Saturday 10 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

যে কারণে নিষিদ্ধ হতে পারে আওয়ামী লীগ

রাশেদ মামুন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১০ মে ২০২৫ ২০:১৮ | আপডেট: ১০ মে ২০২৫ ২৩:১০

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধে ফের উত্তাল গোটা দেশ। ছাত্র-জনতার দীপ্তকণ্ঠে ফ্যাসিবাদবিরোধী স্লোগানে উত্তপ্ত ঢাকার রাজপথ। এ দাবিতে সায় দিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন। মাঠে নেমেছেন শাপলা চত্বর ও পিলখানা হত্যাকাণ্ডের শিকার পরিবারের সদস্যসহ আহত জুলাই যোদ্ধারাও। কিন্তু এ নিয়ে আইন কী বলছে, কিংবা সরকার চাইলেই কি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নিতে পারবে? এমন প্রশ্ন জেগেছে অনেকের মনে। তবে একটি আইনেই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ সম্ভব বলে মনে করছেন আইনজ্ঞরা।

বিজ্ঞাপন

গত ৭ মে রাত ১০টার পর সাম্প্রতিক আন্দোলনের সূচনা হয়। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর ডাকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে জড়ো হতে থাকেন বিক্ষোভকারীরা। রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে যায় দৃশ্যপট। ধীরে ধীরে আসতে থাকেন এনসিপি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন, ইসলামী ছাত্রশিবির, গণঅধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

বিজ্ঞাপন

রাতভর বিক্ষোভ চলার পর শুক্রবার বাদ জুমা যমুনার পাশে ফোয়ারার সামনে বড় জমায়েত হয়। ডাক আসে শাহবাগ ব্লকেডের। এদিন রাজধানীর উত্তরাসহ ঢাকার কিছু প্রবেশমুখে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। এমনকি দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহর কিংবা জেলা-উপজেলায়ও আন্দোলনের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে তারাও সমানতালে নামেন সড়কে। সিদ্ধান্ত না এলে এরই মধ্যে ফের ‘মার্চ টু ঢাকা’র হুঁশিয়ারি দিয়েছেন এনসপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। একইসঙ্গে তিন দফা দাবিতে কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়।

বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়েছে জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রেস উইং থেকে পাঠানো বিবৃতির একাংশে বলা হয়, ‘রাজনৈতিক সবদলের সঙ্গে এরই মধ্যে যোগাযোগ করেছে সরকার। তাদের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের নেতা-সমর্থকদের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিষয়ে জাতিসংঘের প্রতিবেদন সরকার বিবেচনায় রাখছে।’ তবে পুরোপুরি কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত ময়দান না ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছে বিক্ষোভাকারীরা।

সূত্রমতে, গেল ১৬ বছরের শাসনামলে অনিয়ম-গণহত্যা, গুম-খুন, নির্যাতন, অর্থ বাণিজ্যসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো বিভিন্ন কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের বিরুদ্ধে। এর প্রমাণও উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’-এ। কিছু সন্ত্রাসী ঘটনায় দলটির নেতাকর্মীদের অপরাধও আদালতে প্রমাণিত হয়েছে। আর এ কারণেই গণঅভুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি ওঠে বিভিন্ন মহলে।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ দেলাওয়ার হোসাইন সারাবাংলাকে বলেন, ‘ক্ষমতায় থাকতে ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮ ধারা অনুযায়ী বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করেছিল আওয়ামী লীগ। ঠিক একই আইনে তাদেরও নিষিদ্ধ করা যায়। যেমনটা ছাত্রলীগ নিষিদ্ধেও প্রয়োগ করা হয়েছে। তবে সরকার চাইলেই একক সিদ্ধান্তে যেকোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করতে পারে না। এক্ষেত্রে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের পরামর্শের প্রয়োজন থাকে। কেননা সরকারকে আন্তর্জাতিক দিকও বিবেচনায় রাখতে হয়।’

অন্তর্বর্তী সরকারও ঠিক সেভাবে এগোচ্ছে বলে মনে করছেন এই আইনজীবী। তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসী দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা সহজ। কিন্তু ভবিষ্যৎ ফলাফলে এ নিয়ে নানান আলোচনা আসতে পারে। তবে জুলাই-আগস্ট ঘিরে আওয়ামী লীগের নারকীয় কর্মকাণ্ড যেহেতু জাতিসংঘের মাধ্যমে উঠে এসেছে, সেহেতু সেই একটি প্রতিবেদন বিবেচনায় নিলেও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের সুযোগ রয়েছে।’

এদিকে, শেখ মুজিবুর রহমানের করা কালো আইনেই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ সম্ভব বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের রাজনীতি বন্ধ করে বাকশাল কায়েম করেছিলেন শেখ মুজিব। তিনিই সর্বপ্রথম আওয়ামী লীগকে হত্যা বা ধ্বংস করেছিলেন। তার প্রণীত ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৯ ধারায় দল নিষিদ্ধ করার মতো উপাদান রয়েছে। সরকার চাইলে সেই আইনের ব্যাখ্যাও বিবেচনা করতে পারে।’

সুপ্রিম কোর্টের আরেক আইনজীবী মুজাহিদুল ইসলাম শাহিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘সরকার চাইলে এখনই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে পারে। এক্ষেত্রে সন্ত্রাসবিরোধী আইন প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে আওয়ামী লীগের দলগত বিচারের বিধান যুক্ত করেও করা যাবে। সেক্ষেত্রে পুরোপুরি রায় পেতে ছয় মাস থেকে এক বছরের সময়ের প্রয়োজন।’

তাই কালক্ষেপণ না করে সন্ত্রাসবিরোধী বা ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৯ ধারার মাধ্যমে নিষিদ্ধ করা উচিত বলে মনে করেন তিনি। কেননা দলটির ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগের প্রমাণ রয়েছে।

যা রয়েছে সেই ১৯ ধারায়

১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৯ ধারার ১ উপধারায় বলা হয়েছে, কোনো রাজনৈতিক দল বা প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে সরকার যদি নিশ্চিত হয় যে, দলটির এমন কোনো কাজ করার আশঙ্কা রয়েছে; যার কারণে জনশৃঙ্খলার জন্য ক্ষতিকর হবে। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টের বক্তব্য শুনে গেজেটের মাধ্যমে নির্ধারিত মেয়াদে প্রতিষ্ঠানের তৎপরতা স্থগিত রাখার নির্দেশ দিতে পারবে।

একই ধারার ৬ উপধারায় বলা হয়, যতদিন পর্যন্ত কোনো দলের ব্যাপারে উপধারা (১) অনুসারে দেয়া কোনো আদেশ বলবৎ থাকবে, ততদিন কোনো ব্যক্তি এ দল পরিচালনায় সাহায্য করতে পারবে না।

সারাবাংলা/আরএম/পিটিএম

আইন আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ প্রক্রিয়া

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর