এনআইডি’র তথ্য ফাঁস ঠেকাতে ইসির নতুন নির্দেশনা
৬ মে ২০২৫ ২২:২০
ঢাকা: জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডির তথ্য ফাঁস রোধে এখন থেকে সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভাণ্ডারে রাখা নাগরিকদের পুরো তথ্য দেবে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। শুধুমাত্র সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো কোনো তথ্য যাচাই করতে চাইলে ‘ম্যাচ’ বা ‘নো ম্যাচ’ জানিয়ে দেবে ইসি।
মঙ্গলবার (৬ মে) জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ এস এম হুমায়ুন কবীর বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, এনআইডির ভিত্তিতে সরকারি-বেসরকারি ১৮৬টি প্রতিষ্ঠান নাগরিকদের বিভিন্ন ধরনের সেবা দিয়ে থাকে, যাদের ‘সার্ভিস পার্টনার’ বলা হয়ে থাকে। এর মধ্যে ব্যাংক, বিমাসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠান, মোবাইল অপারেটর, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয় রয়েছে।
অনুবিভাগের মহাপরিচালক বলেন, “আগামী ১৫ মে থেকে যেসব প্রতিষ্ঠান আমাদের কাছ থেকে নাগরিকদের তথ্য যাচাই করে নেয়, তাদের আমরা এখন থেকে পুরো তথ্য দেব না। তারা যে তথ্য যাচাই করতে চাইবে তা যদি আমাদের সার্ভারে মিলে যায়, তাহলে আমরা ‘ম্যাচ’ জানিয়ে দেব আর যদি না মেলে তাহলে আমরা ‘নো ম্যাচ’ জানিয়ে দেব। এতে নাগরিকদের তথ্য ও জাতীয় তথ্য ভাণ্ডার আরও সুরক্ষিত হবে।”
তিনি বলেন, “এক্ষেত্রে সার্ভিস পার্টনাদের আট ধরনের তথ্য দেব। সার্ভিস পার্টনার থেকে কোনো ব্যক্তির এনআইডি নম্বর, জন্ম তারিখ, নাম (বাংলা), নাম (ইংরেজি), পিতার নাম, মাতার নাম, স্বামী/স্ত্রীর নাম ও ঠিকানা (বিভাগ, জেলা, উপজেলা/থানা); এই আট ধরনের তথ্য চাইলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে কেবল ‘ম্যাচ’ অথবা ‘নো ম্যাচ’ আকারে জানিয়ে দেওয়া হবে।”
এদিকে, নির্দেশনা পাওয়ার পর সার্ভিস পার্টনারগুলোকে চিঠি দিচ্ছেন এনআইডি বৈধ ও সঠিকতা যাচাই শাখার সহাকারী পরিচালক মুহা. সরওয়ার হোসেন।
চিঠিতে বলা হচ্ছে, জাতীয় তথ্য ভাণ্ডারের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা, সাইবার হুমকি মোকাবিলা, তথ্যের অপব্যবহার রোধ ইত্যাদি বিবেচনায় এনআইডি যাচাইয়ের ক্ষেত্রে বিদ্যমান যাচাই পদ্ধতির পরিবর্তে ‘মিলেছে/মেলেনি’ পদ্ধতি চালুকরণের জন্য নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নীতিগত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এজন্য আগামী ১৫ মে’র মধ্যে প্রয়োজনী কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে।
উল্লেখ্য, এনআইডির তথ্য নির্ভরযোগ্যতা অর্জনের পর, গত এক দশকে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো নাগরিকের তথ্য যাচাই করতে ইসির সঙ্গে চুক্তি করে। সেবাগ্রহীতার পরিচয় নিশ্চিতে এসব প্রতিষ্ঠান ইসির সার্ভার থেকে তথ্য যাচাই করে থাকে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতি যাচাইয়ে দুই টাকা এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো পাঁচ টাকা করে ফি দিয়ে থাকে।
এই সেবাটি এনআইডি সার্ভার থেকে একটি নির্দিষ্ট লিংকের মাধ্যমে দেওয়া হয়। কোনো এনআইডি নম্বর সার্ভারে পাঠানো হলে, স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ছবিসহ তথ্য চলে আসে। এই সুযোগেই তথ্য ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে।
এর মাঝে, ২০২৩ সালের ৬ জুলাই মার্কিন ওয়েবসাইট টেকক্রাঞ্চ দাবি করে, বাংলাদেশের একটি সরকারি ওয়েবসাইট থেকে নাগরিকদের তথ্য ফাঁস হয়েছে। এতে নাগরিকের পুরো নাম, ফোন নম্বর, ইমেইল, ঠিকানা এবং এনআইডি নম্বর উন্মুক্ত ছিল বলে জানায় তারা।
ঘটনাটি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে ইসি। তারা দাবি করে, ইসির সার্ভারে কোনো ত্রুটি নেই এবং তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরবর্তী সময়ে তথ্য ফাঁসের সত্যতা সার্ভিস পার্টনারদের দিক থেকেই পাওয়া যায়।
চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি ইসি সচিব আখতার আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘পাঁচটি প্রতিষ্ঠান থেকে তথ্য ফাঁসের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেগুলো হলো- স্বাস্থ্য অধিদফতর, চট্টগ্রাম পোর্ট অথরিটি, মহিলাবিষয়ক অধিদফতর এবং অর্থমন্ত্রণালয়ের আইবাস। এ সব প্রতিষ্ঠানকে শোকজ করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইচ্ছাকৃত না অনিচ্ছাকৃত, তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে দেখা হবে, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান যতটুকু তথ্য নিচ্ছে, ততটুকু প্রয়োজন কি না।’
তাই সবকিছু পর্যালোচনার পর জাতীয় পরিচয়পত্রের বা এনআইডির তথ্য ফাঁস রোধে এখন থেকে ভাণ্ডার থেকে সেবাদাতা কোনো প্রতিষ্ঠানকে নাগরিকদের পুরো তথ্য না দেওয়ার এমন সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
সারাবাংলা/এনএল/পিটিএম