নীলফামারী: নীলফামারীর সতেরো বছর বয়সী তানিসা তানভি ঐশী, যার মাত্র ৫০০ টাকার ছোট্ট পুঁজি আজ প্রতি মাসে এনে দিচ্ছে লাখ টাকার আয়। সামান্য বিনিয়োগ থেকে লাখ টাকার মাসিক আয়— এ যেন এক স্বপ্নীল উত্থান!
অদম্য সাহস, সৃজনশীলতা আর উদ্যোগ নিলে কিভাবে স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়া যায়, তার এক উজ্জ্বল উদাহরণ ঐশী। তার এ সাফল্যের গল্প— অনুপ্রেরণা হতে পারে দেশের হাজারো তরুণ-তরুণীর জন্য।
২০২৩ সালে রাজধানীর পিলখানায় বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রব স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পাস করেন ঐশী। এরপর তিনি উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হন নীলফামারীর ডিমলার তিস্তা কলেজে। হঠাৎ পরিচিত শহুরে পরিবেশ ছেড়ে গ্রামে এসে পড়াশোনার পাশাপাশি একাকীত্বে ভুগতে থাকেন তিনি।
এই একাকীত্ব কাটাতে ছোটবেলার শিখে রাখা নানান নকশার কারুকার্যে আগ্রহী হয়ে উঠেন। নানী আমেনা বেগমের কাছ থেকে শেখা আকিবুকি বা অলঙ্করণ বিদ্যার ওপর ভর করে ঘরেই শুরু করেন কংক্রিটের শোপিস তৈরির কাজ। শুরুতে নিজের ঘরের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির জন্য তৈরি করা। পরে শোপিস বিক্রি করেন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ‘ইপপা’-তে। সেখান থেকেই শুরু হয় বেচা-বিক্রি।
ধীরে ধীরে দেশ-বিদেশে অনলাইনে শোপিস বিক্রি বাড়তে থাকে। মাত্র দুই বছরের মাথায় এসে প্রতি মাসে প্রায় লাখ টাকা উপার্জন করছেন ঐশী। শুধু তাই নয়, নিজের আয়ে সহযোগী হিসেবে নিয়েছেন আরও দুইজন কিশোর, যাদের পড়াশোনার খরচও বহন করছেন তিনি।
ঐশীর সহকারী ইমরান হাসান স্থানীয় একটি মাদ্রাসার নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। সে জানায়, “ঐশী আপুর গ্যালারিতে বসে কাজ করতে ভালো লাগে। এখান থেকে যা আয় হয়, তা দিয়েই পড়াশোনা ও ব্যক্তিগত খরচ চলে যায়।”
উদ্যোক্তা ঐশী বলেন, “টাকা উপার্জনের কোনো বয়স হয় না। যদি ইচ্ছা আর পরিশ্রম থাকে, তাহলে যেকেউ কিছু করতে পারে।”
ঐশীর বাবা তিস্তা কলেজের অধ্যক্ষ মোখলেসুর রহমান বলেন, “মেয়ে এসব ক্রাফটের কাজ করতেই পারে, তবে পড়াশোনাটাই আগে। সেটাই আমাদের শর্ত।”
মা স্কুল শিক্ষিকা দিলরুবা ইসমিন বলেন, “শিক্ষা ও সৃজনশীলতা পাশাপাশি এগিয়ে গেলে মেয়েরা আরও ভালো করতে পারে। আমরা মেয়েকে ইচ্ছার স্বাধীনতা দিয়েছি।”
তানিসা তানভি ঐশী শুধু নিজের স্বপ্নেই আটকে নেই। তিনি চান তার চারপাশের গ্রামীণ তরুণ-তরুণীদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে। দেশের বেকারত্ব দূরীকরণে অবদান রাখার স্বপ্ন দেখেন এই কিশোর উদ্যোক্তা।