ঢাকা: দীর্ঘদিন পর পুঁজিবাজার চাঙ্গা করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে আসন্ন বাজেটে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ ও লভ্যাংশের ওপর করছাড় এবং তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে কর ব্যবধান বাড়ানো। এছাড়া পুঁজিবাজারে বাইরে থাকা মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোর কর হার বাড়তে পারে।
অর্থ বিভাগ ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা যায়, পুঁজিবাজারকে দৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড় করানোর পাশাপাশি আগামীতে পুঁজিবাজারকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের উৎস হিসেবে গড়ে তোলার কৌশল নিয়েছে সরকার। এর অংশ হিসেবে আসন্ন বাজেটে অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তিতে উৎসাহিত করতে তিনটি পদক্ষেপের বিষয়ে চিন্তা করা হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে- নতুন তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে কর রেয়াতসহ আরও কিছু প্রণোদনা প্রদান; তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর কর হারের ব্যবধান ন্যূনতম ১০ শতাংশ নির্ধারণ এবং ব্যাংক খাত থেকে হতে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন সীমিতকরণে পদক্ষেপ নেওয়া।
এদিকে পুঁজিবাজারে ভাল মৌলভিত্তিক কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্তিতে উৎসাহিত করতে তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর ব্যবধান কমপক্ষে ১৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। একই সঙ্গে যে সকল প্রতিষ্ঠান ১০ কোটি টাকার বেশি ট্যাক্স ইনসেনটিভ ও ট্যাক্স বেনিফিট সুবিধা পায়- তাদের বাধ্যতামূলকভাবে স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত করারও প্রস্তাব করেছে সংগঠনটি।
এছাড়া নতুন কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সজেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এর পক্ষ থেকে ‘কর অবকাশ’ সুবিধা প্রদানের সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে সূত্র জানায়, শতভাগ কর অবকাশ সুবিধা প্রদানের বিষয়টি সরকার নীতিগত ভাবে নিরুসাহিত করছে। এর বিপরীতে কর রেয়াত সুবিধা প্রদান বা প্রণোদনা প্রদানের বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।
এদিকে বর্তমানে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর ওপর ভিন্ন ভিন্ন করহার বিদ্যমান রয়েছে।
এর মধ্যে পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানি- যাদের পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশের অধিক শেয়ার আইপিও (প্রাথমিক গণ-প্রস্তাব) এর মাধ্যমে হস্তান্তরিত হয়েছে, এর ওপর করহার রয়েছে সাড়ে ২২ শতাংশ (শর্ত সাপেক্ষে ২০ শতাংশ)।
অন্যদিকে পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানি যাদের পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশ বা ১০ শতাংশের কম শেয়ার আইপিও’র মাধ্যমে হস্তান্তরিত হয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে করহার রয়েছে ২৫ শতাংশ।
একইভাবে আয়কর আইন, ২০২৩ এ সংজ্ঞায়িত কোম্পানিগুলোর মধ্যে যারা পাবলিকলি ট্রেডেড নয়, তাদের ওপর কর হার রয়েছে সাড়ে ২৭ শতাংশ (শর্ত সাপেক্ষে ২৫ শতাংশ) এবং একক ব্যক্তি কোম্পানিগুলোর করহার হচ্ছে সাড়ে ২২ শতাংশ (শর্ত সাপেক্ষে ২০ শতাংশ)।
অন্যদিকে, পাবলিকলি ট্রেডেড (পুঁজিবাজারে আছে)- ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান( মার্চেন্ট ব্যাংক ব্যতীত) করহার হচ্ছে ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ এবং পুঁজিবাজারের বাইরে থাকা ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর কর হার হচ্ছে ৪০ শতাংশ। এক্ষেত্রে দুটির মধ্যে করের ব্যবধান হচ্ছে মাত্র আড়াই শতাংশ।
সূত্র মতে, আগামী বাজেটে এ ব্যবধান ৫ শতাংশে উন্নীত করা হতে পারে। অর্থাৎ তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর জন্য করহার হতে পারে ৩৫ শতাংশ।
এছাড়া ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ছাড়া পুঁজিবাজারে থাকা অন্যান্য কোম্পানিগুলোর ওপর বিদ্যমান করহার কিছুটা কমতে পারে।
সূত্র মতে, অন্যান্যের মধ্যে পুঁজিবাজারের বাইরে থাকা মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোর ওপর কর হার বাড়ানো হতে পারে। এক্ষেত্রে বিদ্যমান কর হার ৪৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হতে পারে।
উল্লেখ্য, বর্তমানে গ্রামীণ ও রবি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রয়েছে। তৃতীয় বৃহত্তম মোবাইল ফোন কোম্পানি বাংলালিংক পুঁজিবাজারে বাইরে রয়েছে। একইভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিটকও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয়।