Sunday 04 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অনাহারে মৃত্যুর মুখোমুখি গাজার ৩৫০০ শিশু

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
৪ মে ২০২৫ ১৬:১৮ | আপডেট: ৪ মে ২০২৫ ১৭:১১

খাদ্য সংকটে গাজার অধিকাংশ মানুষ। ছবি: আলজাজিরা

গাজার সরকারি মিডিয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, গাজায় পাঁচ বছরের কম বয়সী ৩ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি শিশু অনাহারে ‘মৃত্যুর মুখোমুখি’ এবং প্রায় ২ লাখ ৯০ হাজার শিশু ‘মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে’। কারণ ইসরায়েল শিশু ফর্মুলা, পুষ্টিকর সম্পূরক ও সব ধরণের মানবিক সহায়তা প্রবেশে বাধা দিচ্ছে।

শনিবার (৩ মে) গাজার গণমাধ্যম দফতর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইসরায়েল গাজার প্রবেশপথগুলো বন্ধ করে রেখেছে। তারা শিশুদের ফর্মুলা দুধ ও পুষ্টিকর খাবারও ঢুকতে দিচ্ছে না। প্রয়োজনীয় খাবারের অভাবে শিশুমৃত্যুর হার বেড়ে চলেছে। এখন পর্যন্ত অপুষ্টির কারণে ৫৭টি শিশু মারা গছে।

বিজ্ঞাপন

কাতার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা জানিয়েছে, দুই মাসের বেশি সময় ধরে অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনের গাজা। ইসরায়েলের বাধার কারণে কোনো ধরনের ত্রাণসামগ্রী উপত্যকাটিতে ঢুকতে পারছে না। তার ওপর ইসরায়েলি সেনাদের হামলায় প্রতিদিন প্রাণ হারাচ্ছে শিশুরা। অপুষ্টির কারণেও বাড়ছে শিশুদের প্রাণহানির ঘটনা। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে পথে–ঘাটে খাবার খুঁজে বেড়াচ্ছে শিশুরা। গাজা শহরের পশ্চিমে রানতিসি হাসপাতালে অপুষ্টি ও পানিস্বল্পতার কারণে সালেহ আল-সাকাফি নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

গাজা উপত্যকার অক্সফামের খাদ্য নিরাপত্তা প্রধান মাহমুদ আলসাক্কা বলেন, গাজায় মানবিক সংস্থাগুলির সাহায্য মারাত্মকভাবে প্রয়োজন। মিশর ও জর্ডানে আমাদের অনেক ত্রাণ সামগ্রী ও জরুরি জিনিসপত্র আটকে আছে। আমরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছি না। এ কারণে এখানকার মানবিক পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। বারবার এ বিষয়ে সতর্ক সংকেত পাঠনোর পরও কোনো কাজ হয়নি।

বিজ্ঞাপন

আলসাক্কা বলেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত সমগ্র বিশ্ব গাজা উপত্যকার শিশুদের অনাহারে রাখতে অবদান রাখছে বা অংশগ্রহণ করছে। কেননা তারা এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। বিশ্ববাসীর কাছে শুধু একটিই বিকল্প আছে: হয়, কেবল ভয়াবহতা, গাজা থেকে আসা ছবিগুলি দেখে এড়িয়ে যাওয়া অথবা, পদক্ষেপ নেওয়া।’

গাজায় কর্মরত নরওয়েজিয়ান শরণার্থী সংস্থার ব্যবস্থাপক গ্যাভিন কেলিহের বলেছেন, কোনো পদক্ষেপ না নিলে গাজার হাজার হাজার মানুষ মারা যেতে পারে। অন্যান্য সাহায্য সংস্থাও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

রেডক্রস কমিটি সতর্ক করে বলেছে, গাজার মানবিক তৎপরতা পুরোপুরি ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। তাত্ক্ষণিক পদক্ষেপ না নিলে আরও বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে। তখন মানবিক কোনো প্রচেষ্টা তা ঠেকাতে পারবে না।

গাজায় এখন মানুষের জন্য খাবার খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। কয়েক দিন ধরে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে গাজার পরিস্থিতি সংকটের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি এবং জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা উপত্যকাটিতে খাদ্যসংকট নিয়ে সতর্কতা জারি করেছে।

গাজায় আন্তর্জাতিক সংস্থার খাবারের মজুত শেষ হয়ে গেছে। এ ছাড়া স্থানীয় সম্প্রদায়ের তৈরি রান্নাঘর থেকেও বাস্তুচ্যুত মানুষের জন্য খাবার প্রস্তুত করা যাচ্ছে না।

ধ্বংসস্তূপে ভর্তি সড়কে মানুষ উদ্‌ভ্রান্তের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে। গাজা শহরে শিশুরা আবর্জনা ঘেঁটে ঘেঁটে খাবার খুঁজছে। ফেলে দেওয়া ব্যবহৃত বোতলে খাবার পাওয়া যায় কি না, তা দেখছে তারা।

গাজায় এখন আর লাইনে দাঁড়িয়ে কাউকে খাবার নিতে দেখা যায় না। কারণ, মানুষের জন্য কোনো খাবার অবশিষ্ট নেই। আগে যতটুকু সংগ্রহ করতে পেরেছে, জীবন বাঁচাতে তা-ই খেতে হচ্ছে।

দুই মাসের বেশি সময় ধরে ইসরায়েলের অবরোধের কারণে রোগীদের জন্য প্রয়োজনীয় অধিকাংশ ওষুধ এবং জরুরি খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে সতর্কতা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন রাফার কুয়েতি হাসপাতালে পরিচালক সুহাইব আল-হামস। তিনি বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত, হাসপাতালটি ৭৫ শতাংশের বেশি প্রয়োজনীয় ওষুধের তীব্র সংকটে ভুগছে। এর বড় একটি অংশ জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, যা বিপুলসংখ্যক রোগীর জীবন হুমকির মুখে ফেলেছে।’

তিনি আরও বলেন, চিকিৎসাসেবা অব্যাহত রাখা হুমকির মুখে পড়েছে। কারণ, বর্তমানে যেসব ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম মজুত রয়েছে, তা দিয়ে এক সপ্তাহের বেশি সেবা দেওয়া যাবে না।

২০২৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েল গাজায় মানবিক সাহায্য সরবরাহে বাধা দিয়েছে ও দিচ্ছে এবং ২ মার্চ থেকে সম্পূর্ণ অবরোধ আরোপ করেছে। তার পর থেকে জাতিসংঘ বারবার সতর্ক করে দিয়েছে যে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কায় স্থলভাগে মানবিক বিপর্যয় ঘটছে এবং এই সপ্তাহে বলা হয়েছে যে গাজার শিশুদের মধ্যে তীব্র অপুষ্টিতে অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে।

সারাবাংলা/এমপি

অনাহার গাঁজা শিশু মৃত্যু

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর