৭ দিনেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক
৭ মে ২০২৫ ২১:৫৪
ঢাকা: শিল্পনগরী নারায়ণগঞ্জে কোনো সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালেই ছিল না নবজাতক শিশুদের জন্য বিশেষায়িত কোনো স্বাস্থ্যসেবা। প্রিম্যাচিউর নবজাতক, কম ওজন ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে জন্ম নেওয়া ও জন্ডিসে আক্রান্ত নবজাতকের চিকিৎসায় বিশেষ পরিচর্যার জন্য রোগীদের নিয়ে যেতো রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে।
সম্প্রতি বিষয়টি নজরে আসে সারাদেশে মানবিক ডিসি হিসেবে পরিচিত নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞার। তিনি প্রতিশ্রুতি দেন আগামী সাত দিনের মধ্যেই নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নবজাতক শিশুদের জন্য বিশেষায়িত এই স্বাস্থ্যসেবা চালু করার।
জেলা প্রশাসক তার দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বুধবার (৭ মে) স্থানীয়ভাবে ভিক্টোরিয়া হাসপাতাল নামে পরিচিত নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ইতিহাসে প্রথমবারের মত চার শয্যা সুবিধাসম্পন্ন স্পেশাল কেয়ার নিউবোর্ন ইউনিট (এসসিএএনইউ) চালু করলেন। স্থানীয় সেবাপ্রার্থীদের উপস্থিতিতে একটি অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জেলা প্রশাসক সকালে ইউনিটটি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সিভিল সার্জন ডা. এ এফ এম মুশিউর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আলমগীর হুসাইন, আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. জহিরুল ইসলামসহ হাসপাতালের অন্যান্য কর্মকর্তারা।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, এসসিএএনইউ ইউনিট চালুকরণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অনেক আগেই বিভিন্ন সরঞ্জামাদি সরবরাহ করা হলেও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও উদ্যাগের অভাবে এটি চালু করা যায়নি। ফলে নারায়নগঞ্জে বিভিন্ন জটিলতা নিয়ে জন্ম নেওয়া শিশু ও তাদের অভিভাবকদের দুর্ভোগের সীমা ছিল না।
জেলা প্রশাসক এ বিষয়টি অবগত হয়ে চালুকরণে দ্রুত উদ্যোগ নেন এবং প্রয়োজনীয় অবকাঠামো সুবিধা নিশ্চিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা পেয়েই অতি দ্রুততার সঙ্গে সব ধরনের প্রস্তুতি কার্যক্রম নেওয়া হয়। নবজাতকদের জন্য ইউনিটটি পরিচালনায় ডেডিকেটেড টিম গঠনে লোকবল নিয়োজিত করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেন জেলা প্রশাসক।
এই বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. জহিরুল ইসলাম বলেন, যন্ত্রপাতি থাকলেও অবকাঠামো, নিরবিচ্ছিন্ন বিদুৎ সরবরাহসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে আগে নবজাতকদের জন্য বিশেষায়িত সেবাটি চালু করা যায়নি। কিন্তু জেলা প্রশাসক মহোদয়ের ব্যাক্তিগত হস্তক্ষেপে বিদ্যমান সব জটিলতা দূর করে আজ বিশেষায়িত ইউনিটটি চালু হলো।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন আর প্রিম্যাচিউর নবজাতক, কম ওজন ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে জন্ম নেওয়া ও জন্ডিসে আক্রান্ত নবজাতকের চিকিৎসায় বিশেষ পরিচর্যার জন্য রোগীদের নিয়ে রাজধানীতে যেতে হবে না।
জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশনায় আমরা অতি দ্রুতই কিডনি রোগীদের জন্য ডায়ালাইসিস সেবাও চালু করার চেষ্টা করছি।
নারায়ণগঞ্জ জেলার সিভিল সার্জন ডা. এ এফ এম মুশিউর রহমান বলেন, এই বিশেষ ইউনিট চালু হওয়ায় নবজাতকদের চিকিৎসা সেবা আরও সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী হবে।
তিনি আরও বলেন, জেলা প্রশাসক মহোদয় নিজে উদ্যোগী হয়ে গণপুর্ত বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেন যাতে আমরা নবজাতক শিশুদের বিশেষায়িত সেবা কার্যক্রম শুরু করতে পারি। জেলা প্রশাসক মহোদয় আমাদেরকে দ্রুততম সময়ে কিডনি রোগীদের জন্য ডায়ালাইসিস সেবাও শুরুর অনুরোধ করেছেন। এ ক্ষেত্রেও তিনি সার্বিক সহয়তার আশ্বাস দিয়েছেন।
জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম বলেন, নবজাতকের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে এই আইসিইউ ইউনিট একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এটি নারায়ণগঞ্জ জেলার স্বাস্থ্য খাতে একটি মাইলফলক।
প্রসঙ্গত, গত ২৯ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞার সভাপতিত্বে নারায়ণগঞ্জের স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়ন নিয়ে এক সভার আয়োজন করা হয়। এই সভায় জেলা প্রশাসক কথা দিয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জবাসীর সুবিধার্থে আগামী ৭ দিনের মধ্যে নিবিড় পরিচর্যা ইউনিট (আইসিইউ) চালু করা হবে।
সারাবাংলা/ইউজ/এইচআই