Saturday 17 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশি পণ্য আমদানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট 
১৭ মে ২০২৫ ২৩:৫২ | আপডেট: ১৭ মে ২০২৫ ২৩:৫৫

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ থেকে রফতানি হওয়া বেশ কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে আমদানি নীতিতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে ভারত। দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলের স্থলবন্দরগুলো দিয়ে বাংলাদেশি পণ্য প্রবেশে এ বিধিনিষেধ জারি করেছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে তৈরি পোশাকসহ একাধিক পণ্যের রফতানি কার্যত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

শনিবার (১৭ মে) এএনআই নিউজের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এ ছাড়া শনিবার দেশটির বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড (ডিজিএফটি) থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে নতুন বন্দর-সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়েছে, যা তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হয়েছে বলেও জানানো হয়।

বিজ্ঞাপন

ভারতের ফরেন ট্রেড পলিসিতে যুক্ত হওয়া নতুন ধারা ১৯ অনুযায়ী, বাংলাদেশি পণ্য আমদানিতে নির্দিষ্ট বন্দর ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা চালু করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই নিষেধাজ্ঞা ফলে আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, মিজোরাম ও পশ্চিমবঙ্গের ফুলবাড়ি এবং চ্যাংরাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে আর বাংলাদেশি পণ্য ঢুকতে পারবে না। এসব বন্দর দিয়েই বাংলাদেশ ৯৩ শতাংশ রফতানি করত।

তবে নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন এসব পণ্য শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা বন্দর কিংবা মহারাষ্ট্রের নাভা শেভা বন্দর দিয়ে যেতে পারবে।

এই নিষেধাজ্ঞার ফলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, প্লাস্টিক, মেলামাইন, আসবাবপত্র, জুস, কোমল পানীয়, বেকারি ও প্রসেসড ফুডসহ একাধিক রফতানি পণ্য ভারতে পাঠাতে বাধার মুখে পড়বে। সবচেয়ে বেশি ধাক্কা আসবে তৈরি পোশাক খাতে, যেখানে প্রতিবছর প্রায় ৭৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য ভারতে রফতানি হয়ে থাকে।

তবে নতুন নিয়মে মাছ, এলপিজি, ভোজ্যতেল ও কুচানো পাথর আমদানির ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই। তাছাড়া, বাংলাদেশ থেকে নেপাল ও ভুটানে রফতানি হওয়া ট্রানজিট পণ্যের ক্ষেত্রেও এই সীমাবদ্ধতা কার্যকর হবে না।

বিজ্ঞাপন

প্রতিবেদনে ভারতীয় কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ একতরফাভাবে ভারতের বাজারে প্রবেশাধিকার পেলেও ভারতীয় পণ্যের ক্ষেত্রে একই ধরনের সুবিধা দেয়নি। ভারতীয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতেই এই সিদ্ধান্ত। পারস্পরিকতার ভিত্তিতে চলতে হবে, নাহলে একতরফা ছাড় আর নয়।’

ভারত আরও অভিযোগ করেছে, ট্রানজিট ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রতি কিলোমিটারে টনপ্রতি ১ দশমিক ৮ টাকা ফি নিচ্ছে, যেখানে দেশের অভ্যন্তরীণ হার টনপ্রতি ০ দশমিক ৮ টাকা। এতে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের শিল্প খাত মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলেও দাবি করেছে তারা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘদিনের সৌহার্দ্যপূর্ণ ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্যিক সম্পর্ক এই ঘটনায় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। বাংলাদেশের জন্য এটি একদিকে বড় আর্থিক ধাক্কা হলেও, ভারতের স্থানীয় উৎপাদকদের জন্য এটি হতে পারে বাজার দখলের সুবর্ণ সুযোগ।

এ বিষয়ে বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক ও ডেনিম এক্সপার্ট লিমিটেডএর অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল সারাবাংলাকে বলেন, ‘দুটি সমুদ্র বন্দর কলকাতা ও মুম্বাই ব্যতিত বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানি সীমিত করেছে ভারত; সকল স্থলবন্দর থেকে আমদানি বন্ধ। ভারতের উত্তর-পূর্ব স্থলবন্দরগুলোতে বাংলাদেশি পণ্যের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এমন হটকারী সিদ্ধান্ত স্বভাবতই দুই দেশের মাঝে বাণিজ্যিক সম্পর্ক কিছুটা হলেও আরও অবনতি করবে। বিশ্ব বাণিজ্য যখন বিভিন্ন সমস্যাই জর্জরিত ঠিক তখন এ ধরনের পালটাপালটি বাণিজ্যিক দূরাত্মীকরণ সিদ্ধান্ত ক্ষতির মাত্রা উভয়েরই আরও বাড়াবে।

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেল পোশাক এখন যেতে আগের থেকে আরও বেশি সময় লাগবে, খরচ বাড়বে আর তার মানে এক্সপোর্ট কিছুটা হলেও কমবে বাংলাদেশে। ভারতে বাংলাদেশ গড়ে বৎসরে অর্ধ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এক্সপোর্ট করে থাকে।’

মহিউদ্দিন রুবেল আরও বলেন, ‘যেহেতু ভারত বাংলাদেশের একটি বড়ো ক্রেতা এবং তৈরি পোশাক এক্সপোর্ট বাড়তির দিকে ছিল, সেহেতু এইটা একটু হলেও আমাদের চিন্তার কারণ নতুন করে হলো। যদিও ভুটান বা নেপালের ট্রানশিপমেন্ট এটাতে কার্যকর হবে না বলে জানা গেছে তবুও সামগ্রিকভাবে ব্যবসায়িক সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে। যেহেতু তৈরি পোশাক ছাড়াও আরও পণ্য যেমন ফল, কারবোনেটেড ড্রিংক, প্লাস্টিক এবং পিভিসি ফিনিশড মালামাল এবং উডেন ফার্নিচার ভারতের উত্তর-পূর্ব স্থলবন্দরগুলোতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে, সুতরাং সামগ্রিক ব্যবসায়িক সম্পর্ক এবং আর্থিক ক্ষতির ও আশঙ্কা থেকেই যায়।’

সারাবাংলা/ইএইচটি/এইচআই

তৈরি পোশাক বাংলাদেশি পণ্য ভারত ভারত-বাংলাদেশ ভারতের নিষেধাজ্ঞা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর