Wednesday 14 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সরকারি মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ কমলো গ্রামীণ ব্যাংকে
৫০ শতাংশের কম চাষযোগ্য জমির মালিক ‘ভূমিহীন ও বিত্তহীন’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৪ মে ২০২৫ ১৬:১২ | আপডেট: ১৪ মে ২০২৫ ১৬:৩২

ঢাকা: গ্রামীণ ব্যাংকে সরকারের মালিকানা হ্রাস এবং ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের ক্ষমতা পরিচালনা পর্ষদের ওপর ন্যস্ত করে ‘গ্রামীণ ব্যাংক (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫’ জারি করেছে সরকার। একই সঙ্গে সংশোধিত অধ্যাদেশে ভূমিহীন ও বিত্তহীনদের সংজ্ঞা প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।  সংজ্ঞায় ৫০ শতাংশের কম চাষযোগ্য জমির মালিককে ভূমিহীন ও বিত্তহীন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

সংশোধিত নতুন অধ্যাদেশটি গত সোমবার (১২ মে) গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এর আগে গত ১৭ এপ্রিল অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ গ্রামীণ ব্যাংক (অধ্যাদেশ) সংশোধন প্রস্তাবটি নীতিগত অনুমোদন দেয়।

সংশোধিত অধ্যাদেশে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠার বিষয়ে ধারা-৪ এর উপধারা-১ প্রতিস্থাপন করে বলা হয়েছে, “গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ ১৯৮৩-এর মাধ্যমে স্থাপিত গ্রামীণ ব্যাংক, যা ‘গ্রামীণ ব্যাংক প্রকল্প’ থেকে উদ্ভূত, এমনভাবে বহাল থাকবে যেন তা এ আইনের অধীনে স্থাপিত হয়েছে।”

গ্রামীণ ব্যাংক প্রকল্পের ব্যাখা যুক্ত করে এতে বলা হয়েছে, “১৯৭৬ সালে চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারি থানার জোবরা গ্রামে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের গ্রামীণ অর্থনীতি কর্মসূচির আওতায় গৃহীত গ্রামীণ ব্যাংক প্রকল্প; যা পরবর্তীতে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক অনুমোদিত হয় এবং এতে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংক অংশগ্রহণ করে।”

অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, গ্রামীণ ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন হবে ৩০০ কোটি টাকা। এতে সরকারের বা সরকার পরিচালিত বা নিয়ন্ত্রিত একক বা যৌথভাবে মোট শেয়ারের পরিমাণ হবে ১০ শতাংশ। অবশিষ্ট ৯০ শতাংশ শেয়ায়ের মালিক হবে ব্যাংকের ঋণ গ্রহীতা (শেয়ার হোল্ডার)। ব্যাংকের ঋণগ্রহীতারা ক্রমান্বয়ে পরিশোধিত মূলধন বাড়াবেন। পূর্বে এতে সরকারের শেয়ারের পরিমাণ ছিল ২৫ শতাংশ এবং ব্যাংকের ঋণ গ্রহীতাদের (শেয়ার হোল্ডার) ছিল ৭৫ শতাংশ।

বিজ্ঞাপন

অধ্যাদেশ অনুযায়ী ব্যাংকের ১৩ জন পরিচালনা পর্ষদ সদস্যদের মধ্যে ব্যাংকের ঋণ গ্রহীতা (শেয়ার হোল্ডার) থেকে ৯ জন পরিচালক বিধি অনুযায়ী নির্বাচিত হবেন। অবশিষ্ট চার জনের মধ্যে সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের একজন মনোনীত প্রতিনিধি থাকবেন। এর আগে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদে সরকারের মনোনীত সদস্য বা পরিচালক ছিলেন তিনজন। সংশোধিত অধ্যাদেশে এ সংখ্যা কমিয়ে একজনে নামিয়ে আনা হয়েছে।

সংশোধন অনুযায়ী, পর্ষদের অপর তিনজনকে মনোনয়ন দেবেন নির্বাচিত ৯ পরিচালক। এদের মধ্যে একজন হবেন গ্রামীণ অর্থনীতি বা নারীর ক্ষমতায়ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ বা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে গবেষণা কাজে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক; একজন নারী সনদপ্রাপ্ত হিসাববিদ (সিএ) এবং একজন নারী অধিকার বিষয়ক বিশেষজ্ঞ নারী গবেষক বা নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় অবদানের জন্য স্বীকৃতিপ্রাপ্ত কোনো নারী বা নারী অধিকার বিষয়ে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন নারী আইনজীবী।

অধ্যাদেশে গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি’র বয়স সর্বোচ্চ ৬৫ বছর করা হয়েছে। পূর্বে এটি ছিল ৬০ বছর।

অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, পর্ষদের মেয়াদ হবে তিন বছর। আগেও তাই ছিল। একজন পরিচালক পরপর দুই মেয়াদে পরিচালক থাকতে পারবেন। তিন বছরের বিরতি দিয়ে আবার তাদের পরিচালক হওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। তবে নতুন পর্ষদ দায়িত্ব গ্রহণ না করা পর্যন্ত পুরনোরা দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।

অন্যান্যের মধ্যে পরিচালনা বোর্ড কর্তৃক পরিচালকদের মধ্যে থেকে চেয়ারম্যান নিয়োগ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগে বোর্ড কর্তৃক ৩ বা ৫ সদস্যের বাছাই কমিটি গঠন ও এমডি পদ ৩ মাস শূন্য থাকলে বোর্ডের সিদ্ধান্তে নিয়োগ এবং চেয়ারম্যান-এমডি’র পদত্যাগপত্র বোর্ড বরাবর দেওয়ার বিধান করা হয়েছে। সরকার মনোনীত পরিচালক সরকারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেবেন এবং সরকার এটি গ্রহণ করলে ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ড কর্তৃক তা গৃহীত হবে।

গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যানের পদ শূন্য হলে বা তিনি দায়িত্ব পালনে অক্ষম হলে পর্ষদ সদস্যরা এমডি বাদে অন্য কোনো পরিচালককে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনের অনুমোদন দিতে পারবেন।

সরকারি সূত্র মতে, আগে গ্রামীণ ব্যাংক কেবল ভূমিহীনদের জন্য কাজ করত। এখন ইউনিয়ন ও পৌরসভা উভয় পর্যায়েই বিত্তহীনদের নিয়ে কাজ করবে।

ভূমিহীন বা বিত্তহীন ব্যক্তির সংজ্ঞা 

সংশোধিত অধ্যাদেশে পূর্বের ‘ভূমিহীন বা বিত্তহীন ব্যক্তি’র সংজ্ঞা প্রতিস্থাপন করে বলা হয়েছে- “ভূমিহীন বা বিত্তহীন ব্যক্তি হবেন সেরূপ ব্যক্তি- যিনি বা যার পরিবার ৫০ শতাংশের কম চাষযোগ্য জমির মালিক; কিংবা যিনি বা যার পরিবার এরূপ স্থাবর ও অস্থাবর উভয় ধরনের সম্পত্তির মালিক যার মূল্য তিনি যে ইউনিয়নে বাস করেন সেই ইউনিয়নের বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী ১ একর চাষযোগ্য জমির মূল্যের অধিক নয়;”

“যিনি বা যার পরিবার এরূপ এলাকায় বসবাস করেন, যা পূর্বে ইউনিয়ন পরিষেদের অন্তর্ভূক্ত থাকলেও পরবর্তীতে তা পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশনের অন্তর্ভূক্ত হয়েছে, এক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশনের আওতাভুক্তির আগে যার সম্পত্তির পরিমাণ উপরে উল্লেখিত সম্পত্তি-সীমার কম ছিল এবং সিটি কর্পোরেশনের অন্তর্ভূক্তির পর নতুন করে কোনা জমির মালিক হন নাই;” এবং

“যিনি বা যার পরিবার কোনো পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় অনূর্ধ্ব তিন বছর যাবৎ বসবাস করছেন, কিন্তু সেখানে তাদের মালিকানাধীন কোনো জমি নাই এবং যার বার্ষিক আয়ের পরিমাণ সময় সময় সরকার কর্তৃক নির্ধারিত আয়কর সীমার অধিক নয়।”

সারাবাংলা/আরএস

গেজেট প্র গ্রামীণ ব্যাংক (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫’