ঢাকা: জাতীয় স্বার্থ উপেক্ষা করে মানবিক করিডর দেওয়ার ক্ষেত্রে আপত্তি জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। শুক্রবার (১৬ মে) সংগঠনটির আমীর আল্লামা শাহ্ মুহিব্বুল্লাহ্ বাবুনগরী ও মহাসচিব আল্লামা শায়েখ সাজিদুর রহমান এক যৌথ বিবৃতিতে এ আপত্তির কথা জানান।
বিবৃতিতে তারা বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে তথাকথিত ‘মানবিক করিডোর’ স্থাপনের লক্ষ্যে বাংলাদেশের অংশগ্রহণে প্রস্তাবিত শর্তসাপেক্ষ কোনো আন্তর্জাতিক চুক্তির খবরে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা মনে করি, যুক্তরাষ্ট্রসহ কিছু বিদেশি শক্তির পৃষ্ঠপোষকতায় গঠিত এই উদ্যোগ কেবল মানবিক সহায়তার মোড়কে উপস্থাপিত হলেও এর অন্তর্নিহিত লক্ষ্য অনেক বেশি জটিল এবং আশঙ্কাজনক।
তারা বলেন, আমরা মনে করি এ উদ্যোগে সন্ত্রাসী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন, যেমন- আরাকান আর্মি এবং অন্যান্য দল উপকৃত হবে। যারা বিগত বছরগুলোতে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর সহিংসতা চালিয়ে এসেছে। এই পরিস্থিতি শুধু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা নয়, বাংলাদেশের জাতীয় সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্যও গুরুতর হুমকি তৈরি করছে।
তারা আরও বলেন, এই প্রেক্ষাপটে আমরা প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নিকট কয়েকটি প্রশ্ন উত্থাপন করছি, যার উত্তর জাতি আজ জানতে চায়। প্রশ্নগুলো হলো-
- আপনি কি এই প্রস্তাবিত করিডর ও এর কার্যক্রম বিষয়ে কোনো আন্তর্জাতিক অংশীদার বা সংস্থার সঙ্গে সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেছেন? যদি করে থাকেন, দয়া করে জাতির সামনে তা স্পষ্ট করুন।
- আপনি কি এমন কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারেন, যাতে এ করিডর আরাকান আর্মি বা তাদের মতো সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর পক্ষে ব্যবহৃত হবে না এবং রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি মুসলমানদের স্বার্থের বিরুদ্ধে যাবে না?
- আপনি কি মনে করেন, এই উদ্যোগটি বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের ইসলামি, মানবিক ও ন্যায্য অবস্থানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ?
- রোহিঙ্গা মুসলমানদের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা ও স্বাধীনতায় জীবনযাপন সম্পর্কে আপনি কী নিশ্চয়তা দিতে পারেন?
- আপনি কি নির্দিষ্ট সময়সীমা দিয়ে প্রতিশ্রুতি দিতে পারেন যে, আশ্রয় নেওয়া প্রতিটি রোহিঙ্গা নাগরিক নিরাপদে নিজ দেশে ফিরে গিয়ে শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারবে?
- আমরা উদ্বিগ্ন যে, এই করিডোর প্রকল্পের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের ভেতরে সক্রিয় বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোর মনোবল বাড়তে পারে। আপনি কি নিশ্চিত করতে পারবেন যে এতে দেশের অখণ্ডতা ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে না?
- আপনি কি নিশ্চয়তা দিতে পারবেন যে, এই করিডর কোনো বিদেশি শক্তি বা গোষ্ঠীর দ্বারা বাংলাদেশে ভবিষ্যতে কোনো অস্থিতিশীলতা, সংঘাত বা যুদ্ধাবস্থা সৃষ্টির পথ প্রশস্ত করবে না?
সংগঠনটির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুর হক ইসলামাবাদীর সই করা ওই বিবৃতিতে বলা হয়, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ স্পষ্টভাবে ঘোষণা করছে, জাতীয় পরামর্শ, রাজনৈতিক ঐকমত্য ও সংসদীয় আলোচনাবিহীন কোনো সিদ্ধান্ত— বিশেষত যা দেশের নিরাপত্তা, ধর্মীয় সম্প্রীতি ও ভৌগলিক অখণ্ডতাকে হুমকির মুখে ফেলে, আমরা তা কোনোভাবেই গ্রহণ করব না। আমরা ড. ইউনূসের প্রতি আহ্বান জানাই, তিনি যেন তার ভূমিকা ও অবস্থান জাতির সামনে স্বচ্ছভাবে উপস্থাপন করে বাংলাদেশের মানুষের ন্যায্য উদ্বেগগুলোর যথাযথ জবাব দেন।