Tuesday 13 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট
ভ্যাটের লক্ষ্য বাড়ছে ৮০০০ কোটি টাকা, আসছে ই-ইনভয়েসিং

এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৩ মে ২০২৫ ২৩:০৯

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। ছবি কোলাজ: সারাবাংলা

ঢাকা: আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা আট হাজার কোটি টাকা বাড়ানোর চিন্তা করা হচ্ছে। এ জন্য বাজেটে প্রথমবারের মতো ‘ই-ইনভয়েসিং’ ব্যবস্থা চালুর প্রস্তাব থাকতে পারে। ভ্যাট ফাঁকি প্রতিরোধ করে আরও বেশি রাজস্ব বাড়াতে ভোক্তা পর্যায়ে কেনাকাটার প্রতিটি স্তরে ই-ইনভয়েসিং ব্যবস্থায় যেতে চায় সরকার। সেলক্ষ্যে একটি প্রকল্প প্রস্তুতের পরিকল্পনাও রয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের এক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ‘আসছে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৮৪ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৭৬ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা কমিয়ে ১ লাখ ৭১ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা করা হয়।’

তথ্যমতে, চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত অর্থাৎ অর্থবছরের ৯ মাসে ভ্যাট থেকে আদায় হয়েছে ৯৫ হাজার ৩১১ কোটি টাকা। এই ধারা অব্যাহত থাকলে অর্থবছর শেষে ভ্যাট আদায়ের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ করাও কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রথমবারের মতো বাজেটে ই-ইনভয়েসিং ব্যবস্থা চালুর বিষয়টি উল্লেখ থাকতে পারে জানিয়ে এনবিআরের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘রাজস্ব বাড়াতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) অটোমেশন করা হচ্ছে। তারই অংশ হিসাবে ভ্যাট আদায়ে ই-ইনভয়েসিং ব্যবস্থা চালু করা হবে। এর জন্যে একটি প্রকল্প নেওয়া হতে পারে। পুরো এনবিআর অটোমেশনেই একটি প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। সেখানে ভ্যাটের অটোমেশনে হয়তো ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকতে পারে।’

ওই কর্মকর্তা আরও জানান, বাজেটে ই-ইনভয়েসিং চালুর পরিকল্পনার কথা উল্লেখ থাকবে। সব প্রতিষ্ঠানে ই-ইনভয়েসিং চালু হবে। পিসিআর ও ইএফডি থাকবে কি, থাকবে না- তা নিয়ে এখনো আলোচনা হয়নি।

জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাজেটে ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা আট হাজার কোটি টাকা বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে, এটি আমার কাছে মোটেও উচ্চাবিলাসী মনে হয় না। ভ্যাট ফাঁকি প্রতিরোধ করা গেলে ও সম্প্রসারণের ব্যবস্থা নেওয়া হলে, এটি আদায় করতে তেমন কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘ভ্যাটে আমাদের লিকেজ হয়। জনগণ অনেক জায়গায় ভ্যাট দেয়, কিন্তু সরকার পায় না। কিছু কিছু জায়গা আছে যেখানে ভ্যাট কালেকশন হয় না। দু’টি জায়গাতেই আমাদের হাত দিতে হবে।’

ই-ইনভয়েসিং ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে সিপিডির সম্মানীয় এই ফেলো বলেন, ‘এখন ই-ইনভয়েসিং করতে যাচ্ছে। এর আগে আমরা ইলেক্ট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) করার কথা চিন্তা করছিলাম। পাঁচ বছরে তিন লাখ ইএফডি মেশিন বসানোর পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু ১১ হাজারও বসাতে পারেনি। আমার মনে হয়, বিভিন্নভাবে এগুলো বাড়াতে হবে। শৈথিল্য নিয়ে বাস্তবায়ন করার সময় এখন আমাদের নেই। কারণ আমাদের ট্যাক্স বাড়াতে হবে, আবার মানুষের ওপর থেকে চাপও কমাতে হবে। সেটি করতে গেলে ফাঁকির জায়গাগুলোকে রোধ ও ব্যাপ্তি বিস্তৃত এবং সম্প্রসারণ করতে হবে। সেই হিসাবে ই-ইনভয়েসিং করা হয়েছে। এটি একটি ভালো উদ্যোগ।’

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ভ্যাট তো ভ্যালুর ওপরে নেওয়া। অনেক জায়গায় এগুলো না থাকার কারণে সেলস ট্যাক্স’র মতো হয়ে গেছে। ই-ইনভয়েসিং যদি চালু করা যায়, ব্যবসায়ীদেরই লাভ হওয়ার কথা। কেবলমাত্র যেটুকু ভ্যালু অ্যাড হচ্ছে, সেটুকুরই দায়িত্বে থাকবেন তারা। এখন যেহেতু এই ব্যবস্থা নেই, তাই দিতে গেলেও অনেক বেশি দিতে হয়। আর না দিতে গেলে বিভিন্ন দুর্নীতির আশ্রয় নিতে হয়। আমরা মনে হয় এটি (ই-ইনভয়েসিং) ভালো উদ্যোগ।’

এ বিষয়ে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রির (বিসিআই) সভাপতি ও বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনোয়ারুল আলম চৌধুরী পারভেজ সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভ্যাটের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানোর পরিকল্পনা তো করতেই হবে। তবে নম্বর না বাড়িয়ে যদি এটি করে, এক্সিটিং যারা আছে (বর্তমানে যারা ভ্যাট দেয়) তাদের ঘাড়ে পড়ে যায়। এটা বিপদ বয়ে আনবে। তারা (এনবিআর) যদি নেট বাড়াতে পারে সেটি হবে মঙ্গলজনক। সেটি না করে যারা এখন ভ্যাট দেয় তাদের উপরই বাড়ানো হয় তবে ব্যবসায়ীদের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। বিক্রিও কিন্তু কমে যাবে। ব্যবসায়ীরা হয়রানির শিকার হবেন। তাই ভ্যাটনেট বা পরিধি বাড়ানো এখন খুব গুরুত্বপূর্ণ। আর এনবিআরের সেদিকেই নজর দেওয়া উচিত।’ তবে ই-ইনভয়েসিং নিয়ে এখনই মন্তব্য করতে চাননি এই ব্যবসায়ী। বিষয়টি আরও জেনে ও বুঝেই মন্তব্য করতে চান অন্য ব্যবসায়ীরাও।

তথ্যমতে, দেশে ভ্যাট নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর সবাই আবার ভ্যাট রিটার্ন জমা দেয় না। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই’র নিবন্ধিত ব্যবসায়ী প্রায় সাড়ে তিন কোটি। এসব ব্যবসায়ীর প্রায় সবারই ছোট বড় কোনো না কোনো ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। অথচ এসব প্রতিষ্ঠানের একটি বড় অংশ ভ্যাট জমা দেয় না।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, দেশে অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এক কোটি ১৮ লাখ। অথচ দেশে ভ্যাট নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা মাত্র সাড়ে পাঁচ লাখ। এনবিআরের এক জরিপও বলছে, দেশের ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানই ভ্যাট দেয় না।

প্রসঙ্গত, ইলেকট্রনিক ইনভয়েসিং বা ই-ইনভয়েসিং হলো ইলেকট্রনিক বিলিংয়ের একটি রূপ। এটি ইলেকট্রনিক চালানও বলা হয়ে থাকে। বর্তমান ডিজিটাল যুগে ব্যবসায়ের কার্যক্রম আরও স্বচ্ছ ও কার্যকর করার জন্য ই-ইনভয়েসিং একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি। তবে দেশে পদ্ধতিটি কীভাবে পরিচালিত হবে সেটি এখনো চূড়ান্ত নয়। পদ্ধতিটি প্রথমে প্রকল্প আকারে চালু হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সারাবাংলা/ইএইচটি/পিটিএম

২০২৫-২৬ অর্থবছর ই-ইনভয়েসিং ভ্যাট লক্ষ্যমাত্রা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর