আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি
পরিস্থিতির ওপর চোখ রাখছে বিএনপি
৯ মে ২০২৫ ১২:৩৫ | আপডেট: ৯ মে ২০২৫ ১৩:০৫
ঢাকা: আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন এলাকায় বড় জমায়েতের ঘোষণা দিয়ে বৃহস্পতিবার (৮ মে) রাত থেকেই সেখানে অবস্থান করছে এনসিপি নেতারা। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে রাজনীতির মাঠে দুই বড় শক্তি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এবং জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের নেতা-কর্মীরা। দুপুরের মধ্যে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার আলটিমেটামও দিয়েছে তারা।
শুক্রবার (৯ মে) বাদ জুমা যমুনার পূর্ব পাশে ফোয়ারার সামনে অনুষ্ঠেয় এ জমায়েতে দল–মত নির্বিশেষে সবাইকে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন এনসিপির নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ। পরিস্থিতি ঠিক কোন দিকে যাচ্ছে, তা নিয়ে রাজনৈতিক পরিমন্ডলে এক ধরনের উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির অবস্থান কী, সেটা নিয়েও সাধারণ মানুষের মধ্যে কৌতুহল তৈরি হয়েছে। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে চলমান আন্দোলনে বিএনপির রাজনৈতিক অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে সবাই। কিন্তু, এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে দলটির পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
দলীয় সূত্রমতে, উদ্ভূত পরিস্থিতির ওপর চোখ রাখছে বিএনপি। জুলাই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদলের রাজনৈতিক দল এনসিপির ডাকে সারা দিয়ে চলমান এই আন্দোলনে বিএনপি যোগ দেবে কী দেবে না, সে ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি দলটি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও মুখপাত্র রুহুল কবির রিজভী সারাবাংলাকে বলেন, ‘‘এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। বিষয়টা আমরা অবজার্ভ করছি। দলের পক্ষ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত হলে আপনাদের জানিয়ে দেওয়া হবে।’’
বিএনপি শুরু থেকেই আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের ব্যাপারে মধ্যপন্থা অবলম্বন করে আসছে। কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের ব্যাপারে তারা সরাসরি সমর্থন দেবে না। পুরো বিষয়টি জনগণের ওপর ছেড়ে দেবে তারা। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ যদি কোনো দলকে প্রত্যাখান করে, তাহলে সেই দল এমনিতেই নিষিদ্ধ হয়ে যাবে— এই দর্শনে বিশ্বাস করে বিএনপি।
অধিকন্তু, বৃহস্পতিবার (৮ মে) দলের আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, “যারা দীর্ঘদিন রাজনীতি করেননি অথবা আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী শাসনের আমলের আগেই দল থেকে চলে গেছেন এবং আওয়ামী লীগের দুঃশাসন, লুটপাট, টাকা পাচারের বিরুদ্ধাচরণ করেছেন, তারা বিএনপির রাজনীতিতে যোগ দিতে পারবেন।’’
‘‘আমরা চাচ্ছি, সমাজের যারা সজ্জন মানুষ, একদম ভদ্র মানুষ, যারা হয়ত অবসরে গেছেন, অন্তরে জাতীয়তাবাদ রাজনীতি লালন করতেন, তিনি একজন শিক্ষক হতে পারেন, ব্যাংকার হতে পারেন, সরকারি কর্মকর্তা হতে পারেন, এনজিও কর্মকর্তা হতে পারেন, কৃষক ও শ্রমিক হতে পারেন, তারাও প্রাথমিক সদস্য হতে পারবেন। এক্ষেত্রে বিএনপির আদর্শে বিশ্বাসী মানুষরাই বিএনপির প্রাথমিক সদস্য হতে পারবেন’’— বলেন রুহুল কবির রিজভী।
তার এই বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টা পর বৃস্পতিবার (৮ মে) রাত ১০টার দিকে এনসিপির হাসনাতের নেতৃত্বে যমুনার সামনে অবস্থান নেয় একদল বিক্ষোভকারী। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে এ অবস্থানে সংহতি প্রকাশ করে জামায়াতে ইসলামী, এবি পার্টি, ছাত্রশিবির, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, হেফাজতে ইসলাম এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
সারারাত সেখানে অবস্থানের পর শুক্রবার সকালে হাসনাত আব্দুল্লাহ বাদ জুমা জমায়েতের ঘোষণা দেন। অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারা রক্তের ওপরে দাঁড়িয়ে উপদেষ্টা হয়েছেন। সুতরাং, আপনারা যদি মনে করেন কূটচালের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগকে আবার পূর্বাসন করবেন, সেটির চেষ্টা হয়েছিল বিধায় আজকে আবার আমরা যমুনার সামনে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছি।’’
“আজকে বাদ জুমা ফোয়ারার সামনে থেকে ইন্টার কন্টিনেন্টালের যে রাস্তা রয়েছে, যে রাস্তা বাংলামোটর পর্যন্ত গিয়েছে এই পুরু রাস্তা আমরা জনসমুদ্রে পরিণত করব”— বলেন হাসনাত আব্দুল্লাহ।
কিন্তু, রাজনীতি সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত বিএনপির সমর্থন না মিলবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত সরকার নেবে না। এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হলে বিএনপির সম্মতি প্রয়োজন। কিন্ত, শুক্রবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিএনপির তরফ থেকে আনুষ্ঠানিক অনানুষ্ঠানক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে, শুক্রবার দুপুর পৌনে ১২ টায় গুলশানে যুক্তরাষ্ট্রের দ্য কার্টার সেন্টারের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করা না করার বিষয়টা তা বিএনপির বক্তব্যের ওপর নির্ভর করে না। এটা নির্বাচন কমিশন এবং সরকারের ওপর নির্ভর করে।’’
‘‘তাছাড়া বিএনপি তো ইতোমধ্যে বলেছে, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে জনগণ। জনগণ ঠিক করবে তারা কাকে নিষিদ্ধ করবে, কাকে করবে না।’’
সারাবাংলা/এজেড/এমপি