ইসরায়েলের চলমান যুদ্ধের মধ্যে গাজায় আন্তর্জাতিক সাহায্য পৌঁছাতে গিয়ে জর্ডান সরকার বিপুল অর্থ উপার্জন করেছে বলে দাবি করেছে মিডল ইস্ট আই (এমইই)। সংস্থাটি জানিয়েছে, জর্ডানের সরকারি দাতব্য সংস্থা জর্ডান হাশেমাইট দাতব্য সংস্থা (জেএইচসিও) গাজায় মানবিক ত্রাণ পাঠাতে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে একমাত্র মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে।
আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা এবং জেএইচসিও-র কার্যক্রম সম্পর্কে সরাসরি জানা ব্যক্তিদের সূত্রে জানা গেছে, জেএইচসিও-র নামে যে সব সাহায্য পাঠানো হচ্ছে, তার বড় অংশই আসলে বিদেশি সরকার ও এনজিও থেকে এসেছে। জর্ডানের সরাসরি অবদান ছিল অতি সামান্য।
দুই এনজিও সূত্র এবং স্কিম সম্পর্কে দুই ব্যক্তি জানিয়েছেন, গাজায় প্রবেশ করা প্রতিটি ত্রাণবাহী ট্রাকের জন্য জর্ডান প্রায় ২ হাজার ২০০ ডলার ফি নিয়েছে, যা সরাসরি জর্ডানের সশস্ত্র বাহিনীর কাছে জমা দিতে হয়েছে।
এছাড়া গাজায় প্রতি বিমান থেকে ত্রাণ ফেলার জন্য জর্ডান ২ থেকে ৪ লাখ ডলার পর্যন্ত চার্জ করেছে বলে জানিয়েছে সূত্রগুলো। যেখানে একেকটি বিমানে থাকা ত্রাণ একটি ট্রাকের অর্ধেকেরও কম পরিমাণ ছিল।
এমইই-র প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ত্রাণ কার্যক্রম থেকে আয় বাড়ার ফলে জর্ডান তাদের লজিস্টিক অবকাঠামো সম্প্রসারণ করছে। এক বিদেশি অনুদানে ২০০টি নতুন ট্রাক কেনা হয়েছে এবং জাতিসংঘের সহায়তায় বড় আকারের গুদাম নির্মাণ করা হচ্ছে।
এই বিষয়ে জর্ডান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনী ও জেএইচসিও কোনো মন্তব্য না করায় এমইই-র প্রকাশনার সময় পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
ইসরায়েলের গাজা অবরোধ ও হামলার মধ্যে জর্ডান ঘরোয়া চাপ মোকাবিলা করছে, কারণ দেশটির অনেক নাগরিক ১৯৪৮ সালের ‘নাকবা’র সময় বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি শরণার্থীর অংশ।
যুদ্ধ শুরুর প্রথম দিকেই জর্ডানজুড়ে হামাস ও গাজার পক্ষে গণবিক্ষোভ দেখা যায়। এসব চাপের পরিপ্রেক্ষিতে যুদ্ধ শুরুর এক মাস পর জর্ডান সামরিকভাবে গাজায় বিমান থেকে ত্রাণ ফেলা শুরু করে। এখন পর্যন্ত দেশটি প্রায় ৪০০টি এয়ারড্রপ চালিয়েছে, যার অনেকগুলো অন্যান্য দেশের সঙ্গে সমন্বিত।
তবে গাজা বাসিন্দা ও মানবিক কর্মীরা এই ত্রাণ কার্যক্রমের সমালোচনা করেছেন। তাদের মতে, এয়ারড্রপ ঝুঁকিপূর্ণ, অপ্রতুল এবং অপ্রয়োজনীয়, কারণ স্থলপথে ত্রাণ পাঠানো অনেক বেশি কার্যকর।
জর্ডান দাবি করেছে, যুদ্ধ শুরু পর থেকে তারা স্থলপথে অন্তত ১৪০টি ত্রাণবহর পাঠিয়েছে, যার প্রতিটিতে ছিল একাধিক ট্রাক। এসব পাঠানোর জন্যও ইসরায়েলের অনুমতি ও সমন্বয় লাগত।
ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যুদ্ধের আগে গাজায় প্রতিদিন ৫০০ ট্রাক ত্রাণের প্রয়োজন ছিল, যা যুদ্ধ শুরুর পর কখনোই পূরণ হয়নি।