ঢাকা: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, খাদ্য নিরাপত্তায় জোর দিতে গিয়ে কৃষকের দিকটা সেভাবে দেখা হয় না। শহুরে মানুষের খাদ্য জোগান ও দাম নাগালে রাখতে আমদানির মাধ্যমে কৃষকের ক্ষতি করার চেষ্টা করা হয়। আমাদের খাদ্যে সার্বভৌমত্ব অর্জন করতে হবে, যাতে ভোক্তা ও কৃষক দুই পক্ষই উপকৃত হন। তাই ভোক্তার খাদ্য নিরাপত্তার পাশাপাশি কৃষকের স্বার্থ দেখতে হবে।
সোমবার (৫ মে) রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে বণিক বার্তার আয়োজনে ‘কৃষি, খাদ্যনিরাপত্তা ও কৃষকের ন্যায্যতা সম্মেলন ২০২৫’ এর প্রথম অধিবেশন ‘খাদ্য নিরাপত্তা ও কৃষকের ন্যায্যতা’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণের কথা বলা হচ্ছে। সেটা করতে গিয়ে কোনো ক্ষতি করছি কি না- সেটিও দেখতে হবে। কারণ এর কারণে গবাদিপশুর ব্যবহার কমে যাচ্ছে। এখানে ভোক্তার দিকটাও দেখতে হবে, তারা যেন নিরাপদ খাদ্য পায়। আবার কৃষকের দিকটাও দেখতে হবে যেন তারা উৎপাদন করে লাভবান হন। খাদ্য উৎপাদন করতে গিয়ে যদি প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংস করে ফেলি, তাহলে আবার সেটি খাদ্য পণ্য হবে কি? সেটা শিল্প পণ্য হয়ে যাবে। যদি কৃষি পণ্যকে শিল্প পণ্যের মত উৎপাদন করি তাহলে সেটি খাদ্য থাকবে না এবং সেখানে কৃষকও থাকবে না।
উপদেষ্টা বলেন, এক সময় কৃষির অধীনেই মৎস ও প্রাণী সম্পদ ছিল। এখন এগুলো আলাদা হয়েছে। পণ্যভিত্তিক কৃষকও আলাদা হয়েছে। মৎসের ক্ষেত্রে আমরা যদি দেখি, উন্মুক্ত জলাশয় থেকে মাছ আরোহণে বাংলাদেশ ভারতের পরই ২য় স্থানে আছে। অথচ হাওর, নদী-নালা ধ্বংস করছি আমরা। জলাশয়গুলোকে রক্ষা করতে চাচ্ছি যখন, তখন আবার দেখা যাচ্ছে- কৃষিতে ব্যবহৃত কীটনাশকে মাছ মারা যাচ্ছে।
হাওরে কীটনাশক ব্যবহার করা যাবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, হাওর মাছের অনেক বড় একটি উৎস। অনেক সময় আগাছা পরিষ্কার না করে কীটনাশক দিয়ে সেগুলো ধ্বংস করা হয়। এতে করে গরু ছাগলসহ অন্যান্য প্রাণীর ক্ষতি হচ্ছে। এমন ঘটনাও আমরা দেখেছি, জমির বাধা কপি খেয়ে ছাগল মরে গেছে। কারণ সেখানে কীটনাশক ছিল। সেই বাধা কপি কিন্তু মানুষও খাচ্ছে! ফলে এখানে একটা নীতি গ্রহণ করা দরকার। এসব বিষয়ে কৃষক পর্যায়ে সচেতনতা তৈরি করতে হবে।
বণিক বার্তার সম্পাদক ও প্রকাশক দেওয়ান হানিফ মাহমুদের সঞ্চালনায় সম্মেলনে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান। প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া, বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক মহাপরিচালক ড. জাহাঙ্গীর আলম, টিকে গ্রুপ ডিরেক্টর মোহাম্মদ মুস্তফা হায়দার, এসিআই এগ্রি বিজনেস ডিভিশনের প্রেসিডেন্ট ড. এফ ইচ আনসারী, ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ার গ্রপের ব্যবস্হাপনা পরিচালক কেএসএম মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।