রাজধানীতে পৃথক ঘটনায় ৪ জনের মৃত্যু
৬ মে ২০২৫ ১৬:২৪ | আপডেট: ৬ মে ২০২৫ ১৮:০৯
ঢাকা: রাজধানীতে পৃথক ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীসহ চারজনের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (৫ মে) দিবাগত রাতের বিভিন্ন সময়ে এদের মধ্যে তিনজনের মৃত্যু হয়। অপর একজনকে রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
মৃতরা হলেন- খিলগাঁওয়ে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী শিহাবুল ইসলাম (২৪), যাত্রাবাড়ী দনিয়া এ. কে স্কুলের প্রিয়ন্তী সরকার (১৪) উত্তর বাড্ডার গৃহিণী বিথী আক্তার (১৯) ও খিলগাঁওয়ের স্কুল শিক্ষার্থী সামিয়া আক্তার (১৪)
মৃত শিহাবুলের বোন উম্মে সায়মা জানান, তাদের বাড়ি সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার গোপীনাথপুর গ্রামে। বাবার নাম আবু সাঈদ সরকার। খিলগাঁও নন্দিপাড়া রসুলবাগ এলাকায় থাকে। সিহাবুল রাজধানীর ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের ষষ্ঠ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী শিহাবুল। স্কলারশিপ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে পড়ালেখা করতেন তিনি। তবে সম্প্রতি তার পড়ালেখা ভালো যাচ্ছিল না এবং তার স্কলারশিপটি থাকবে না বলে ধারণা করছিলেন তিনি। এই হতাশা থেকে সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে খিলগাঁও নন্দীপাড়া রসূলবাগ এলাকার বাসায় দরজা বন্ধ করে ফ্যানের সঙ্গে রশি পেচিয়ে গলায় ফাঁস দেন তিনি। কিছুক্ষণ পর পরিবারের সন্দেহ হলে তাকে ডাকাডাকি করে। তবে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে এক পর্যায়ে দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে মারা যান।
এদিকে মৃত প্রিয়ন্তী সরকারের বড় ভাই প্রীতম সরকার জানান, যাত্রাবাড়ী কাজলা মাতব্বর গলিতে তাদের নিজেদের বাড়ি। সেই বাসায় পরিবার নিয়ে থাকেন তারা। যাত্রাবাড়ী দনিয়া এ. কে স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী ছিল প্রিয়ন্তী। তবে পড়ালেখা নিয়ে উদাসীন ছিল। এজন্য সোমবার রাতে বাবা এবং ভাই তাকে কিছুটা বকাঝকা করেন। এই অভিমান নিয়ে রাত সাড়ে ১১টার দিকে রুমের দরজা বন্ধ করে ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেচিয়ে গলায় ফাঁস দেয় সে। টের পেয়ে রাত ১টার দিকে স্বজনরা দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। তবে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে জানান।
উত্তর বাড্ডা আব্দুল্লাহবাগ মোড়ে একটি বাড়ির দ্বিতীয় তলায় স্বামী এবং পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকতেন বিথী আক্তার। তার স্বামী আসাদুজ্জামান জানান, তার বাড়ি নাটোর আর বিথীর বাড়ি রাজশাহী। গত দেড় বছর আগে তাদের বিয়ে হয়। তাদের কোনো সন্তান নেই। আব্দুল্লাহবাগের এই বাসায় অসুস্থ্য বাবাকে অস্ত্রোপচারের পর সেবা করার জন্য গত সপ্তাহে তাকে গ্রাম থেকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। সোমবার রাতে পারিবারিক বিষয়াদি নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সামান্য ঝগড়া হয়। এক পর্যায়ে রাত সাড়ে ১১টার দিকে রুমের দরজা বন্ধ করে গ্রিলের সঙ্গে ওড়না পেচিয়ে গলায় ফাঁস দেন বিথী। তাকে ডাকাডাকি করলেও রুমের দরজা না খোলায় সন্দেহ হয়। পরে রুমের দরজা ভেঙে তাকে ঝুলন্ত অবস্থা থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মো. ফারুক জানান, তিনটি মরদেহ মর্গে রাখা হয়েছে। ঘটনাগুলো সংশ্লিষ্ট থানায় অবগত করা হয়েছে। বিষয়টি তারা তদন্ত করছে।
অপর দিকে মৃত সামিয়া আক্তারের ভাই সাগর শিকদার জানান, তাদের বাড়ি বাগেরহাট জেলার মোল্লারহাট উপজেলার শিংগাতি গ্রামে। বাবার নাম কবির শিকদার। বর্তমানে খিলগাঁও নবীনবাগ উত্তর গোড়ান এলাকার একটি বাসায় ভাড়া থাকেন। সামিয়া মেরাদিয়া হাই স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ছিল। জেদি প্রকৃতি ছিল সামিয়া। পড়াশোনার বিষয় নিয়ে গতকাল রাতে তার বাবা মা বকাঝকা করে। এই অভিমানে সে গতকাল সন্ধ্যার দিকে গলায় ফাঁস দেয়। দেখতে পেয়ে তাকে মুগদা মেডিকেলে নিয়ে গেলে মারা যায়।
খিলগাঁও থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) ইলিয়াস মাহমুদ জানান, খবর গতরাত ১০টার দিকে মুগদা মেডিকেল থেকে ওই শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়। ওই শিক্ষার্থীর পরিবার থেকে জানা গেছে, সে একটু জেদি প্রকৃতির ছিল। অভিমানে আত্মহত্যা করেছে।
সারাবাংলা/এসএসআর/এমপি