ঢাকা: জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, হেফাজতে ইসলাম এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপির) দুই দিনের আন্দোলনে দেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারবে না দলটি।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে চলা দুদিনের আন্দোলনে যোগ না দিয়ে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান নিয়েছিল আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি। তারা কোনো অবস্থাতেই রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের পক্ষে সরাসরি অবাস্থান নিতে চায়নি। বরং বিষয়টি জনগণের সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে দিয়েছিল তারা। কিন্তু, নিষিদ্ধ হয়ে যাওয়ার পর এর বিরোধিতাও করছে না, আবার সরাসরি সমর্থনও করছে না দলটির নেতারা।
তবে রোববার (১১ মে) এক অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘আমাদের দলের পক্ষ থেকে কয়েক মাস আগে এই দাবিটা (দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার) লিখিতভাবে প্রধান উপদেষ্টাকে জানিয়েছিলাম, আওয়ামী লীগকে মানবতাবিরোধী ও গণহত্যার দায়ে বিচারের আওতায় আনতে হবে। তখন প্রধান উপদেষ্টা বিষয়টি যদি আমলে নিতেন তাহলে গত ২ দিনের (আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আন্দোলন) বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হতো না।’
এদিন দুপুরে অপর এক অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বললেও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের ব্যাপারে কোনো কথা বলেননি বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচি রুহুল কবির রিজভী। বরং তিনি ভিন্ন ইস্যুতে কথা বলেছেন, সমালোচনা করেছেন সরকারের নির্বাচন নীতি নিয়ে। রিজভী বলেছেন ‘মানুষ দ্রুত একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাইলেও সরকার নীরব। এতে জনগণের মধ্যে সন্দেহ ও আশঙ্কা আরও ঘনীভূত হচ্ছে। সরকারের সাম্প্রতিক আচরণ দেখে মনে হচ্ছে তারাও শেখ হাসিনার পুরোনো কৌশলে এগিয়ে যাচ্ছে।’
দলটির নেতারা বিষয়টি নিয়ে হুট করে মন্তব্য করতে চান না। অনেকটা নিরাপদ অবস্থানে থেকে মন্তব্য করার পক্ষে তারা। আগবাড়িয়ে কোনো কথা বলে নিজের জন্য বিপদ ডেকে আনতে চান না।
বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রেস নোটের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হলেও দলের নিবন্ধন এখনো বাতিল হয়নি। পুরো বিষয়টা বিশ্লেষণ করে মন্তব্য করা উচিত। এর জন্য আরেকটু অপেক্ষা করতে হবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল সারাবাংলাকে বলেন, ‘একটা পক্ষ প্রথম থেকেই বলে আসছে বিএনপি নাকি চায় না আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হোক। কয়েকটি দলের দাবির মুখে সরকার আওয়ামী লীগের কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। আমরা এ সিদ্ধান্তকে স্বাগতও জানাচ্ছি না, প্রতিবাদও করছি না। দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেওয়া হবে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সারাবাংলাকে বলেন, ‘একটা নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করতে চায় না। আওয়াম লীগ যে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করেছে, সেজন্য তাদের কার্যক্রমের ওপর সরকার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এটা ঠিক কী বেঠিক, সেটা জনগণ মূল্যায়ন করবে। আমাদের দলের পক্ষ থেকেও আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেওয়া হবে। সে পর্যন্ত আপনারা একটু অপেক্ষা করুন।’