নিচে নেমে গেছে পানিরস্তর
জামালগঞ্জের শতাধিক গ্রামে বিশুদ্ধ পানির সংকট
১০ মে ২০২৫ ০৮:০০
সুনামগঞ্জ: জেলার জামালগঞ্জে উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে প্রায় শতাধিক গ্রামের হাজারো মানুষ বিশুদ্ধ পানির সংকটে ভুগছেন। ভূ-গর্ভস্থ পানির লেয়ার নিচে নেমে যাওয়ায় এসব গ্রামের চাপকলে এখন আর পানি উঠছে না। চার/পাঁচ বছর আগেও যেসব চাপকলে পানি উঠতো এখন সেগুলো অকেজো হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে গত চার-পাঁচ মাস যাবত পানির অভাব চরম আকার ধারণ করেছে।
সমস্যা সমাধানে গভীর নলকূপ স্থাপনের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করছেন অনেকে। যাদের সামর্থ্য আছে তারা গভীর নলকূপ যাকে বলে (সাবমার্জেবলটিউবওয়েল) বসাচ্ছেন। আবার অনেকে পুরোনা নলকূপগুলো দুই থেকে তিন ফুট নিচুতে বসিয়ে পানি আনার চেষ্টা করছেন। যাদের সামর্থ্য নেই তারা প্রতিবেশির বাড়ি থেকে দীর্ঘ লাইন ধরে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করতে বাধ্য হচ্ছেন। এসব গ্রামের অধিকাংশই গরিব কৃষক, তাদের অনেকেই নলকূপ স্থাপনের সামর্থ্যনেই।
স্থানীয় গ্রামবাসীর দাবি, সরকারিভাবে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর ও স্থানীয়সরকার মন্ত্রণালয়ের ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বিতরণ করা গভীর নলকূপ গুলোউন্মুক্ত স্থানে না বসিয়ে মালিকানা জায়গায় কিংবা বাসা বাড়িতে স্থাপনের ফলে সেগুলো থেকে পানির চাহিদা পূরণ করা যাচ্ছে না। বিশেষ করে একটি ৬৭০ ফিটলেয়ারের নলকূপ বসাতে খরচ হয় একলাখ টাকা। অনেকেরই সেই সামর্থ্য নেই।
উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, সাচনা বাজার ইউনিয়নের ব্রাহ্মণগাঁও, কুকরাপশী,দূর্লভপুর, ফাজিলপুর, রামনগর, ভরতপুর, সেরমস্তপুর, মফিজনগর, ফতেপুর,জামালগঞ্জ সদর ইউনিয়নে জামালগঞ্জ সদর, দক্ষিণ কামলাবাজ, নয়াহালট,শাহপুর, তেলিয়া, চানপুর, সোনাপুর, লক্ষীপুর, লালপুর সংবাদপুর, কালাগুজা,কাশীপুর, ফেনারবাক ইউনিয়নের গজারিয়া, রামপুর, ফাজিলপুর, আলীপুর, কামধরপুর,শরিফপুর, ভূতিয়ারপুর, শান্তিনগর, ফেনারবাক, ছয়হারা, দৌলতপুর, গংগাধরপুর,মাতারগাঁও, রাজাপুর, ভীমখালী ইউনিয়নের কলকতখা, নোয়াগাঁও, মলিনগর, চানবাড়ী,মাহমুদপুর, গোলামীপুর, ছেলাইয়া, ঘাগটিয়া, শ্রীপুর এবং বেহেলী ইউনিয়নের ১০/১৫টি গ্রাম, জামালগঞ্জ উত্তর ইউনিয়নের ১০/১২টি গ্রামে পাঁচ/ছয় বছর আগের ৪২০ ফুট গভীর নলকূপে পানি উঠছে না। গত দুই বছর ধরে সরকারি বা ব্যক্তিগতভাবে ৬৭০ ফিট লেয়ারের নলকূপগুলোতে পানি আসছে।
ভীমখালী ইউনিয়নের ছোট ঘাগটিয়া গ্রামের নাসিমা বেগম, গুলছেরা বিবি, জমিলাখাতুন, জাহানারা বেগম সারাবাংলার এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘দেখতেই তো পারছেন আমরা কলস নিয়ে একের পর এক লাইনে দাঁড়িয়ে পানি নিচ্ছি। কয়েক মাস যাবত এই নলকূপ থেকে পানি নিয়ে সংসারের কাজ-কর্ম করছি। আমাদের গ্রামে অনেক নলকূপ থাকলেও সেগুলোতেপানি ওঠে না। তাই এখান থেকে পানি নিয়ে সংসারের কাজকর্ম করি।
সাচনা বাজার ইউনিয়নের ব্রাহ্মণগাঁওগ্রামের গৃহবধূ জয়া দাস ও ঝর্না দাস সারাবাংলাকে বলেন, ‘এককলস পানি আনতে আধা মাইল হাঁটতে হয়। গ্রামে কয়েকটা টিউবওয়েল থাকলেও পানি ওঠে না। দিনের বেলায় পানি আনলেও রাতে খুবই কষ্ট হয়। দ্রুত আমাদের গ্রামে কয়েকটি টিউবওয়েলের ব্যবস্থা করতে প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।’
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘জামালগঞ্জের ছয়টি ইউনিয়ন জুড়েই তীব্র পানির সংকট রয়েছে। পানিরস্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এখন আর চার/পাঁচ বছর আগের নলকূপে পানি উঠছে না। যাদের সাবমার্জেবল নলকূপ আছে তাদের বাসা বাড়িতে মানুষ পানি সংগ্রহে ভিড় জমাচ্ছে। সরকারিভাবে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারি বরাদ্দকৃত গভীর নলকূপের (সাবমার্জেবল) মালিক জানান, তাদেরও প্রতিটি নলকূপের জন্য ১০/১৫ হাজার টাকা গুনতে হয়েছে। এছাড়া, নলকূপ বসানোর লোকজনকে খাবারসহ অন্যান্য চাহিদা মেটাতে হয়। বিগত সময়ে সংসদ সদস্যের মাধ্যমে তালিকা করে বরাদ্দ দেওয়া হতো। সাধারণ কেউ বরাদ্দ পেত না। কেবল রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে সম্পর্ক থাকা ব্যক্তিরা সংসদ সদস্যের মাধ্যমে বরাদ্দের অগ্রাধিকার পেয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীর রাম কুমার সাহা সারাবাংলাকে বলেন, ‘পানির লেয়ার নিচে নেমে যাওয়ায় আগের ৪২০ ফুট গভীর নলকূপগুলাতে পানি উঠছে না। তবে লেয়ার উপরে উঠলে বর্ষাকালে পানি ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে সাবমার্জেবল নলকূপগুলাতে পানি আসছে। তাই আমরা আগের নলকূপগুলাকে সাবমার্জেবল করার জন্য পরামর্শ দিচ্ছি। এছাড়া, এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’
সারাবাংলা/পিটিএম