Thursday 08 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

গণঅভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা
শিক্ষক-কর্মকর্তাসহ ৭১ জনের বিরুদ্ধে বেরোবি প্রশাসনের মামলা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
৭ মে ২০২৫ ২৩:৩৩ | আপডেট: ৮ মে ২০২৫ ০৯:৩২

রংপুর: জুলাই অভ্যুত্থানে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ওপর হামলা ও সহিংসতা ঘটনার জেরে শিক্ষক, কর্মকর্তা নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাসহ ৭১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। মামলার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেসপাস শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার মোকতারুল ইসলামকে (৪০) গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

বুধবার (৭ মে) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মো. হারুন অর রশীদ বাদী হয়ে বিস্ফোরক দ্রব্যাদি নিয়ন্ত্রণ আইনে রংপুর মহানগর তাজহাট থানায় এ মামলা করেন। মামলায় দণ্ডবিধির ১৪৩, ১৪৭, ৩২৩, ৩২৪, ৩২৬, ৩০৭, ১১৪, ৩৪ ধারা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের ৩-ক ধারার উল্লেখ করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

মামলায় অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন ৩৬ জন শিক্ষার্থী, ২ জন শিক্ষক, ১৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের স্থানীয় নেতাকর্মীসহ আরও অনেকে। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও ৮০-১০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, মামলায় যে দুজন শিক্ষককে আসামি করা হয়েছে তারা হলেন গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান ও লোক প্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন নীলের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মণ্ডল। পুলিশের গুলিতে গত ১৬ জুলাই যেদিন আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেদিন এই দুই শিক্ষককে হেলমেট পড়ে শিক্ষার্থীদের ইট-পাটকেল ছুঁড়তে দেখা যায়।

এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে নিরাপত্তা শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার হাফিজুর রহমান, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী ও মহানগর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আমির হোসেন আমু, সেকশন অফিসার মনিরুজ্জামান পলাশ, উপ রেজিস্ট্রার (নিরাপত্তা শাখা) তৌহিদুল ইসলাম জনি, প্রক্টর অফিসের সহকারী রেজিস্ট্রার রাফিউল হাসান রাসেল, বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টাররোলের কর্মচারী নুরনবী, নিরাপত্তা শাখার কর্মচারী নূর আলম, সহকারী রেজিস্ট্রার (ডেসপাস শাখা) মোকতারুল ইসলাম, সেমিনার সহকারী ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রী আশিকুন্নাহার টুকটুকি, উপ রেজিস্ট্রার (সমাজ বিজ্ঞান বিভাগ) মোছা. মাহবুবা আক্তার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের কর্মচারী মাহবুবার বহমান (বাবু), তৃতীয় শ্রেণী কর্মচারী ইউনিয়ন সভাপতি মো. আপেল এবং প্রক্টর অফিসের কর্মকর্তা ও সাবেক ভিসির পিএ আবুল কালাম আজাদকে মামলায় আসামি করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

মামলায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাদের মধ্যে বেরোবি শাখার সভাপতি পোমেল বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান শামিম, যুগ্ম সম্পাদক মাসুদুল হাসান, সাংগঠনিক সম্পাদক ধনঞ্জয় কুমার দাস টগর, দফতর সম্পাদক বাবুল হোসেন, সহসভাপতি গ্লোরিয়াস ফজলে বারী, আখতার হোসেন, শাহীন ইসলাম, সাখাওয়াত হোসেন, প্রচার সম্পাদক সাব্বির হোসেন রিয়ান, সাহিত্য সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় রায়, উপপ্রচার সম্পাদক মোশাররফ হোসেন, সহ-সভাপতি আব্দুল্লাহ আল নোমান, উপ-সমাজসেবা সম্পাদক মো. রিফাত হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফরহাদ হোসেন এলিট, সহ-সভাপতি আবির শাহরিয়ার অনিক, উদ্যোক্তা ও উদ্ভাবনবিষয়ক সম্পাদক আরিফুজ্জামান ইমন, মাদরাসাবিষয়ক সম্পাদক গাজিউর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইমরান চৌধুরী আকাশ, সাংগঠনিক সম্পাদক সেজান আহম্মেদ ওরফে আরিফ, পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক আরাফাত রহমান আবির, উপ-স্কুলবিষয়ক সম্পাদক শোয়াইবুল ইসলাম ওরফে সাল্লু, সামাজিক যোগাযোগবিষয়ক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল রায়হান, গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক অমিত হাসান ওরফে অমিত, উপ-অটিজমবিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান হৃদয়, সাংগঠনিক সম্পাদক পিপাস আলী, উপ-ক্রিড়া সম্পাদক মানিক চন্দ্র সেন, ছাত্রলীগ নেতা আরিফ হোসেন, ক্রিয়া সম্পাদক সিয়াম আরাফাত, ছাত্রলীগ কর্মী নাফিউল ইসলাম, আবু সালেহ নাহিদ এবং বায়োজিদ মোস্তাফিসহ ৩৬ জনকে আসামি করা হয়েছে।

এদিকে, মামলায় স্থানীয় রাজনীতিকদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন তাজহাট থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জিকরুল মাহবুব শোভন, মহানগর যুবলীগ কর্মী শামিম হাসান শীটন, শাহারিয়ার নয়ন, আহসান হাবিব লালন, আল আমিন এবং ছাত্রলীগ কর্মী সায়ির বিন আশরাফ আনন্দ।

মামলার বাদী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মো. হারুন অর রশীদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা বোর্ডের সিদ্ধান্ত এবং উপাচার্যের অনুমতিক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছি। ঘটনার সময় আরও অনেকেই জড়িত ছিলেন। তাই মামলায় অজ্ঞাতনামা হিসেবে আরও ৮০ থেকে ১০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। ছবি ও ভিডিও ফুটেজ দেখে তদন্তের মাধ্যমে তাদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মামলার সংক্ষিপ্ত এজাহারে বলা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আসামিরা হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমণ ও ধ্বংসযজ্ঞ সংঘটিত করেন। ১১ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু সাঈদের ওপর আক্রমণ করা হয়। ১৬ জুলাই পুলিশ ও বহিরাগত অজ্ঞাতনামা ৮০ থেকে ১০০ জন আসামি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি, লাঠিসোঁটা, রড, ছুরি, রামদা, কিরিচসহ আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে হামলা করেন। পুলিশও নিরস্ত্র ছাত্রদের হত্যার উদ্দেশ্যে উপর্যুপরি গুলিবর্ষণ করে।

তাজহাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহ আলম সরদার বলেন, আসামির তালিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, পুলিশ সদস্য, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা আছেন। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা ৮০ থেকে ১০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার ৪৬ নম্বর আসামি সহকারী রেজিস্ট্রার (ডেসপাস শাখা) মোকতারুল ইসলামকে বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুলিশ ফাঁড়ির সামনে থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

সারাবাংলা/এইচআই

২৪এর গণঅভ্যুত্থান জুলাই অভ্যুত্থান বেরোবি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর