জুলাই অভ্যুত্থানকারীদের ওপর ৯ মাসে ৩৬ হামলায় নিহত ১, আহত ৮৯

জুলাই অভ্যুত্থানকারীদের ওপর ৯ মাসে ৩৬ হামলা। ছবি কোলাজ: সারাবাংলা

ঢাকা: জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ও জড়িত ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের ওপর গত নয় মাসে ৩৬টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় একজন নিহত এবং ৮৯ জন আহত হয়েছেন।

প্রেস ইউনস্টিটিউট বাংলাদেশের (পিআইবি) ফ্যাক্টচেক প্রতিষ্ঠান ‘বাংলাফ্যাক্ট’ বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকার খবর বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য পেয়েছে। বাংলাফ্যাক্টের সিনিয়র বিশ্লেষক নাজমুন নাকিবের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সারাবাংলার হাতে এসেছে। বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

হামলার ঘটনার সবচেয়ে বেশি জড়িত থাকার অভিযোগ আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের বিরুদ্ধে। প্রায় ১৩টি ঘটনায় তাদের সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগ রয়েছে। আওয়ামী লীগের পরেই রয়েছে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা। তাদের বিরুদ্ধে নয়টি ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে একটি হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। নয়টি ঘটনায় কোনো হামলাকারীর পরিচয় বা অভিযুক্তের তথ্য নেই। এসব ঘটনায় হামলাকারীদের সন্ত্রাসী, দুর্বৃত্ত এবং ছিনতাইকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এমনকি দু’টি ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের নেতাকর্মীরাদের জড়িত থাকার অভিযোগও রয়েছে।

বাংলাফ্যাক্ট টিম জানিয়েছে, ৩৬টি ঘটনার মধ্যে ৩৩টি আন্দোলনে জড়িত ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সঙ্গে ঘটেছে এবং বাকি তিনটি জুলাইয়ে শহিদ পরিবারের সঙ্গে ঘটেছে। তবে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়নি অথবা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও গবেষণা সীমাবদ্ধতার কারণে ফলাফলে উঠে আসেনি এমন আরও ঘটনা থাকতে পারে উল্লেখ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

জুলাই অভ্যুত্থানে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহিদ জসিম হাওলাদারের ১৭ বছর বয়সী মেয়ে বাবার কবর জিয়ারত করতে যাওয়ার সময় এ বছরের ১৮ মার্চ ধর্ষণের শিকার হন। মানসিক নিপীড়ন সইতে না পেরে গত ২৬ এপ্রিল ঢাকার শেখেরটেকের ভাড়া বাসায় আত্মহত্যা করেন। ১৪ মার্চ কেরানীগঞ্জেই শহিদ সায়েমের কবর ভাঙচুর করা হয়, যেখানে শহিদের মা স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজুল ইসলামকে দায়ী করেন।

১৯ মার্চ নোয়াখালীর মাইজদীতে জুলাই আন্দোলনের আরেক শহিদ মাহমুদুল হাসান রিজভীর ছোটভাই ১৬-বছর-বয়সী শাহরিয়ার হাসানকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করে স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। গ্যাংটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক রয়েছে বলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নোয়াখালী জেলা সমন্বয়ক আরিফুল ইসলাম দাবি করেন।

২৬ এপ্রিল ঢাকার কেরানীগঞ্জে থাকা শহিদ ফয়জুল ইসলাম রাজনের কবর ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনায় শ্রমিকদলের একজন নেতা গ্রেফতার হয়েছেন। চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের এক কর্মীকে আটক করে পুলিশে দেওয়ার সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়কের ওপর হামলা করে দলটির নেতাকর্মীরা। এ সময় দু’জন সাংবাদিকও আহত হন।

গত বছরের ২১ ডিসেম্বর ময়মনসিংহের গৌরীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মোবারক হোসেন অভিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানোর পর উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ নোমানকে গ্রেফতার করা হয়। এ বছরের ১৬ এপ্রিল স্থানীয় বিরোধের জের ধরে চুয়াডাঙ্গার জীবন নগরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি মেহেদী হাসান খান বাবুকে মারধরের অভিযোগ রয়েছে গড়াইটুপি ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে।

বগুড়ায় ছাত্র অধিকার পরিষদের সভায় কথা কাটাকাটির জেরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা যুগ্ম আহ্বায়ক রিয়াদ হাসানের ওপর হামলা ও মারধরের অভিযোগ ওঠে জেলা বিএনপির এক নেতার ছেলের বিরুদ্ধে। এ বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি ঠাকুরগাঁওয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা সমন্বয়ক কবিরুল ইসলাম জয়কে কুপিয়ে জখম করে দুর্বৃত্তরা।

এছাড়াও, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্তর্বর্তী বিরোধের জের ধরে আরও দু’টি হামলার ঘটনা ঘটে খুলনা ও বরগুনাতে। ৩ জানুয়ারি খুলনার শিববাড়ি মোড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক গ্রুপের আক্রমণে আহত হন অন্য গ্রুপের আট শিক্ষার্থী। বরগুনাতেও সমন্বয়ক মীর নীলয়ের গ্রুপের হামলায় আহত হন সমন্বয়ক রেজাউল করিমসহ চারজন। এর বাইরে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের শিবির ট্যাগ দেওয়াকে কেন্দ্র করে একজন সমন্বয়ক এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রেমঘটিত কারণে ভুল বোঝাবুঝির জের ধরে আরেকজন সমন্বয়কের ওপর হামলা হয়েছে।

শেষ ঘটনাটি ঘটে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের সংঘর্ষে। চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রদলের সদস্য সচিব ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের সমন্বয়ক ওমর ফারুক সাগরের ওপর হামলা চালায় ছাত্রশিবিরের সদস্যরা।

এসব ছাড়াও যেসব ঘটনায় কোনো রাজনৈতিক দলের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি, সেসব ঘটনার ধরন ও পারিপার্শ্বিক আলামত দেখে হামলাগুলো রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে হতে পারে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

সারাবাংলা/কেকে/পিটিএম

আন্দোলন জুলাই বাংলাফ্যাক্ট হামলা