ঢাকা: আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরিপত্র পরবর্তী কর্মদিবসে তথা সোমবার (১২ মে) জারি করা হবে।
শনিবার (১০ মে) রাতে উপদেষ্টা পরিষদের এক বিশেষ সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভা শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
উপদেষ্টা পরিষদের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শনিবার উপদেষ্টা পরিষদের এক বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল আইনের সংশোধনী অনুমোদিত হয়েছে। সংশোধনী অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কোনো রাজনৈতিক দল, তার অঙ্গসংগঠন বা সমর্থক গোষ্ঠীকে শাস্তি দিতে পারবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও দলটির নেতাদের বিচার সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার জন্য সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে সাইবার স্পেসসহ দলটির যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরিপত্র পরবর্তী কর্মদিবসে জারি করা হবে।
পাশাপাশি জুলাই ঘোষণাপত্র আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে চূড়ান্ত করে প্রকাশ করার সিদ্ধান্তও গৃহীত হয়েছে বৈঠকে।
উল্লেখ্য, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর থেকেই আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে আসছিল আন্দোলনের সবচেয়ে বড় স্টেকহোল্ডার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। পরে তারা জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নামে রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
প্রায় ৯ মাস ধরে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধে ছাত্ররা বিভিন্নভাবে দাবি উত্থাপন করলেও ৮ মে রাতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে কঠোর কর্মসূচি নিয়ে নামেন এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। তার আহ্বানে সাড়া দেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
ওইদিন রাত একটার দিকে মিছিল নিয়ে যমুনার সামনে যান এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্যসচিব আখতার হোসেন। তাদের সঙ্গে দলের কেন্দ্রীয় নেতারাও ছিলেন। পরদিন ৯ মে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে বাদ জুমা বড় জমায়েতের ডাক দেন হাসনাত আব্দুল্লাহ। সেখানে মঞ্চ বানিয়ে বিভিন্ন দাবি ও স্লোগান দিয়ে সরকারকে আলটিমেটাম দেন আন্দোলনকারীরা। পরে বিকাল ৫টার দিকে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন তারা।
পরে বিকেলে এ দাবির বিষয়ে মুখ খোলে অন্তর্বর্তী সরকার। এ নিয়ে এক বিবৃতিতে বলা হয়, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছে সরকার। শনিবারও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের করার দাবিতে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রাখেন আন্দোলনকারীরা। এক পর্যায়ে তারা ঢের ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতেই অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ শনিবার জরুরি বৈঠকে। বৈঠক থেকে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।