Thursday 15 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সুন্দরবনে ভারতের ‘পুশইন’ করা ৭৫ বাংলাদেশি ও ৩ ভারতীয় মুসলিমকে উদ্ধার

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১৩ মে ২০২৫ ১৪:৪৪

উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশি ও ভারতীয় মুসলিমরা।

সাতক্ষীরা: সুন্দরবনের মান্দারবাড়িয়া চরে ভারতের জোরপূর্বক ‘পুশইন’ করা ৭৫ জন বাংলাদেশি মুসলিম এবং তিনজন ভারতীয় মুসলিমকে উদ্ধার করেছে মংলা কোস্ট গার্ড। এরমধ্যে ৭৫ জনকে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

এদিকে, সোমবার (১২ মে) জন্মসূত্রে ভারতীয় নাগরিক হওয়ায় তিনজনকে শ্যামনগর থানায় মামালা দায়েরের পর আদালতের মাধ্যমে কারগারে প্রেরণ করা হয়। এর আগে, রোববার (১১ মে) রাত ১১টার দিকে কোস্টগার্ড তাদের ৭৮ জনকে শ্যামনগর থানায় হস্তান্তর করে।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (১৩ মে) বেলা পৌনে ১১টার দিকে শ্যামনগর থানা চত্ত্বরে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড পশ্চিম জোন এ বিষয়ে এক প্রেস ব্রিফিং করেন।

প্রেস ব্রিফিংয়ে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের অপারেশন কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আবরার হাসান। এ সময় সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ মনিরুল ইসলাম, কালিগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিথুন সরকার, শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হুমায়ুন কবির মোল্লা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পরে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ ও কোস্টগার্ডের উপস্থিতিতে শ্যামনগর থানা থেকে তাদেরকে হস্তান্তর করা হয়।

প্রেস ব্রিফিংয়ে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আবরার হাসান জানান, সুন্দরবনের মান্দারবাড়িয়া চরে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক জোরপূর্বক ‘পুশইন’ করা ৭৫ জন বাংলাদেশি মুসলিম এবং তিনজন ভারতীয় মুসলিমকে উদ্ধার করেছে কোস্ট গার্ড।

তিনি বলেন, গত শুক্রবার (৯ মে) ভোর রাতে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সুন্দরবনের মান্দারবাড়িয়া চরে ৭৫ জন বাংলাদেশি মুসলিম এবং তিনজন ভারতীয় মুসলিমকে জোরপূর্বক ‘পুশইন’ করা হয়। তাদের অধিকাংশই দীর্ঘদিন যাবৎ ভারতের গুজরাট রাজ্যে বসবাস করে আসছিলেন এবং বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসায় জানা যায়, গত ২৬ এপ্রিল গভীর রাতে ভারতীয় প্রশাসন তাদের বাসা থেকে আটক করে এবং গত ৯ মে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ ভোর রাতে গোপনে তাদের সুন্দরবনের মান্দারাড়ি চরে রেখে যায়।

বিজ্ঞাপন

পরবর্তীতে উক্ত ব্যক্তিরা মান্দারবাড়িয়া চর হতে মান্দারবাড়ি ফরেস্ট অফিসে এসে আশ্রয় নেয়। ফরেস্ট অফিস কর্তৃক কোস্ট গার্ডকে অবহিত করলে গত শনিবার (১০ মে) বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোন অতি দ্রুত ‘পুশইন’ করা ৭৮ জন ব্যক্তিকে উদ্ধার করে প্রয়োজনীয় খাবার ও ঔষধ সামগ্রী সরবরাহ করে।

‘পুশইন’ হওয়া ব্যক্তিরা আরও জানায়, ভারতীয় পুলিশ তাদের বস্তিগুলোতে হানা দেয় এবং বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়। এছাড়াও তাদেরকে পরিবারের সদস্যদের সামনে অমানবিক নির্যাতন করার পাশাপশি পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরও পাশবিক নির্যাতন করে। তারপর তাদের চোখ বেঁধে একটি সামরিক বিমানে এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের অপর একটি সামরিক বিমান যোগে ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় স্থানান্তর করে।
পরবর্তীতে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ জাহাজের মাধ্যমে বাংলাদেশের সুন্দরবনের একটি জায়গায় রেখে যায় এবং জাহাজে অবস্থাকালীন সময়ে শারীরিক নির্যাতন, অমানবিক আচরণ, ধর্মীয় অবমাননাসূচক মন্তব্য করে। এ সময় তারা প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহ করেনি এবং এখন পর্যন্ত তাদের স্ত্রী সন্তানদের সঠিক অবস্থান তারা জানে না।

তিনি আরও বলেন, উদ্ধারকৃত ব্যক্তিদের পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গত রোববার (১১ মে) রাতে সাতক্ষীরা শ্যামনগর থানায় হস্তান্তর করা হয়।

ভারতীয় বিএসএফ ও নৌবাহিনী কর্তৃক ‘পুশইন’কৃত ৭৮ বাংলাদেশি নাগরিকদের মধ্যে ৬৭ জনের বাড়ি নড়াইল জেলার বিভিন্ন গ্রামে। এছাড়া খুলনা জেলার ৬ জন, যশোরের ২ জন এবং সাতক্ষীরা, ঢাকা ও বরিশাল জেলার ১ জন করে লোক রয়েছে। এদের মধ্যে গুজরাটের আহমেদাবাদের বিভিন্ন বস্তিতে থাকতেন ৭০ জন এবং সুরাটে থাকতেন ৮জন।

জন্মসূত্রে ভারতীয় তিনজন হলেন- খুলনার বটিয়াঘাটা থানার ফুলবাড়িয়া গ্রামের খালিদ শেখের ছেলে আব্দুর রহমান (২০), নড়াইল জেলার কালিয়া থানার বিষ্ণুপুর গ্রামের মৃত মুন্না সাহা’র ছেলে মো. হাসান শাহ (২৪) ও একই গ্রামের সোহেল শেখের ছেলে সাইফুল শেখ (১৯)। জন্মসূত্রে এরা তিনজনই ভারতের গুজরাটের নেহেরীনগর, জোপারপচ্চি এলাকার বাসিন্দা। তবে তাদের কাছে ভারতের কোনো বৈধ কাগজ নেই।

এ বিষয়ে শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রনী খাতুন বলেন, ‘বিএসএফ ও ভারতীয় কোস্টগার্ড গত ৯ মে ৭৮ বাংলাভাষী নাগরিককে চোখ বেঁধে বঙ্গপোসাগরের তীরবর্তী মান্দারবাড়িয়া এলাকা একটি চরে ছেড়ে দিয়ে যায়। সেখান থেকে উদ্ধারের পর ১১ মে রাতে কোস্টগার্ডের কাছ থেকে আমরা শ্যামনগর উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ তাদেরকে রিসিভ করি। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ১২ মে সোমবার সকালে তাদেরকে আত্মীয় স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করার কথা ছিল। কিন্তু কাগজপত্র সঠিকভাবে প্রস্তুত না হওয়ায় তাদেরকে সোমবার হস্তান্তর করা সম্ভব হয়নি। রাতে পুলিশ ও আমরা উপজেলা প্রশসন মিলে তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দেওয়ার পাশপাশি থাকার ও খাওয়ার ব্যবস্থা করি।’

তিনি আরও বলেন, ‘৭৮ জনের মধ্যে ৭৫ জন জন্মসূত্রে বাংলাদেশি নাগরিক হওয়ায় মঙ্গলবার তাদেরকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি তিন জনের ভারতীয় নাগরিকত্ব আছে কিন্তু বৈধ কোনো কাগজপত্র নেই। তিনজন ভারতীয় হিসেবে তাদের বিরুদ্ধে থানায় এজাহার দায়ের করা হয়েছে। তাদের সঠিক কাগজপত্র আছে কিনা সে বিষয়ে তদন্ত করে পুলিশ ব্যবস্থা নিবে।’ তবে ওই তিনজনই পৈত্রিক সূত্রে বাংলাদেশি বলে জানান তিনি।

সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ মনিরুল ইসলাম জানান, উদ্ধার হওয়া ৭৮ জনের মধ্যে আব্দুর রহমান, মো. হাসান শাহ ও সাইফুল শেখ তিনজন জন্মসূত্রে ভারতীয় নাগরিক দাবি করায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে সোমবার আদালতের মাধ্যমে তাদেরকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।

সারাবাংলা/এসডব্লিউ

বাংলাদেশি উদ্ধার ভারতীয় মুসলিম উদ্ধার সুন্দরবন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর