সুমি হত্যার বিচার চান পরিবারের সদস্যরা
৭ মে ২০২৫ ১৯:৫৬
ঢাকা: নারায়ণগঞ্জের পূর্বাচলে সুমি আক্তার নামে তিন সন্তানের মাকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে প্রবাসী স্বামী আবদুল আউয়ালের বিরুদ্ধে। হত্যায় সহযোগিতা করেছেন আউয়ালের মা জাহেরা বেগম, বোন সরু আক্তার ও ভাই শফিকুল আলম। হত্যা করার পর আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে। এমনকি পুলিশ হত্যার মামলা না দিয়ে জোর করে আত্মহত্যার মামলা করতে ভুক্তভোগীর পরিবারকে চাপ দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন হত্যার শিকার সুমির ভাই মো. বাপ্পী মিয়া।
বুধবার (৭ মে) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ভুক্তভোগীর পরিবারের পক্ষ থেকে আয়োজিত মানববন্ধনে এসব অভিযোগ করা হয়। তিন সন্তানের জননীকে হত্যার বিচারের দাবিতে আয়োজিত ওই মানববন্ধন থেকে এসব অভিযোগ তুলে সুবিচারের দাবি জানিয়েছে সুমির পরিবারের সদস্যরা।
সুমির ভাই বাপ্পী মিয়া বলেন, বিয়ের পর থেকে কখনো যৌতুকের জন্য, কখনো অপবাদ দিয়ে আমার বোনকে আউয়াল ও তার পরিবারের লোকজন (শাশুড়ি, ননদ ও দেবর) শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন। তাদের ঘরে তিনটি ছেলে সন্তান রয়েছে। আমারা গরিব হওয়ায় আর তিনটি সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে সুমি সকল অত্যাচার ও নির্যাতন সহ্য করে সংসার করেছেন। আমার বোনকে আউয়াল কখনো একটি বাটন ফোনও দেননি। অথচ অনেক আত্মীয়-স্বজনকে বিদেশ থেকে আনা দামি দামি জিনিস দিতেন আউয়াল। আউয়াল আসলে তার মা, বোন ও ভাইয়ের সহায়তায় প্রচুর মারধর করতো সুমিকে। তাদের বাড়ির পাশের লোকজন আমাদের সব বলতো।
তিনি বলেন, আমরা প্রতিবাদ করলে আউয়াল ও তার ভাই শফিকুল মিয়া (জমির দালালি) টাকার বিনিময়ে আমার বোন ও আমাদের পরিবারের সবাইকে মেরে ফেলার হুমকি দিতেন। একমাস আগে আউয়াল দেশে এসেছেন। কয়েকটি মোবাইল এনেছেন আত্মীয়দের জন্য। আমার বোন কখনো তার কাছে মোবাইল চায়নি। ২৪ মার্চ সকালে আমার বোনের সঙ্গে আউয়ালের কথা কাটাকাটি হয়। মোবাইল চুরির অপবাদ দেয় সুমিকে। সুমি প্রতিবাদ করলে আউয়াল তার মা, বোন ও ভাইয়ের সহায়তায় সুমিকে কয়েক দফা বেধড়ক মারধর করেন। সুমি অজ্ঞান হয়ে গেলে তাকে রুমে রেখে আউয়াল নামাজ পড়তে যায়। এর মধ্যে পাহারায় থাকে শাশুড়ি, ননদ ও দেবর। আউয়াল নামাজ থেকে এসে দেখে সুমি মারা গেছে। তখন আউয়াল তার মা, বোন ও ভাইয়ের সহায়তায় সুমিকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুঁলিয়ে রাখে।
তিনি আরও বলেন, বাড়ির আশপাশের লোকজন টের পেয়ে যায়। লোকজনের তোপের মুখে দেবর পালিয়ে গেলেও ননদকে লোকজন বেঁধে ও শাশুড়িকে আটকে রাখে। আর আউয়াল দ্রুত সুমিকে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যায়। হাসপাতালে গেলে চিকিৎসক বলে কয়েক ঘণ্টা আগেই সুমি মারা গেছে। এ সময় আউয়াল বেশ কিছু লোকজনকে ফোন করে হাসপাতালে জড়ো করেন। হাসপাতাল থেকে সুমিকে দ্রুত নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন আউয়াল। পরে আমরা এলাকাবাসীর সহায়তায় আউয়ালকে আটক করে তার বোন ও মাসহ পুলিশে দেয়। কিন্তু দেবর শফিকুল মিয়া পালিয়ে যায়।
বাপ্পী মিয়ার অভিযোগ করে বলেন, আমরা হত্যা মামলা করতে চাইলেও রূপগঞ্জ থানা পুলিশ মামলা নিতে চায়নি। উলটো স্থানীয় প্রভাবশালী ও নামধারী কয়েকজন রাজনীতিবিদের সহায়তায় রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) লিয়াকত আলী আমাদের হুমকি দেয়। ওসি ও প্রভাবশালীদের অনেক টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে স্বামী আবদুল আউয়াল। ওসি বলেন, ‘হত্যা মামলা নেওয়া যাবে না। আপনারা দু’পক্ষ বসে কিছু টাকা নিয়ে মিটমাট করে ফেলেন।’ আমরা হত্যা মামলা করার জন্য লিখে নিয়ে গেছি। কিন্তু ওসি আমাদের মামলা নেয়নি। হত্যার পরদিন রাত ১২টার পর ওসি নিজে ‘আত্মহত্যা’ করেছে বলে মামলা লিখে নিয়ে আমার মাকে সই করতে বলেন।
পুলিশ আবদুল আউয়াল, তার মা জাহেরা বেগম ও বোন সরু আক্তার গ্রেফতার করেছেন। বোন ও মা ইতোমধ্যে হাইকোর্ট থেকে জামিনে বের হয়েছেন। তবে আউয়াল জেলে রয়েছেন।
বাপ্পাী বলেন, তিনজনকে আটকের সময় বাড়ির আশপাশের লোকজন ও স্থানীয়রা ‘সুমিকে পিটিয়ে হত্যা’ করা হয়েছে বলে স্বাক্ষী দিয়েছেন। ২৫ মার্চ রাতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার তদন্ত করছেন রূপগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর। দেড়মাস পার হলেও তদন্ত কর্মকর্তা একদিনের জন্যও তদন্ত করতে আসেননি। এমনকি পুলিশ সুরুতহাল রিপোর্টও দিচ্ছেন না। মামলার আসামি সুমির দেবর শফিকুল প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও তাকে গ্রেফতার করছে না। শফিকুল নিজে ও এলাকার খারাপ প্রকৃতির লোকজন দিয়ে আমি ও আমার পরিবারের লোকজনকে প্রকাশ্যে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছেন। এ ছাড়া আউয়ালকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে জামিন করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আউয়াল জামিনে বের হয়ে দেশ থেকে পালিয়ে যাবে বলেও তার ভাই আমাদের জানিয়েছেন। আর সুমি হত্যার বিচার কখনো হবে না বলে বিভিন্ন মাধ্যমে আমাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। সুমি হত্যার সুষ্ঠু বিচার করতে আউয়ালের মা, বোন ও দেবরকে গ্রেফতার করে স্বামীসহ রিমান্ডে নিতে অন্তর্বর্তী সরকার ও পুলিশ প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি। একইসঙ্গে ন্যায় বিচারের স্বার্থে আউয়াল যেন জামিন নিয়ে বিদেশে পালিয়ে যেতে না পারে তার ব্যবস্থা নিতে পুলিশ প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ করছি।
মানববন্ধনে সুমির মা, বাবাসহ আত্মীয়-স্বজন উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপির যুগ্ম মহাসচিব উপাধ্যক্ষ নূরুজ্জামান হীরা, সবুজ আন্দোলনের সাংগঠনিক সম্পাদক মুরসালিন বাবু, লেবার পার্টির মহাসচিব আল মামুনসহ স্থানীয় লোকজন ও একটি মানবাধিকার সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত সবাই ব্যানার ও প্লেকার্ড হাতে সুমি হত্যার বিচার দাবি করেন।
সারাবাংলা/ইএইচটি/এইচআই