে পাশের দেশে আশ্রয় নেওয়ার ইতিহাস। আর বিএনপির অনেক নেতা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থেকে মুক্তিযুদ্ধ করেছে। শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান চট্টগ্রাম থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করেছিলেন, এই সরকারের পতনের আন্দোলনের সূচনাও হবে এই চট্টগ্রাম থেকে।’

বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সদস্য সচিব ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীমের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন উদযাপন কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব আবদুস সালাম, বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, জয়নাল আবেদীন ফারুক ও গোলাম আকবর খোন্দকার, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন ও সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, কেন্দ্রীয় শ্রমবিষয়ক সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দিন, সাবেকমন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী এবং চট্টগ্রাম দক্ষিণের সভাপতি আবু সুফিয়ান প্রমুখ।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র বিএনপি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

কানপুরে প্রথম দিনে বৃষ্টির দাপট
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৬:৩৫

সম্পর্কিত খবর