পাবনা: সচরাচর আমরা ভোটের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি কিংবা বিভিন্ন সংগঠনের নির্বাচন হতে দেখে আসছি। কিন্তু কবরস্থানের কমিটি নিয়ে প্রচার-প্রচারণা, হৈ চৈ, উত্তেজনা আগে দেখা যায়নি। শুনলে অবাক হবেন- এবার নির্বাচনের হাওয়া লেগেছে পাবনার চাটমোহরের কবরস্থানেও।
অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, উত্তরের এই জনপদে একটি কবরস্থান কমিটির নির্বাচনের এমন উদ্যোগ ইতোমধ্যেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হবেন কবরস্থান কমিটির পরবর্তী সভাপতি—এমন খবরে সবার মধ্যে কৌতূহল এবং আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় একটি কবরস্থান পরিচালনা কমিটির সভাপতি পদ নির্বাচনের জন্য ভোটগ্রহণের খবরে দেশব্যাপী চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। পাবনার চাটমোহরে এই নির্বাচনের আয়োজন চলছে। আগামী ২৪ মে শনিবার গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। স্থানীয় বিএনপির নেতারা সভাপতির পদ দখল করতে মরিয়া হয়ে ওঠায় কবরস্থানের এই নির্বাচন।
জানা গেছে, ‘জান্নাতুল বাকি’ কবরস্থান পরিচালনা কমিটি গঠনে ‘সভাপতি’ পদ নিয়ে স্থানীয় বিএনপির মধ্যে গ্রুপিং সৃষ্টি হয়। বেশ কয়েকজন সভাপতি হতে আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং প্রকাশ্য দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত হয়।
এরইমধ্যে এই নির্বাচনকে সামনে রেখে গঠন করা হয়েছে নির্বাচন কমিশন। ঘোষণা করা হয়েছে তফশিল। শুধু কী তাই, দুইজন প্রার্থী মনোনয়ন কেনার পর দাখিল করেছেন। সেই সঙ্গে দেওয়া হয়েছে প্রতীক বরাদ্দ। দুই প্রার্থী নিজেদের বিজয় নিশ্চিত করতে বিভিন্ন ব্যানার ফেস্টুন তৈরি করে টানানো হয়েছে এলাকার বিভিন্ন স্থানে। কে হবেন এই কবরস্থানের পরিচালনা পর্ষদের কর্ণধার, তা জানতে এখন অপেক্ষা ভোটগ্রহণের দিনের।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নে বালুদিয়ার, মহরমখালী ও জগতলা (আংশিক) তিন গ্রামের সমাজ নিয়ে গঠিত ‘জান্নাতুল বাকি’ কবরস্থান কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর স্থানীয়ভাবে সভাপতিসহ কমিটি গঠনের জন্য তোড়জোড় শুরু হয়। স্থানীয় বিএনপি নেতারা সভাপতির পদ দখল করতে মরিয়া হয়ে ওঠেন।
তাহলে সভাপতি কে হবেন? এমন প্রশ্নে দুই পক্ষের মধ্যে তৈরি হয় উত্তেজনা। পরে বিষয়টি থানা পর্যন্ত গড়ায়। এলাকাবাসী থানার ওসির কাছে দাবি জানান ভোটের মাধ্যমে সভাপতি নির্বাচন করা হোক। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনের আয়োজন করা হয়।
কবরস্থান কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন মাস্টার কে নির্বাচন কমিশন প্রধান করে ৭ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়। এরপর ঘোষণা করা হয় তফশিল। বালুদিয়ার, মহরমখালী ও জগতলা (আংশিক) তিন গ্রামের প্রতিটি পরিবার থেকে একজন করে পুরুষকে ভোটার করে ইতোমধ্যে ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। মোট ৮০০ জন ভোটার গোপন ব্যালটে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে আগামী তিন বছরের জন্য কবরস্থান কমিটির ‘সভাপতি’ নির্বাচিত করবেন।
আগামী ২৪ মে শনিবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কবরস্থান সংলগ্ন ঈদগাহ্ ময়দানে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনের মতোই এই নির্বাচন এলাকায় উৎসাহের আমেজ সৃষ্টি করেছে। চলছে প্রার্থীদের প্রচারণা আর আপ্যাায়ন। ভোটারদের মন জয় করতে দিচ্ছেন কবরস্থান উন্নয়নের বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি।
তবে কেউ কেউ ভিন্নমত পোষণ করে বলেন, একটি কবরস্থান কে কেন্দ্র করে এই ভোটের রাজনীতি তৈরি হয়েছে তা প্রত্যাশিত নয়। মানুষের শেষ নিশ্বাসের পরেই স্থান হয় একটি কবরস্থানে। সেটা নিয়েও রাজনীতি, অর্থবাণিজ্য এটা কাম্য নয়। এই মূল্যবোধ থেকে আমাদেরকে বেরিয়ে আসতে হবে।
নির্বাচন কমিশন প্রধান ও কবরস্থান কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন মাস্টার বলেন, জান্নাতুল বাকি কবরস্থান পরিচালনা কমিটি গঠনে ‘সভাপতি’ পদ নিয়ে স্থানীয় বিএনপির মধ্যে গ্রুপিং সৃষ্টি হয়। বেশ কয়েকজন সভাপতি হতে আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং প্রকাশ্য দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন। এমন পরিস্থিতিতে আমরা চাটমোহর থানার অফিসার ইনচার্জের (ওসি) স্মরণাপন্ন হই। তিনি নির্বাচনের পরামর্শ দেন। অতঃপর আমাকে নির্বাচন কমিশন প্রধান করে ৭ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন কমিটি গঠন করা হয়।
তিনি আরও জানান, নির্বাচনী তফশিল ঘোঘণা করার পর সভাপতি পদের জন্য ৩০ হাজার টাকা জমা দিয়ে দুইজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র ক্রয় করার পর দাখিলও করেছেন। বাছাই শেষে তাদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রার্থী দুজন হলেন আব্দুল কুদ্দুস (ছাতা) এবং শরিফুল ইসলাম (চেয়ার)। মনোনয়নপত্র বিক্রি বাবদ প্রাপ্ত ৬০ হাজার টাকায় নির্বাচন পরিচালনা করা হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চাটমোহর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মঞ্জুরুল আলম জানান, কবরস্থানের সভাপতি নির্বাচন করা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ হয়। পরে পূর্বের কমিটি বিষয়টি আমাকে জানায়। এখনো দুইপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে বলে জেনেছি। ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান ওসি।
সভাপতি পদের দুই প্রার্থী আব্দুল কুদ্দুস (ছাতা) এবং শরিফুল ইসলাম (চেয়ার) নিজেদের জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। নির্বাচনের দিন প্রশাসনের কঠোর নজরদারি দাবি করেন তারা।