রাজধানীতে রাজনৈতিক শক্তি দেখাল বিএনপি
৮ নভেম্বর ২০২৪ ১৯:৪৩
ঢাকা: ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর ‘বিরাজনীতিকরণ’ বা ‘মাইনাসু টু ফর্মুলার’ একটা শঙ্কা তৈরি হয়েছিল বৈকি! শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দৃশ্যপট থেকে আওয়ামী লীগের ‘নাই’ হয়ে যাওয়া, জোট সঙ্গীদের লাপাত্তা এবং ক্ষীণ শক্তির বিরোধীদল ‘জাতীয় পার্টির নাস্তানাবুদ’ অবস্থা সেই বিরাজনীতিকরণের পথ অনেকটা সহজ করে দিয়েছিল বলে মনে করা হচ্ছিল। অধিকন্তু বিএনপির মতো বড় রাজনৈতিক শক্তিকেও হিসাবের বাইরে রাখার চেষ্টা করছিল ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সমন্বয়কেরা। এমনকি রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তে ভেটো দেওয়ায় বিএনপির মহাসচিবসহ শীর্ষ নেতাদের কাছে কৈফিয়ত চেয়ে বসেন তারা।
এমন পরিস্থিতিতে নিজেদের শক্তিমত্তার একটা প্রদর্শনী প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল বিএনপির। সেটাই যেন করে দেখাল শুক্রবারের (৮ নভেম্বর) র্যালিতে!
‘৭ নভেম্বর বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত এ র্যালিতে ঠিক কত লাখ লোক অংশ নিয়েছিল, সেটা নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। তবে, স্মরণকালের ইতিহাসে রাজধানী ঢাকায় এত বড় র্যালি হয়নি বলে মনে করছে সাধারণ মানুষ। ছুটির দিনে যারা প্রয়োজনীয় কাজে বাইরে বের হয়েছিলেন, তারা হারে হারে টের পেয়েছেন রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে সৃষ্ট ‘দুর্ভোগ’ কতটা পীড়াদায়ক হয়!
আরও পড়ুন-
- নয়াপল্টনে বিএনপি নেতাকর্মীদের ঢল
- ‘সবাই সতর্ক থাকুন, আমি নিজেও সতর্ক থাকব’
- ‘র্যালিতে প্রমাণ করব বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক শক্তি বিএনপি’
শুক্রবার সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে খোলা ট্রাক, পিকআপ ভ্যান, বাসসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহনে করে হাজার হাজার লোক র্যালি শুরুর স্থান নয়াপল্টনে আসতে শুরু করে। সেখানে নির্মিত অস্থায়ী মঞ্চেকে কেন্দ্র করে লোকজন জড়ো হতে থাকে। দুপুর ১২ টা নাগাদ সমবেত জনতার ঢল নয়াপল্ট এবং এর আশপাশের এলাকা ছাড়িয়ে কাকরাইল, বিজয়নগর, সেগুনবাগিচা, মৎসভবন হয়ে শাহবাগ মোড় পর্যন্ত পৌঁছায়। র্যালি শুরুর আগেই পূর্বঘোষিত ‘রুট’ লোকজনে ভরপুর হয়ে যায়।
বিকেল পৌনে ৪ টায় নয়াপল্টনে অস্থায়ী মঞ্চ থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যখন র্যালির উদ্বোধন ঘোষণা করেন, তখন র্যালির অগ্রভাগ ঠিক কোথায় গিয়ে ঠেকেছে, সেটা নির্দিষ্ট করে বলার কোনো উপায় ছিল না। তবে, বিকেল ৪ টার দিকে মৎসভবন সংলগ্ন ফুটওভার ব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে দেখায় যায় র্যালির অগ্রভাগ শাহবাগ মোড় ছাড়িয়ে গেছে। এর আধাঘণ্টা পর বিকেল সাড়ে ৪ টার দিকে ইঞ্জনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন চত্বর থেকে জানা যায় র্যালির অগ্রভাগ বাংলামোটর অতিক্রম করেছে এবং এর পেছনের অংশ তখনও নয়াপল্টন অতিক্রম করেনি।
র্যালিতে ছাত্রদল, যুবদল, কৃষকদল, শ্রমিকদল, মহিলাদল, ওলামাদল, তাঁতীদল, মৎসজীবীদল, মুক্তিযোদ্ধাদল, ঢাকা মহানগর উত্তর, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির নেতারা আলাদা আলাদা ব্যানার, ফেস্টুন, টি-শার্ট, ক্যাপ, ব্যাজ, হেডার, পোস্টারসহ অংশ নেন। ৭ নভেম্বর বিপ্লব ও সংহতি দিবসের থিম সম্বলিত বিশেষ পোস্টারে জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি ছাড়াও ইউনিট নেতাদের ছবি শোভা পাচ্ছিল। বাদ্যযন্ত্র, সজ্জিত মোটরযান, ঘোড়ার গাড়িও ছিল বিএনপির এই র্যালিতে।
সংসদের বিরোধীদল অথবা রাজপথের প্রধান বিরোধীদলের ভূমিকায় থাকাকালে গত সাড়ে ১৫ বছর ‘বাধাহীন কর্মসূচি’ পালনের সুযোগ তেমনটি পায়নি বিএনপি। তারপরও আওয়ামী লীগের আমলে শত শত বড় কর্মসূচি পালন করেছে তারা। শুক্রবারের (০৮ নভেম্বর) ‘বাধাহীন র্যালি’ অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে বলে মনে করছেন দলটির নেতারা।
সভাপতির বক্তব্যে তো বিএনপির মহাসচিব বলেই দিয়েছেন, ‘আজকের এই র্যালি বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে। র্যালিতে আমরা প্রমাণ করব যে, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক শক্তি হচ্ছে বিএনপি।’
দলীয় সূত্রগুলো বলছে, বিদ্যমান পরিস্থিতে নিজেদের সাংগঠনিক শক্তির একটা প্রদর্শনের ব্যাপারে সিরিয়াস ছিল বিএনপি। এ কারণে অতীতের যে কোনো ধরনের কর্মসূচিরে চেয়ে শুক্রবারের র্যালির ব্যাপারে তারা বাড়তি গুরুত্ব আরোপ করে। বিপুল সংখ্যক লোকের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে রাজধানীর প্রত্যেকটা ইউনিটকে কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়। নির্দেশ অনুযায়ী ইউনিট নেতারা বিপুল সংখ্যক লোক হাজিরের ব্যাপারে সচেষ্ট হন এবং সেই মোতাবেক লাখ লাখ লোকের সমাগম ঘটাতে সমর্থ হন তারা।
র্যালিতে অংশ নেওয়া বিএনপির সহ-তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এইচএম সাইফ আলী খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘রাজনৈতিক শক্তির ওপর অরাজনৈতিক শক্তির আধিপত্যবিস্তারের সুযোগ বিএনপি দিতে চায় না। সে কারণে এবারের বিপ্লব ও সংহতি দিবসের র্যালিকে আমরা বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। যে লোকজন আপনারা দেখছেন, এটা বিএনপির সাংগঠনিক শক্তির কিঞ্চিত অংশ মাত্র। দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং গণতন্ত্র রক্ষার প্রয়োজন এ ধরনের শো-ডাউন (সাংগঠনিক শক্তির প্রদর্শন) কয়েক ঘণ্টার নোটিশেই করতে সক্ষম বিএনপি।’
জাসাস নেতা ডিএম ওমর সারাবাংলাকে বলেন, ‘কিছু দিন ধরেই আমরা দেখছিলাম একটা পক্ষ বিএনপকে আওয়ামী লীগের পাল্লায় ফেলে ওজন করছে। তারা বিএনপির কাছেও কৈফিয়ত তলব করতে শুরু করেছে। ৫ আগস্টের পরিবর্তিত পরিস্থিতে অরাজনৈতিক শক্তির উত্থানের দিকেও আমাদের নজর ছিল। সে কারণে আজকের র্যালিটার মাধ্যমে আমরা একটা বার্তা দিতে চেয়েছিলাম। সেটি হল, বিএনপিকে বাদ দিয়ে বা পাশ কাটিয়ে কেউ যদি কোনো কিছু করার চিন্তা করে, সেটা তাদের জন্য ব্যুমেরাং হবে। আশা করি সেই বার্তাটা আজ আমরা দিতে পেরেছি।’
অবশ্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও তার বক্তব্যেও ছোট্ট একটা বার্তা দিয়ে রেখেছেন। তিনি পরিষ্কার করে বলেছেন, ‘১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর ছিল বাংলাদেশের শত্রু-মিত্র চেনার দিন। ২০২৪ সালের ৭ নভেম্বর শত্রু চিহ্নিত করার দিন। আজকে রাজপথের সমাবেশ, মিছিল কারও বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় তোলার জন্য নয়, আজকের মিছিল দেশের স্বার্থরক্ষার মিছিল।’
সারাবাংলা/এজেড/এসআর