‘মানবিক করিডরের নামে কোনো কিছু জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া যাবে না’
৮ মে ২০২৫ ২৩:৪৪
ঢাকা: ‘মানবিক করিডরের নামে কোনো কিছু জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া যাবে না’ বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৃহস্পতিবার (৮ মে) বিকেলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে আয়োজিত এক স্মরণ সভায় তিনি এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। প্রয়াত অ্যাডভোকেট এজে মোহাম্মদ আলীর স্মরণে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম এ স্মরণ সভা আয়োজন করে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখন দেখা যাচ্ছে তাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত যিনি আছেন (নিরাপত্তা উপদেষ্টা) তিনি অনেক কথা বলছেন। তার মধ্যে গতকাল একটা কথা বলেছেন যে, যেই থাক মিয়ানমারের পাশে তার সঙ্গে আমাদের আলোচনা করতে হবে। তো তার সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন, জনগণের সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন না।’
‘আলোচনাটা করেন। আমরা তো দেশের স্বার্থে, স্বাধীনতার স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে, স্বাধীনতা রক্ষার স্বার্থে আমরা কখনোই তো বাধা নই, বরঞ্চ আমরা সামনে এসে দাঁড়াব, বরঞ্চ লড়াইটা আমরাই করি। সেই জায়গায় দয়া করে অনুরোধ করব, বাংলাদেশে মানুষকে আন্ডার স্টিমেট করবেন না। এখানে কিছু পণ্ডিত-একামেডিশিয়ানস সবাই বসে যদি মনে করেন যে ইম্পোজ করে দিতে পারবে কোনো কিছু, যেটা এ দেশের মানুষের পক্ষে যাবে না, সেটা কোনো দিনই করতে পারবেন না’— বলেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘আমি অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য চাই, বারবার বলছি। আমরাই তাদেরকে বসিয়েছে। কিন্তু এমন কোনো কাজ করবেন না, যা জাতির বিরুদ্ধে যাবে, বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে যাবে। এমন কোনো কাজ করবেন না যেটা বাংলাদেশের মানুষের জন্য উপযোগী হবে না।’
মির্জা ফখরুল, ‘আজকে এমন কাজ করছেন যে, বাংলাদেশের মানুষ ক্লিয়ার না। প্যাসেজ দেবেন, করিডর দেবেন সেই করিডর দেবেন তা নিয়ে মানুষের সঙ্গে আলাপই করছেন না, কথা বলছেন না। আপনি করিডর দিয়ে দিচ্ছেন আরাকানে যে আরাকান আর্মি গর্ভমেন্টই নেই। করিডর কী দেবেন? যদি প্রয়োজন হয় এক‘শ বার দেবেন, মানবতাকে যদি সাহায্য করতে হয়, সাহায্য করব। কিন্তু আপনি তো জনগণকে নিয়েই সেটা করবেন। আপনি দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে করবেন, কোনো আলোচনা নাই।’
খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গত পরশু যখন লন্ডন থেকে ফিরে এসেছেন এবং তার স্বাস্থ্যে মধ্যে তার চেহারার মধ্যে নতুন করে আমরা আলো দেখতে পেয়েছি, গোটা জাতি আজকে নতুন করে আলো পেয়েছে। এই সময়টাকে কাঁধে নিয়ে আমাদেরকে সামনের দিকে এগুতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘প্রমাণিত হয়েছে যে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এ দেশের সবচাইতে জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতা, প্রমাণিত হয়েছে যে বিএনপি হচ্ছে সবচাইতে বড় গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। প্রমাণিত হয়েছে বিএনপির হাতেই তারেক রহমানের নেতৃত্বে এ দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র একমাত্র নিরাপদ।’
অনির্দিষ্টাকালের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার থাকবে?— এমন প্রশ্ন তুলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখন আপনার সংস্কার করতে হবে, আমরা তো সংস্কার চেয়েছি সব সময়। এখন অনেকে বলছে যে, আগে সংস্কার হবে তারপরে নির্বাচন। তো সংস্কার যে একটা চলমান প্রক্রিয়া। সংস্কার হতে হতে আপনার যদি ৫ বছর ১০ বছর লাগে, তাহলে নির্বাচন ১০ বছর হবে না। আর ১০ বছর ধরে ফ্যাসিবাদী আমলাদের হাতেই দেশ চলবে। এখন তো আমরা ফ্যাসিবাদী আমলাদের দ্বারাই পরিচালিত হচ্ছি। সেক্রেটারিয়েটের আমলারা ৯০ শতাংশ ফ্যাসিবাদের দোসর। তা হলে এই অনির্দিষ্টকালের জন্য একটা অনির্দিষ্ট অনিশ্চিত একটা অন্তর্বর্তী সরকার এটা কি দেশের মানুষের জন্য খুব উপকারে আসবে?’
তিনি বলেন, ‘‘আমাদের অন্তর্বর্তী সরকারকে আপনাদের মাধ্যমে কয়েকটা প্রশ্ন করতে চাই, আপনারা অনেক পরিবর্তন আনছেন। বলছেন যে, ফুট স্টেপ রেখে যাবেন। আপনার কী কী পরিবর্তন হয়েছে? আমি আজকে পত্রিকায় দেখলাম, আমাদের পোশাক শিল্পগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আমেরিকার যে, ট্যারিফ পলিসি দিয়েছে তাতে করে নতুন করে বিনিয়োগ করছেন না, বিনিয়োগকারীরা বলছেন, একটা গণতান্ত্রিক সরকার ছাড়া আমরা কোনো নতুন বিনিয়োগ, পরিষ্কার করে বলছেন দেশের বাইরের এবং দেশের সকলের। ইনফ্লুয়েন্স তো কমেনি। ব্যাংকের অবস্থা তো ভালো হয়নি।”
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গত ১৫ বছর যারা ব্যবসা করতে পারেনি, ফ্যাসিস্ট সরকার তাদের ব্যবসা করতে দেয়নি, ব্যাংকের ঋণ বন্ধ করে দিয়েছে, বিভিন্ন সমস্যা তৈরি করেছে, এই সরকার এখন পর্যন্ত তাদের জন্য বিশেষ কোনো ব্যবস্থা তৈরি করতে পারেনি। উপরন্ত সব ব্যাংক একইভাবে দেখা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘শিক্ষা ব্যবস্থাটা কী? সবচেয়ে করুণ অঙ্গন হচ্ছে শিক্ষাঙ্গন। ইউনির্ভাসিটিগুলোতে ‘আমরা সবাই রাজা, আমাদের এই রাজার রাজত্বে। আজকে সেখানে ডিসিপ্লিন বলে কোনো কিছু নাই।’
সংগঠনের সভাপতি সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীনের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামালের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, সালাহউদ্দিন আহমদ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবদুর রেজ্জাক খান, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, প্রয়াত এজে মোহাম্মদ আলীর সহধর্মিণী ফারজানা আলী প্রমুখ।
সারাবাংলা/এজেড/এইচআই