Sunday 18 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সাম্য হত্যার ঘটনায় দিনভর উত্তাল ছিল ঢাবি ক্যাম্পাস

ঢাবি করেসপন্ডেন্ট
১৮ মে ২০২৫ ২১:৫৪

সাম্য হত্যাকাণ্ডের বিচার ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে শাহবাগ মোড়ে ছাত্রদলের অবরোধ। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের হল পর্যায়ের নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার ঘটনায় দিনব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে হয়েছে মানবন্ধন, মিছিল ও সড়ক অবরোধ। বিকেলে শাহবাগেও ছাত্রদলের ডাকে উত্তাল ছিল রাজপথ।

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে এক বৈঠকে সাম্য হত্যা মামলা গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তরের কথা জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম।

বিজ্ঞাপন

আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দিনভর সাম্যের শিক্ষক, সহপাঠী, বন্ধু ও রাজনৈতিক সহযোদ্ধাদের বিভিন্ন আন্দোলনে হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচারের দাবি তুলেছেন সকলেই। প্রায় সবাই সাম্য হত্যাকাণ্ডের তদন্তে পুলিশের ‘অবহেলার’ সমালোচনা করেন। পাশাপাশি দ্রুত বিচারের দাবি ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবি উপস্থাপন করেন।

শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সমাবেশে উপাচার্য

রোববার সকাল ১১ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে জড়ো হন সাম্যের ইনস্টিটিউটের শিক্ষক ও সহপাঠীরা। সেখানে উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান এবং প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ সংহতি জানিয়ে অংশ নেন।

সেখানে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, ‘জাতীয় স্বার্থে পুলিশের সঙ্গে মিলেই আমাদের সাম্যের মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করতে হবে। আমরা পুলিশকে সহযোগিতা করছিল। আমাদের কাছে থাকা সিসিটিভি ফুটেজ দিয়েছি। এছাড়া একটি স্বাধীন কমিটি এই বিষয়ে কাজ করছে। আমরা চাই, রাজনৈতিক দলাদলির ঊর্ধ্বে উঠে সাম্য হত্যার সুষ্ঠু বিচার হোক।’

পরে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে শাহবাগ থানার সামনে অবস্থান। এর আগে শুক্রবার (১৬ মে) বেলা ১২ টার দিকে সাম্যের হত্যাকারীদের ধরতে পুলিশকে ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেন শিক্ষার্থীরা। আজ তারা এর অগ্রগতি জানতে থানার সামনে অবস্থান নেন এবং পরে ফিরে আসেন।

বিজ্ঞাপন

৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম সাদা দলের

এদিন বেলা সাড়ে ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার সামনে মানবন্ধন করেন বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল। তারা সাম্য হত্যার প্রকৃত অপরাধীদের ধরতে ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেন। সাদা দলের আহবায়ক মোর্শেদ হাসান খান বলেন, ‘৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রকৃত হত্যাকারীকে ধরা না হলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে যাব। আমরা কারও ব্যক্তিস্বার্থে কাজ করব না।’

তিনি বলেন, ‘সাম্য হত্যার মোটিভকে অন্যদিকে ডাইভার্ট করতে চাচ্ছে একটা গ্রুপ। আগে সাম্য হত্যার খুনিদের বিচার হবে। আমি প্রশাসনকে অনুরোধ করব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক হত্যার ঘটনা ঘটেছে। আপনরা সাম্য হত্যার বিচার থেকে শুরু করুন। সাম্যকে হত্যা করা হয়েছে পাঁচদিন পূর্ণ হলো। এই পাঁচদিনে আমরা সো কল্ড আইওয়াশ এরেস্ট দেখেছি, আমরা এটা মানতে রাজি না। প্রকৃত হত্যাকারীকে ধরতে হবে।’

সাদা দলের সদস্যসচিব অধ্যাপক মহিউদ্দীনের সঞ্চালনায় মানবন্ধনে সাদা দলের সাবেক আহ্বায়ক অধ্যাপক লুৎফর রহমান, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ নাজমুল হোসাইন বক্তব্য দেন। এ সময় সাদা দলের যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আব্দুস সালাম ও অধ্যাপক ড. মো. আবুল কালাম সরকারসহ সাদা দলের শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।

ঢাবি ছাত্রদলের কালো পতাকা মিছিল

এদিন দুপুর দেড়টায় সাম্য হত্যার বিচার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং প্রক্টরের পদত্যাগের দাবিতে কালো পতাকা মিছিল করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল। মিছিলটি রাজু ভাস্কর্য থেকে উপাচার্যের বাসভবন হয়ে অপরাজেয় বাংলায় এসে শেষ হয়।

এ সময় দেওয়া বক্তৃতায় ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখার সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খানকে ‘ফাদার অব মবোক্রেসি’ আখ্যা দেন। তিনি বলেন, ‘৫ আগস্টের পর ছাত্র রাজনীতি চায়নি, সাধারণ শিক্ষার্থী এমন কিছু শিক্ষার্থী নামধারী গুপ্ত সংগঠনের কর্মীরা মবোক্রেসি করছে। আমরা জেনেছি, উপাচার্যের সাহায্যে এই মব হচ্ছে। আজ থেকে উপাচার্যকে মাননীয় বলা বাদ দিয়ে ফাদার অব মবোক্রেসি আখ্যা দিলাম।’

পরে বিকেল তিনটায় সাম্যের হত্যাকাণ্ডের বিচার এবং নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে শাহবাগ মোড়ে জড়ো হন ছাত্রদলের কেন্দ্র, ঢাকা মহানগরসহ বিভিন্ন ইউনিটের নেতারা। পরে বিকেল পৌনে চারটা নাগাদ তারা শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। এ সময় ছাত্রদলের নেতারা সাম্যের হত্যার বিচার চেয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন। প্রায় পৌনে দুই ঘণ্টা অবরোধ শেষে দাবি আদায়ে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়ে শাহবাগ ছাড়েন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা।

‘প্রকৃত হত্যাকারীদের ধরলে পুলিশকে পুরস্কার পাঁচ লাখ’

রোববার শাহবাগে এসে সাম্যর প্রকৃত হত্যাকারীদের ধরতে পারলে পুলিশকে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তার বড় ভাই শরিফুল আলম সৈকত। হত্যাকাণ্ডে জড়িত দু’জনকে গ্রেফতারের ঘটনায় সরকারের তরফ থেকে পুলিশকে এক লাখ টাকা পুরস্কার দেওয়ার ঘটনা টেনে তিনি এই কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘ঘটনার সময় তাৎক্ষণিকভাবে সাধারণ জনতা দু’জনকে আটক করে পুলিশে দিয়েছে। এর চার ঘণ্টা পর কেন এই দু’জনকে হাসপাতাল থেকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে? প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে সাধারণ জনগণ তাদের ধরে নিয়ে গিয়েছিল।’

মামলা গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তরের আশ্বাস

এদিন বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে মামলা ডিবির কাছে হস্তান্তরের আশ্বাস দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

সাক্ষাৎ শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক অধ্যাপক হোসনে আরা বেগম বলেন, ‘আমরা সাম্য হত্যার বিচারের বিষয় নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে এসেছি। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আমাদের কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন। নোট নিয়েছেন। উনি বলেছেন, চেষ্টা করছেন, ফারদার যাতে এটা ফ্যাসিলেটেট হয় এবং এটা এগিয়ে নিয়ে যাবেন।’

মামলাটি ডিবির কাছে হস্তান্তর ও আইন মন্ত্রণালয় থেকে বিশেষ ট্রাইবুন্যালে বিচারের ব্যবস্থার আশ্বাস পাওয়ার বিষয়ে বৈঠকে উপস্থিত সাম্যের বন্ধু নাহিন বলেন, ‘আমরা কিছুটা আশ্বস্ত হয়েছি, পুরোপুরি নয়। আমরা তখনই আশ্বস্ত হব, যখন এই হত্যার মূল হোতাদের থানায় ও বিচারের আওতায় নিয়া আসা হবে।’

সারাবাংলা/কেকে/পিটিএম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিনভর উত্তাল সাম্য হত্যা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর