Friday 09 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সিলেটের মেঘালয় টি এস্টেটে ইজারা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
৯ মে ২০২৫ ১২:২৫

দি মেঘালয় টি এস্টেটের ভূমির ইজারা বাতিল নিয়ে বিক্ষোভ করছেন এলাকাবাসী।

সিলেট: সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার চারিকাটা ইউনিয়নে দি মেঘালয় টি এস্টেটের ভূমির ইজারা বাতিল নিয়ে বিক্ষোভ করছেন এলাকাবাসী। তাদের এসব দাবি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধিতা দেখা দিয়েছে। এলাকাজুড়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৮ মে) দুপুর ৩টা পর্যন্ত ভিত্রিখেল শাহী ঈদগাহ এবং ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন মাঠে পৃথকভাবে এই অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়।

চারিকাটা ইউনিয়নে দি মেঘালয় টি এস্টেট নামীয় চা বাগানের অবৈধ ইজারা বাতিল এবং ভূমিহীন অসহায় লোকজনের বসতবাড়ী রক্ষা ও জায়গার সীমানা পুনর্নির্ধারণের কাজ বন্ধের দাবিতে এলাকাবাসি আয়োজিত এই প্রতিবাদ সভা ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।

জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ফারজানা আক্তার লাবনীর নেতৃত্বে উপজেলা ভূমি প্রশাসন ‘দি মেঘালয় টি এস্টেট’ নামীয় চা বাগান ভূমির সীমানা পুনর্নিরর্ধারণের কাজ শুরু করতে যান। এতে উত্তোজিত জনগণ এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে চারিকাটা ইউনিয়নের শত শত জনতা দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল করে তাদের বসতভিটা রক্ষায় অবৈধভাবে দি মেঘালয় টি এস্টেটের নামে লিজ দেওয়া ভূমির ইজারা বাতিলের দাবি জানান।

স্থানীয় জনগণ বলেন, ‘আমাদের জীবন দিয়ে হলেও বাপ-দাদার শত বছরের বসতভিটার ভূমি রক্ষা করব। ইউনিয়নের ৫ টি মৌজার অন্তত ২ হাজার ৩০০ পরিবারের ভোগ-দখলীয় জায়গার অন্তভূক্ত ভূমিতে দি মেঘালয় টি এস্টেটের নামে অবৈধভাবে দেওয়া লিজ বাতিল করতো।’ ভূমিহীনদের বসতবাড়ী রক্ষা ও স্থানীয়দের মধ্যে স্থায়ীভাবে জায়গা বন্দোবস্তের দাবি জানান।

বিজ্ঞাপন

চারিকাটা ইউনিয়নের হত দরিদ্র ভূমিহীন বাসিন্দাগণ অত্র ইউনিয়নের ভিত্রিখেল পূর্ব, ভিত্রিখেল পশ্চিম, ভিত্রিখেল উত্তর, নয়াখেল উত্তর, নয়াখেল দক্ষিণে পাঁচটি মৌজার বেশ কিছু সরকারি খাস খতিয়ানের ভূমি এবং অনেকই তাদের ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে বসতবাড়ী নির্মাণ করে বংশানুক্রমে বসবাস করে আসছেন।

পাঁচটি মৌজায় অন্তত ২ হাজার ৩০০ পরিবারের অন্তত ১৫ হাজার লোক বসবাস করছেন। বিগত ২০১০ সাল থেকে এলাকাবাসি দি মেঘালয় টি এস্টেট নামীয় কোম্পানীর নামে ভূমি বন্দোবস্তের প্রক্রিয়া বাতিল করার দাবি জানিয়ে আসছিলেন।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে একজন মন্ত্রীর আত্মীয় রাজনৈতিক প্রভাব কাটিয়ে দি মেঘালয় চা বাগানের নামে ভূমির লিজ দেওয়া হয়েছিল।

দি মেঘালয় টি এস্টেট নামীয় ভূমির ইজারা বাতিল করতো। সরেজমিনে তদন্ত পূর্বক এখানে বসবাসরত ভূমিহীন পরিবারের মধ্যে স্থায়ীভাবে বন্দোবস্ত প্রদান করার দাবি জানানো হয়।

এদিকে, সম্প্রতি সময়ে দি মেঘালয় টি এস্টেট নামীয় জমির সীমানা পুনর্নিরর্ধারণ কার্যক্রম বন্ধ রাখতে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসক সিলেট, জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) বরাবর এলাকাবাসির পক্ষ থেকে পৃথকভাবে লিখিত আবেদন করা হয়েছিল। এই অবস্থায় চরম উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ফারজানা আক্তার লাবনীর নেতৃত্বে উপজেলা ভূমি প্রশাসন ‘দি মেঘালয় টি এস্টেট’ নামীয় চা বাগান ভূমির সীমানা পুনর্নিরর্ধারণের কাজ শুরু করতে যাওয়ার পর স্থানীয় জনগণ বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।

এ ব্যাপারে জৈন্তাপুর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ফারজানা আক্তার লাবনী বলেন, ‘চারিকাটা ইউনিয়নে দি মেঘালয় চা বাগানের দখলসহ এখানে কি পরিমান সরকারি জায়গা ব্যক্তিগত অথবা কার দখলে রয়েছে তা সার্ভে করে সীমানা ঠিক করতে আমরা সরজমিনে গিয়েছিলাম। স্থানীয় জনগণের প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ প্রদর্শনের মুখে আমাদের ফিরে আসতে হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘দীর্ঘ কয়েক বছর থেকে এখানকার মানুষের মধ্যে ভূমির বিষয় নিয়ে সমস্যা চলে আসছে। স্থায়ীভাবে এই ভূমির একটা সমাধান হওয়া প্রয়োজন, স্থানীয় ভাবে বসবাসকারী ভূমিহীন জনগণের স্বার্থে অথবা সরকারের স্বার্থে এই জায়গা ব্যবহার করার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্থানীয় জনগণের সহযোগিতায় আমাদের সবার এগিয়ে যাওয়া প্রয়োজন।’

খবর পেয়ে দরবস্ত ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বাহারুল আলম বাহারসহ উপজেলার কয়েকজন গণমান্য ব্যক্তিরা ঘটনাস্থলে গিয়ে উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখেন।

এ সময় বক্তব্য দেন চারিকাটা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সুলতান করিম, সিলেট জেলা কৃষক দলের যুগ্ম আহবায়ক আলতাফ হোসেন বিলাল, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী জৈন্তাপুর উপজেলা শাখার সাবেক আমীর মাওলানা নাজমুল ইসলাম, ইউপি সদস্য হাফিজ জালাল উদ্দিন, মনির হোসেন, আব্দুল মজিদ ও মাওলানা কামাল আহমদ।

সারাবাংলা/এসডব্লিউ

দি মেঘালয় টি এস্টেট ভূমির ইজারা বাতিল নিয়ে বিক্ষোভ