Saturday 17 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ভারতের সম্প্রচার মাধ্যম দর্শকদের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ ঘোষণা’ করেছে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
১৭ মে ২০২৫ ২০:০৭ | আপডেট: ১৭ মে ২০২৫ ২১:০৭

ছবি: সংগৃহীত

ভারতের গণমাধ্যমে সম্প্রতি ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ নিয়ে নানা ধরণের বিভ্রান্তিমূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বলে উল্লেখ করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সাপ্তাহিক পত্রিকা দ্যা ইকোনোমিস্ট। আর তাদের সংবাদ প্রকাশ অনেকটাই দর্শকদের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ ঘোষণা’ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (১৫ মে) প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, যারা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক রাতের বিমান যুদ্ধের ঘটনাগুলো ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন তারাও হয়তো কিছু ভয়াবহ ঘটনা মিস করেছেন। তারা হয়তো জানেন না যে, করাচি বন্দরে ভারতীয় নৌবাহিনী হামলা চালিয়েছে; ভারতের সেনাবাহিনী আন্তর্জাতিক সীমান্ত অতিক্রম করেছে; পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বাঙ্কারে পালিয়ে গেছেন; তাদের সেনাপ্রধানকে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে। এই ঘটনাগুলো ভারতের সংবাদপত্রে, এমনকি পশ্চিমা জার্নালে কোথাও পাওয়া যায়নি। কেন?

বিজ্ঞাপন

কারণ হিসেবে সেখানে বলা হয়, এসব ঘটনা আসলে ঘটেই নি। কিন্তু তা ভারতের সম্প্রচারমাধ্যমকে থামাতে পারেনি। এমন একটি যুদ্ধের পরিবেশে, পেছনে সাইরেনের শব্দ ও আকাশে কার্টুন ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত, এসবই তারা ‘খবর’ হিসেবে পরিবেশন করেছে। এমনকি এক উপস্থাপক দর্শকদের আশ্বস্ত করেছেন— ‘সব তথ্য যাচাই করেই প্রচার করা হচ্ছে।’

ভারতীয় টেলিভিশন সংবাদ অনেক আগেই বাস্তবতার জগৎ থেকে সরে গেছে। প্রতি রাতেই সরকার ও প্রধানমন্ত্রীকে প্রশংসায় ভাসানো হয়, বিরোধীদের নিন্দা করা হয়, সংখ্যালঘু ও বিদেশিদের অবজ্ঞা করা হয় এবং স্টুডিওর অতিথিদের অপমান করা হয়, যদি তারা সামান্যও ভিন্নমত পোষণ করেন।

বিজ্ঞাপন

দ্যা ইকোনোমিস্টের প্রতিবেদনটিতে বলা হয়— এই জাতীয়তাবাদী শোরগোল দর্শকদের একাংশের কাছে যেন ‘ওয়ার্ল্ড রেসলিং এন্টারটেইনমেন্ট’-এর স্যুট পরা সংস্করণ।

সেখানে আরও বলা হয় এ ধরণের বিভ্রান্তিমূলক সংবাদের অগ্রদূত হিসেবে ছিলেন টিভি সঞ্চালক অর্ণব গোস্বামী। যিনি রীতিমতো চিৎকার করে বলেন, ‘এই তো ট্রাম্পের চিরাচরিত হস্তক্ষেপ… আমরা ওদের গুঁড়িয়ে দিচ্ছিলাম… আমি এটি (যুদ্ধবিরতি) মানি না। আমরা শেষ করেই ছাড়বো।’ এরপর ক্ষুব্ধ জাতীয়তাবাদীরা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভারতের পররাষ্ট্রসচিব ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে গালিগালাজ করতে থাকেন।

মনীষা পাণ্ডে নামের একজন বিশ্লেষক বলেন, ‘আপনি যদি নিজেকে জাতীয়তাবাদী চ্যানেল দাবি করেন, তাহলে অন্তত জাতীয় স্বার্থে কাজ করুন।’ কিন্তু গত ৭ মে কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর ‘অযাচিত সন্ত্রাসী হামলার’ জবাবে ভারত পাকিস্তানে হামলা চালানোর পর থেকে ভারতীয় টিভি চ্যানেলগুলো বরং উলটো কাজই করেছে।

দেশের ভেতরে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো ক্ষতি করেছে নিজ দর্শকদেরও। ড্রোন হামলা, গণআত্মঘাতী বিস্ফোরণ ইত্যাদি নিয়ে নানা গুজব ছড়িয়েছে। সীমান্তবর্তী জনগণ, যারা প্রকৃত আক্রমণের মুখোমুখি হচ্ছিল, তারা সঠিক তথ্য থেকে বঞ্চিত ছিল। পত্রিকাগুলো তুলনামূলক নির্ভরযোগ্য হলেও সংঘর্ষগুলো রাতে ঘটায় সংবাদ দেরিতে পৌঁছেছে। ফলে সঠিক তথ্য দিয়েছেন কেবল কয়েকজন সচেতন নাগরিক ও সরকারি ফ্যাক্ট-চেকিং বিভাগ।

এই বিভ্রান্তি থেকে বিজেপিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কারণ টেলিভিশন দেখে ভারতীয় জনগণ ভেবেছিল, তাদের দেশ পাকিস্তানকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে। সবাই ধরে নিয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দৃঢ় নেতৃত্বে পাকিস্তানি সন্ত্রাসবাদ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। কিন্তু ১০ মে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন হঠাৎ যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন, তখন সবাই হতাশায় ভেঙে পড়ে।

এমন মুহূর্তে মিডিয়ার কাজ হওয়া উচিত ছিল রাষ্ট্রের বার্তা জনতার ও বিশ্বের কাছে পৌঁছানো, কিন্তু ভারতীয় টিভিগুলো সেক্ষেত্রে একেবারেই ব্যর্থ হয়। তার ফলে, ভারত আক্রান্তের পরিবর্তে আগ্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।

সারাবাংলা/এমপি

বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ভারতীয় সংবাদমাধ্যম