ঢাকা: জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্তিকরণের খসড়া অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। মঙ্গলবার (১৩ মে) এনবিআর ভবনের সামনে অবস্থান নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা।
সোমবার (১২ মে) এনবিআর সম্মেলন কক্ষে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এই সিদ্ধান্ত নেন। এনবিআর সংস্কারে নিজেদের দাবি আদায়ে ‘কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়কর’ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমন্বয়ে’ এনবিআর ঐক্য পরিষদ গঠন করা হয়েছে।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মঙ্গলবার (১৩ মে) ‘এনবিআরের সামনে বিকেল ২টা ৪৫ মিনিটে অবস্থান কর্মসূচি’ ঘোষণা করা হয়েছে। এর আগে সোমবার বিকেল ৪টা থেকে এনবিআর সম্মেলন কক্ষে সভা চলছিল। সভায় এনবিআর কাস্টমস ও আয়কর ক্যাডারের দুই অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তবে তারা সঠিক কোনো সুরুহা দিতে না পারায় কাস্টমস ও আয়কর কর্মকর্তারা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। অনেকেই কর্মবিরতিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার দাবি জানান। তারা বলেন, ‘কর্মবিরতি ছাড়া দাবি আদায়ের আর কোনো পথ খোলা নেই।’
আরও পড়ুন-কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন এনবিআর কর্মকর্তারা
সভায় এনবিআর কর্মকর্তারা বলেন, ‘আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসেছি। এনবিআর চেয়ারম্যানের রুমের সামনেও অপেক্ষা করেছি। এখন আমাদের আন্দোলনে যাওয়া ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই। আমাদের হয়তো কর্মবিরতিতে যেতে হবে।’
সভায় অংশ নেওয়া অপর এক কর্মকর্তা বলেন, ‘কলবিরতিতে যাওয়ার আগে আমাদের একটি আলটিমেটাম ঘোষণা করা উচিত। এরপরেই সমন্বিতভাবে সারাদেশের এনবিআরের কর্মকর্তাদের কলমবিরতিতে যাওয়া উচিত।’ এতে অংশ নেওয়া অপর এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা জেনেছি খসড়া অধ্যাদেশটি এখন রাষ্ট্রপতির দফতরে চলে গেছে। সেটি আর ফেরত আনা সম্ভব নয়। অধ্যাদেশ নিয়ে আমরা এখনো ধোয়াঁশায় রয়েছি।’
অপর এক কর্মকর্তা দাবি করেন, ‘অধ্যাদেশটি যেন এখনই জারি না হয়।’ চূড়ান্ত অনুমোদনের আগে অধ্যাদেশটির প্রকৃত তথ্য জানতে চান এনবিআর কর্মকর্তারা।
এক কর্মকর্তা বলেন, ‘যারা আন্দোলনে যাবেন, হয়তো তাদের চাকরি থাকবে না। আমাদের সেই কথাটি বিবেচনায় নিয়েই আন্দোলন করতে হবে। এরই মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে নানা ধরনের তদন্ত শুরু হয়েছে। বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হচ্ছে।’
প্রসঙ্গত, দেশের রাজস্ব আয় বাড়াতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংস্কারের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটিকে দুই ভাগ করার উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এরই অংশ হিসেবে সম্প্রতি রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। এনবিআর বিলুপ্তিকরণের এই উদ্যোগে ক্ষুদ্ধ প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা। এরই মধ্যে কাস্টমস ও ট্যাক্স ক্যাডারের কর্মকর্তাদের দুই সংগঠনের পক্ষ থেকে এই খসড়া বাতিলের দাবি জানানো হয়েছে। এনবিআর বিলুপ্তকরণের খসড়া অধ্যাদেশ বাতিলের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ট্যাক্স লইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন ও ঢাকা ট্যাকসেস বার অ্যাসোসিয়েশনও। তবে অনেকটা গোপনীয়তার মধ্যেই খসড়াটি সোমবার অধ্যাদেশ আকারে জারি হতে পারে বলে গুঞ্জন উঠে। অংশীজনদের সঙ্গে কোন ধরণের আলোচনা ছাড়াই এই অধ্যাদেশ গেজেট আকারে জারি হলে বৃহত্তর কর্মবিরতি ও গণইস্থফা দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন আয়কর ও কাস্টমস ক্যাডারের কর্মকর্তারা।
সোমবার (১২ মে) এনবিআর সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এক আলোচনায় প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের কণ্ঠেও সেই সুর উঠে আসে।