রংপুর: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর জেলা কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের বিরুদ্ধে অনৈতিক সুবিধা আদায় ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে এক সদস্যের পদত্যাগ করেছেন মাত্র তিন দিন হলো। সেই ঘটনার পর এবার জেলা ও মহানগর কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ শীর্ষ একাধিক নেতার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ১৬ নেতা পদত্যাগ করেছেন।
রোববার (১৮ মে) রাত সাড়ে ৯টায় রংপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি চত্বরে সংবাদ সম্মেলন করে পদত্যাগের ঘোষণা দেন তারা। পদত্যাগকারীদের অভিযোগ, কমিটির কয়েকজন শীর্ষ নেতা সংগঠনের নাম ব্যবহার করে অনিয়ম-দুর্নীতি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তারা সংগঠনের সম্মান ক্ষুণ্ন করেছেন।
লিখিত পদত্যাগপত্রে তারা লিখেন, ‘রংপুর জেলা কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবসহ কিছু নেতার বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ এবং তার সপক্ষে পাওয়া প্রমাণ আমাদের আন্দোলনের মূল চেতনা ও আদর্শের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। এই গুটিকয়েক নেতার অপকর্মের দায় আমরা যারা নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে গেছি, তাদের ওপরও বর্তায়— যা অত্যন্ত লজ্জা ও অপমানজনক।’
পদত্যাগকারীরা হলেন মহানগর কমিটির যুগ্ম সদস্যসচিব সিয়াম আহসান আয়ান, সংগঠক আদনান সামির, মাহদী হাসান অনিক, রাতুল, এনায়েত রাব্বি, সদস্য আরাফাত সানি আপন, আল শামস সিয়াম, আল আমিন, সীমান্ত হোসেন, মোজাহিদ, আল তানজীল আহসান ও জেলা কমিটির সদস্য মুবতাসিম ফুয়াদ সাদিদ, জুনাইদ ইসলাম সাদিদ, সৃজন সাহ, মাহতাব হোসেন আবির ও সাওম মাহমুদ সিরাজ।
এ সময় মহানগর কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আয়ান হাসান অভিযোগ করেন বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ আমাদের ওপর আস্থা রেখেছিল, কিন্তু আমরা সেই বিশ্বাস রাখতে পারিনি। মহানগর ও জেলা কমিটির নেতারা টেন্ডার-বাণিজ্য, জমির দালালি, মামলা-বাণিজ্য ও মেলায় জুয়ার আসর থেকে চাঁদা আদায়সহ নানা অপকর্ম করছে।’
জানতে চাইলে পদত্যাগকারী জেলা কমিটির সদস্য মাহতাব হোসেন আবির বলেন, ‘রংপুরের একটি বাণিজ্য মেলায় হাউজি জুয়ার আসর বসানো হয়। সেখান থেকে জেলা ও মহানগর কমিটি নেতারা ১৪ লাখ টাকা চাঁদা নেন। এ ছাড়া রংপুর সিটি করপোরেশনে ২৫ জনকে নিয়োগ দিয়ে লাখ লাখ টাকার নিয়োগ-বাণিজ্য করেছেন। এর আগে গত বছর বন্যার সময় বন্যার্তদের জন্য তোলা ত্রাণের ৮৭ হাজার টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ তোলেন তিনি।’
এর আগে ১৫ মে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর জেলা কমিটির আহ্বায়ক ইমরান আহমেদ ও সদস্যসচিব আশফাক আহমেদ জামিলের বিরুদ্ধে অনৈতিক সুবিধা আদায় ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে পদত্যাগ করেন সদস্য মাহমুদুর রহমান লিওন। অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা কমিটির আহ্বায়ক ইমরান আহমেদ বলেন, ‘সংবাদ সম্মেলন করে পুরো বিষয়টি স্পষ্ট করা হবে।’ তার দাবি, সংগঠন নিয়ে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
আর মহানগর কমিটির আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতি সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘কেউ যদি এ ধরনের কোনো অভিযোগ করে, তাহলে প্রমাণ হাজির করুক। অবশ্যই কারও না কারও স্বার্থে আঘাত লেগেছে— এ জন্য এমনটা হতে পারে।’
এর আগে গত বছরের ২৪ নভেম্বর ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতিকে আহ্বায়ক ও রহমত আলীকে সদস্যসচিব করে ১১২ সদস্যের মহানগর কমিটি এবং ইমরান আহমেদকে আহ্বায়ক ও ডা. আশফাক আহমেদ জামিলকে সদস্য সচিব করে ১৫৫ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।