ঢাকা: আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে বেশকিছু নিত্যপণ্যে উৎসে কর কমতে পারে। প্রায় ১০ টিরও বেশি নিত্যপণ্যে উৎসে কর অর্ধেক কমানোর পরিকল্পনা করছে সরকার। এতে বাজারে এসব পণ্যের দাম কিছুটা হলেও কমবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের এক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ‘এবারের বাজেটে বেশকিছু নিত্যপণ্যে কর ছাড় থাকছে। বর্তমানে এসব পণ্যে উৎসে কর ১ শতাংশ রয়েছে। তা অনেকটাই কমে যাবে।’ তিনি বলেন, ‘নিত্য পণ্যের মধ্যে ধান, চাল, গম, মাছ, মাংস, মটর, ছোলা, মসুর, আদা, হলুদ, তেজপাতা ও পাটপণ্যে উৎসে কর কমবে।’
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘কেউ যদি ১০০ টাকার ধান সরবরাহ করে সেখানে কর হিসাবে ১ টাকা কাটা হয়। যারা হাজার হাজার মেট্রিক টন ধান সাপ্লাই করে, তাদের ক্ষেত্রে এই ছাড় অনেক উপকার বয়ে আনবে। তাদের জন্য এই ছাড়ও অনেক।’
এদিকে নিত্যপণ্যে উৎসে কর কমানোর বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসাবে দেখছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, এর ফলে কিছুটা হলেও সহনীয় থাকবে মূল্যস্ফীতি। আর এসব পণ্যে উৎসে কর কমার প্রকৃত প্রভাব যাতে জনগণ পায় সরকারকে তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন ভোক্তাদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনের নেতারা।
জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. তৌফিকুল ইসলাম খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘নিত্যপণ্যে উৎসে কর কমানো ভালো। এসব পণ্যের উৎসে কর কমালে ব্যবসায়ীদের হাতে অর্থের সরবরাহ বাড়বে। তখন ওই অর্থকে তারা ব্যবসার বিনিয়োগ হিসাবে ব্যবহার করতে পারবে। ব্যবসায়ীদের হাতে অর্থের সক্ষমতা বাড়বে। এটি ভালো উদ্যোগ। আর এ ধরণের পণ্যগুলো আমদানির ক্ষেত্রে ব্যবসা খরচ কিছুটা হলেও কমবে।’
উৎসে কর কমানোয় মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব পড়বে কি না? জানতে চাইলে ড. তৌফিকুল বলেন, ‘যেসব পণ্যের কথা বলা হচ্ছে, এর মধ্যে মাছ-মাংস ছাড়া সবই আমদানিকৃত পণ্য। গমের পুরোটিই তো আমদানি করতে হয়। চালের বিষয়টি হচ্ছে, এ বছরের উৎপাদন কত সেটিও আমরা জানি না। আবার সরকারও সেভাবে চাল কিনতে পারেনি। আমদানি করেই হয়তো মজুদ বাড়াতে হবে। বোরো আসার পরে চালের দাম সম্প্রতি কিছুটা কমেছে। তবে পুরো সময় জুড়ে চালের দাম অনেকটাই বেশি ছিল। চাল আমদানি করে বাজার স্থিতিশীল করার মাধ্যমে মূল্যস্ফীতিকে আরও একটু সহনীয় রাখতে হয়তো এ ধরণের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’
আরও পড়ুন
- আসছে বাজেটে নাও বাড়তে পারে সিগারেটের দাম
- পোশাক খাতে করপোরেট কর বাড়ছে, শঙ্কায় উদ্যোক্তারা
- ভ্যাটের লক্ষ্য বাড়ছে ৮০০০ কোটি টাকা, আসছে ই-ইনভয়েসিং
- দ্বিগুণ ভ্যাট প্রস্তাবের পরিকল্পনা, বাড়তে পারে ফ্রিজ-এসির দাম
এ বিষয়ে ভোক্তাদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন সারাবাংলাকে বলেন, ‘এটি খুবই ভালো উদ্যোগ। উৎসে কর কমলে দাম কিছুটা হলেও কমে আসবে। তবে দেশের ব্যবসায়ীদের প্রবণতা হচ্ছে, কোনো কিছুতে কর বা ভ্যাট বাড়লে সঙ্গ সঙ্গে দাম বাড়ে; কিন্তু কর বা ভ্যাট কমলে, দাম কমায় না। তখন যুক্তি দেয়, কর কিছু কমলেও অন্যান্য উপকরণের দাম বেশি থাকায় উৎপাদন খরচ বেশি। সবমিলিয়ে কর কমেলও তারা দাম কমায় না।’
ক্যাবের এই নেতা আরও বলেন, ‘সরকার যে কারণে কর বা ভ্যাট কমালো কিংবা কমাচ্ছে, সেই সুবিধা যাতে জনগণ ভোগ করতে পারে, সরকারকেই তা নিশ্চিত করতে হবে।’
প্রসঙ্গত, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর প্রথমবারের মতো বাজেট দিতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করা হবে আগামী ২ জুন। এবার অধ্যাদেশ আকারে এই বাজেট জারি হবে। রেওয়াজ অনুযায়ী জুনের প্রথম বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করা হয়ে থাকে। সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা শেষে ৩০ জুন তা পাস হয়। তবে এবার জাতীয় সংসদ না থাকায় সেই সুযোগ নেই। বাজেটোত্তার সংবাদ সম্মেলন, সিপিডিসহ নানা সংগঠনের প্রতিক্রিয়া ও ব্যবসায়ীদের সুপারিশে পরবর্তী সময়ে অধ্যাদেশে পরিবর্তন আনার সুযোগ থাকতে পারে। এমনটিই জানিয়েছেন এনবিআরের বাজেট সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এদিকে, বাজেট প্রণয়ের শেষ মুহূর্তের কাজ চলছে। বাজেট প্রণয়নকে সামনে রেখে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত এনবিআর কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৃহস্পতিবার (১৫ মে) বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। এই বৈঠকে বাজেটসংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলোর অনুমোদন মিলতে পারে। আর বাজেট নিয়ে আগামী ১৯ মে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টার চূড়ান্ত অনুমোদনের পর অধ্যাদেশ আকারে আগামী ২ জুন জারি হবে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট।